শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

আল্লাহর দয়া ও প্রেম থেকে নিরাশ হতে নেই

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

আল্লাহর দয়া ও প্রেম থেকে নিরাশ হতে নেই

কমবেশি সবার জীবনেই গুনাহ থাকে। গুনাহর মাত্রা যার জীবনে যত বেশি আল্লাহর ভয়ও যেন তার অন্তরে তত কমে যায়। সেভাবে আমার মতো পাপীর জন্য আল্লাহর দরবারে বুঝি কোনো ক্ষমা নেই। বিষয়টি বোঝানোর জন্য রসুল (সা.) বনি ইসরাইলের এক ব্যক্তির গুনাহর ঘটনা বলছেন। সেই ব্যক্তি ৯৯ জন মানুষ হত্যা করার পর আত্মায় পাপ বোধ নাড়া দিয়ে ওঠে। সে তখন এক আলেমের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, আমি ৯৯ জন মানুষ হত্যা করেছি। আমি কি আমার পাপের ক্ষমা পাব? আলেম তখন বললেন, না। এত জঘন্য পাপীর কোনো ক্ষমা নেই। ওই ব্যক্তি প্রচণ্ড ক্ষোভ ও হাতাশায় ওই আলেমকেও হত্যা করে ফেলল। এবার সে হয়ে গেল শত মানুষ হত্যাকারী। তার ভিতরের ছটফটানি আরও বেড়ে গেল। হায়! আমি যদি ক্ষমা না পাই তবে আখেরাতে কী উপায় হবে? এবার চলে গেলেন আরেক দরবেশের কাছে। বললেন, আমি একশ মানুষ হত্যা করেছি। আমাকে কী আল্লাহতায়ালা কখনো ক্ষমা করবেন? দরবেশ হেসে বললেন, বৎস! তুমি যত বড় পাপই কর না কেন। অনুতপ্ত হৃদয় নিয়ে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তোমাকে মাফ করে দেবেন। এ ঘটনার শত শত বছর পর কোরআন ওই নাম না জানা দরবেশের কথারই প্রতিধ্বনি করেছে। আল্লাহ বলছেন, ‘কুল ইয়া ইবাদিয়াল্লাজিনা আশরাফু আলা আনফুসিহিম। লা তাকনাতু মির রাহমাতিল্লাহ। হে আমার প্রিয় বান্দা! তোমরা যারা নফসের গোলামী করে নিজেদের জীবন গুনাহে পূর্ণ করে ফেলেছ, আমার দয়া ও প্রেম থেকে তোমরা নিরাশ হইও না। নিশ্চয়ই! আমি আল্লাহ ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু্।’ (সূরা জুমার : ৫৩)। 

হাদিসে কুদসিতেও আল্লাহ বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি আমাকে ডাকনি। আমার কাছে ক্ষমাও প্রার্থনা করনি। তারপরও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আর এ জন্য আমি কারও পরওয়া করিনি। শোন হে আদম সন্তান! তোমার পাপ যদি মহাশূন্যের চেয়েও বেশি হয়, আর নিজের ভুল বুঝতে পেরে যদি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। তুমি যদি জমিন ভরা পাপ নিয়ে আমার কাছে হাজির হও, আর ক্ষমা প্রার্থনা কর, তারপরও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। (তিরমিজি)। এক হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘গুনাহ থেকে ফিরে আসা ব্যক্তি এমন যেন তার কোনো গুনাহ নেই।’ (ইবনে মাজাহ)।

হে মুসলমান ভাই! ৬০-৭০ বছরের জীবনে আল্লাহর দেখানো পথে চলতে পারেননি। পাপের পথে চলে সুন্দর জীবনটাকে শেষ করে ফেলেছেন। ভাবছেন, এখন কী কোনো সুযোগ আছে আর? এত এত পাপ কী আল্লাহ মাফ করবেন? আপনার জন্যই আল্লাহতায়ালা বিশেষভাবে বলেছেন, ‘সারিউ ইলা মাগফিরাতিমমিনাল জান্নাহ। হে বান্দা! আমার ক্ষমা ও সুখময় জীবন জান্নাতের দিকে দৌড়ে আস। আমাদের প্রভু ক্ষমা করতে ভালোবাসেন।’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম রাজী (র.) লেখেন, ‘দুনিয়ার মানুষের নিয়ম হলো, পাওনাদার মহাজনকে দেখামাত্রই পালিয়ে বেড়ানো। আর আমাদের মহাজন, গুনাহ করতে করতে যার কাছে আমরা ঋণী, তিনি বলছেন, বান্দা রে! গুনাহর ঋণ কাঁধে নিয়ে পালানোর দরকার নেই। আমার কাছে আস। দৌড়ে আস। আমি তোমাকে গুনাহমুক্ত করে দেব। (তাফসিরে কাবির)। 

হে যুবক ভাই! হে বৃদ্ধ বাবা! আপনি যদি বিগত জীবনের গুনাহ থেকে ফিরে আসেন, তবে আল্লাহতায়ালা আপনাকে একটি ‘সুবর্ণ সুযোগ’ দেওয়ার ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘যে তওবা করে পাপ থেকে আমার পথে ফিরে আসবে এবং ভালো কাজের চর্চা করতে থাকবে, তার পেছনের জীবনের গুনাহগুলো আমি নেক দিয়ে পরিবর্তন করে দেব। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়াময়।’ (সূরা ফোরকান : ৭০)। চিন্তা করে দেখুন! আল্লাহতায়ালা তাঁর গুনাহগার বান্দার প্রতি কত দয়ালু। পেছনের জীবনের গুনাহ তো মাফ করে দেবেনই, আবার সেসব গুনাহকে নেকেও পরিবর্তন করে দেওয়ার ওয়াদা দিচ্ছেন। এটা সৃষ্টির প্রতি স্রষ্টার ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত ছাড়া আর কিছু নয়। এক হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, এক মা তার সন্তানকে যতটুকু ভালোবাসে তার চেয়ে শত গুণ বেশি আল্লাহপাক তাঁর বান্দাকে ভালোবাসেন। এত ভালোবাসার বান্দা যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে ভুল পথ থেকে ফিরে আসে তখন আল্লাহর চেয়ে বেশি আর কে খুশি হবে বলুন। তাই আসুন!  ভুলের জীবন থেকে আমরা আল্লাহর রহমতের কোলে ফিরে যাই। তওবার রঙে জীবনকে রাঙিয়ে জান্নাত উপযোগী মানুষ হই। হে আল্লাহ আমাদের জন্য জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করুন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর