সোমবার, ২৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

ধর্ষকরা পার পেয়ে যাচ্ছে

আইনের ফাঁকফোকর বন্ধের উদ্যোগ নিন

ধর্ষণ একটি ঘৃণ্য অপরাধ। অথচ বাংলাদেশে ধর্ষণের বিচারে কারও সাজা হওয়া একটি বিরল ঘটনা। দেশে ধর্ষণের যত ঘটনা ঘটে তার বড় জোর পাঁচ শতাংশ আইন আদালত পর্যন্ত পৌঁছে। সমাজে মানসম্মান হারানোর ভয়ে সিংহভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষণের ঘটনা গোপন রাখা হয়। ধর্ষণের যে গুটিকয়েক মামলা আদালত পর্যন্ত যায় তার পরিণামও খুব সুখকর হয় না। প্রতিবছর ধর্ষণের যে সব মামলা হয় তার মাত্র চার শতাংশের নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়। সে নিষ্পত্তিও ধর্ষিতার পক্ষে যায় না বললেই চলে। প্রতি এক হাজার মামলার বিচারে মাত্র চার ধর্ষকের সাজা হয়। বলা যায়, দৈহিকভাবে ধর্ষণের শিকার কোনো নারী প্রতিকারের জন্য মামলা করতে গেলে ঘাটে ঘাটে তাকে মানসিক ধর্ষণের শিকার হতে হয়। পুরুষ শাসিত সমাজ এবং দেশের প্রচলিত আইন এতটাই অনুদার যে মামলা দায়ের থেকে শুরু করে প্রতিটি জায়গায় একজন নারীকেই প্রমাণ করতে হয় যে তিনি ধর্ষিত হয়েছেন। এটা প্রমাণ করতে গিয়ে ওই নারীকে যা যা করতে হয়, তা বারবার ‘ধর্ষিত’ হওয়ার শামিল। এ বৈরী পরিস্থিতিতে নারী বেশি দিন তার মনোবল ধরে রাখতে পারেন না। ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলার বিচারে এ অকাম্য অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। আইনে এমন বিধান থাকতে হবে যাতে আসামিই প্রমাণ করবে যে সে নির্দোষ। এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশের ছয় জেলায় ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে করা তিন হাজার ৬৭১টি মামলায় মাত্র চারজনের সাজা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মামলায় ত্রুটি-বিচ্যুতি, আইনের ফাঁকফোকর এবং অপব্যবহারের কারণে সঠিক বিচার পান না ভুক্তভোগীরা। পুলিশি তদন্তে ত্রুটি এবং অবহেলা ছাড়াও এর পেছনে কাজ করছে নেতিবাচক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচারের দীর্ঘসূত্রতা। বিচারহীনতার কারণে ধর্ষণের সংখ্যা আরও বাড়ছে। আইন অনুযায়ী ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ হওয়ার কথা। বিশেষ ক্ষেত্রে কারণ দেখিয়ে বাড়তি সময় নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে কোনো কোনো মামলা শেষ হতে বছরের পর বছর লেগে যায়। ধর্ষণের মামলায় ভিকটিমদের হয়রানি ও বিচারের নামে দীর্ঘসূত্রতার অবসান হওয়া উচিত। নিজেদের সভ্য সমাজের মানুষ বলে পরিচয় দিতে হলে অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর