শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রত্যেক প্রাণীকেই মরণের স্বাদ গ্রহণ করতে হবে

মাও. কারী আবদুস সোবহান বিক্রমপুরী

প্রত্যেক প্রাণীকেই মরণের স্বাদ গ্রহণ করতে হবে

মানুষসহ প্রতিটি সৃষ্টির ব্যাপারে আল্লাহতায়ালার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো— জন্ম নিলেই মরতে হবে। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, প্রত্যেক প্রাণীকেই মরণের স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত :  ১৮৫।) এ মরণ হঠাৎ করেই চলে আসে না বা সংঘটিত হয় না। বরং আল্লাহতায়ালার নির্ধারিত সময়েই আসে। আল্লাহ বলেন, প্রত্যেক বিষয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ রয়েছে। (সূরা রাদ, আয়াত ৩৮।) আমাদের জীবন-মরণসহ প্রতিটি বিষয়ই সেই নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যেই সংঘটিত হচ্ছে এবং হবে। নির্ধারিত সময়ের এক মুহূর্ত আগেও হবে না, এক মুহূর্ত পরেও হবে না। আল্লাহ বলেন, প্রত্যেক উম্মতের জন্যই একটি নির্ধারিত সময় রয়েছে, যখন তাদের সে সময় এসে যাবে তখন এক মুহূর্ত আগেও করা হবে না, এক মূহূর্ত পরেও হবে না। (সূরা আ’রাফ, আয়াত ৩৪।)

মৃত্যু এক অবশ্যম্ভাবী বিষয়। ‘মৃত্যু নিশ্চিত’— এ কথা জেনেও যে ব্যক্তি তাকে ভুলে যায়, সে অসুস্থ আত্মারই পরিচয় দেয়। কোনো মুসলমান যেন মৃত্যুকে ভুলে না থাকে তাই রসুল (সা.) মরণকে স্মরণের উপদেশ দিতেন বারবার। তিনি (সা.) সাহাবিদের প্রায়ই বলতেন, সেই মৃত্যুকে স্মরণ কর, যা তোমাদের হাসি আনন্দকে মলিন করে দেবে। (ইবনে আবিদ দুনয়া।) রসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল সবচেয়ে বুদ্ধিমান কে? রসুল (সা.) বললেন, যে বেশি করে মরণকে স্মরণ করে এবং মৃত্যুপরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। (ইবনে মাজাহ।) মরণকে স্মরণের তাত্পর্য উল্লেখ করে রসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি দৈনিক ২০ বার মৃত্যুকে স্মরণ করবে এবং তার জন্য প্রস্তুতি নেবে আল্লাহতায়ালা তাকে শহীদের মর্যাদা দান করবেন। (তিবরানি।)

মরণের স্মরণ ভুলে যাওয়ার সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো— ব্যক্তি ক্রমান্বয়ে আখেরাত ভুলে দুনিয়ার চাকচিক্যময় জীবনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। তখন তার কাছে দুনিয়া এবং দুনিয়ার নিকৃষ্ট বস্তুসমূহ প্রিয় হতে থাকে। আর আখেরাত এবং আখেরাত-সংশ্লিষ্ট বিষয় তার কাছে অপ্রিয় লাগে। মৃত্যুভোলা মানুষকে আত্মভোলা মানুষের সঙ্গে তুলনা করা যায়। আত্মভোলা মানুষ যেমন যা খুশি তাই করতে পারে, কোনো বাছ-বিচার কিংবা হিসাব-নিকাশ করে না, তেমনি মৃত্যুভোলা মানুষও আখেরাত এবং আল্লাহর বিধান ভুলে যেমন খুশি তেমন জীবনযাপন করে। এভাবেই একদিন মৃত্যু তার কাছে হাজির হয়। তখন তার আফসোসের আর সীমা থাকে না। আল্লাহ বলেন, যখন তাদের কারও কাছে মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন সে বলে, হে আল্লাহ!  আমাকে আবার দুনিয়ায় পাঠান, যাতে সেসব সৎ কাজ করে আসতে পারি, যা আগে করিনি। (সূরা মুমিনুন, আয়াত ৯৯।)

লেখক : খতিব, বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) জামে মসজিদ, পোস্তগোলা বাসস্ট্যান্ড, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর