সোমবার, ২৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

সড়কে মৃত্যুর হাতছানি

বেপরোয়া মনোভাবে লাগাম পরাতে হবে

সিয়াম সাধনার প্রস্তুতি নিচ্ছিল যখন বিশ্বাসী মানুষ সে মহেন্দ্র ক্ষণে মাহে রমজানের একদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় সারা দেশে অন্তত ২১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। একই দিন সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন সহপাঠীর মৃত্যুর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি হিসাবে প্রতিবছর দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় আড়াই হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বাংলাদেশে বছরে ২১ হাজার মানুষ প্রাণ হারায় সড়ক দুর্ঘটনায়। আহতদের সংখ্যা নিহতদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। যাদের একাংশকে সারা জীবন পঙ্গুত্বের অভিশাপে ভুগতে হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় জাতিকে প্রতিবছর গড়ে যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তার পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ৫৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর প্রবণতা জড়িত। চালকদের বেপরোয়া মনোভাবে ঘটে ৩৭ শতাংশ দুর্ঘটনা। সোজা কথায় ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য প্রত্যক্ষভাবে চালকরাই জড়িত। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ২০১৫ সালের অক্টোবরে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে বাসের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে। অদক্ষ চালকদের দ্বারা যানবাহন চালানোর কারণে যে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে তা একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। বিআরটিএ সারা দেশে ১০২টি চালক প্রশিক্ষণ স্কুলের নিবন্ধন দিলেও সেগুলোর বেশির ভাগেরই অস্তিত্ব নেই। লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের বদলে উেকাচের কদর বেশি হওয়ায় প্রশিক্ষণের বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে। ১৯৯০ সালের পর ১ লাখ ৯০ হাজার পেশাদার চালককে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে শ্রমিক ইউনিয়নের তালিকা ধরে। পেশাদার চালকদের দক্ষতা সম্পর্কে প্রশ্ন না তুলেও বলা যায় এভাবে লাইসেন্স দান কোনোভাবেই বাঞ্ছনীয় নয়। দুর্ঘটনা কমাতে হলে সড়ক চলাচলের  ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার বিষয়টিও জরুরি। এ জন্য দরকার নাগরিক সচেতনতাও। চালকদের বেপরোয়া মনোভাবে লাগাম পরাতে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পার পাওয়ার যে অপঐতিহ্য রয়েছে তার অবসান ঘটাতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর