শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

হাওর কর্মকর্তাদের প্রমোদ ভ্রমণ

নব্য নিরোদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিন

রোম যখন পুড়ছিল তখনো নাকি সম্রাট নিরো মনের সুখে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। বলা হয়, নিরোর মতো মানুষেরা অমর এবং অক্ষয়। যুগে যুগে তারা আবির্ভূত হয় নানা চেহারায়। বাংলাদেশের হাওর এলাকা যখন ডুবছে, যখন লাখ লাখ মানুষ সর্বস্ব হারানোর কান্নায় ভেঙে পড়ছে তখন হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বিভাগ ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক পাল কর্মকর্তার নায়াগ্রা জলপ্রপাত দর্শনে কানাডা ভ্রমণের ঘটনায় মনেই করা যেতে পারে নিরোদের ক্ষয় নেই। মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে হাওর উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যখন তাদের পাশে থাকার কথা, তখন তিন শীর্ষ কর্মকর্তার দলবেঁধে প্রকল্পের নামে দৃশ্যত প্রমোদ ভ্রমণ অগ্নিকাণ্ডে রোম নগরী ভস্মীভূত হওয়ার সময় মনের সুখে নিরোর বাঁশি বাজানোর চেয়ে নির্মম প্রহসন কিনা প্রশ্ন উঠেছে। এ প্রহসনে যোগ দিয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আরও পাঁচ কর্মকর্তা। হাওরের অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির জন্য এ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়ের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। প্রতিবছর হাওর এলাকার বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের জন্য শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও সে টাকা যথাযথভাবে ব্যয় না করে চিহ্নিত ঠিকাদার, অসৎ জনপ্রতিনিধি এবং পানি উন্নয়ন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে লুটপাট হয়। ঠিকমতো বাঁধ নির্মাণ ও বাঁধ মেরামত না হওয়ায় বরাদ্দকৃত টাকা ফসল রক্ষা কিংবা কৃষকের উপকারে খুব একটা কাজে লাগে না। এ দুর্নীতির বিষয়টি সবার জানা থাকলেও তা বন্ধে নেওয়া হয় না কোনো উদ্যোগ। কারণ দুর্নীতির ভাগবাটোয়ারা নাকি শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পকেটেও যায়। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সম্পর্কে তদন্ত করলে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসতে পারে এমন কথাও বলেন অনেকে। হাওর এলাকার এক সাবেক সংসদ সদস্য হাওর উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ও অন্য কর্তাব্যক্তিদের জনগণের টাকায় বিদেশ সফরকে প্লেজার ট্রিপ বলে অভিহিত করেছেন।  হাওরের বদলে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে গিয়ে তারা পিকনিক ও আনন্দ করা সত্ত্বেও সরকার কেন নিশ্চুপ সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। আমরা আশা করব হাওর উন্নয়ন বোর্ড এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নায়াগ্রা ভ্রমণকে সরকার গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে। মানুষের দুর্দশা নিয়ে যারা তামাশা করেন তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রাখা উচিত কিনা যথাযথভাবে ভেবে দেখবেন।

সর্বশেষ খবর