বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

হজের মধ্যে রয়েছে অপরিসীম কল্যাণ

মুহম্মাদ জিয়াউদ্দিন

হজের মধ্যে রয়েছে অপরিসীম কল্যাণ। প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন, হজ ও ওমরাকারীগণ হচ্ছে আল্লাহতায়ালার মেহমান, তারা যদি আল্লাহর কাছে দোয়া করে, তবে তিনি তা কবুল করেন। আর যদি তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে তিনি তাদের ক্ষমা করে দেন। (ইবনে মাযাহ, মিশকাত)

হজের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর অসীম রহমতের অধিকারী হয়। হজের মধ্যে রয়েছে আল্লাহকে উপলব্ধি করার এক অলৌকিকতা। যে কারণে অন্য যে কোনো ইবাদতের চেয়ে হজের মহত্ত্ব অনেক বেশি। হজরত ইমাম আবু হানিফা হজের অন্তর্নিহিত কল্যাণ উপলব্ধি করে বলেছিলেন, হজই সর্বোত্তম ইবাদত।

হজ আদায় করা হয় কাবা শরিফকে তাওয়াফ করে। আল্লাহ কাবাঘর ফেরেশতাদের দ্বারা নির্মাণ করান। ফেরেশতারা সর্বপ্রথম হজ পালন করেন। তারপর বাবা আদম (আ.) এখানে ইবাদত করেন। আল্লাহর নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম খানে কাবা পুনর্নির্মাণ করেন। আল্লাহর নির্দেশে তিনি তাঁর মিল্লাতকে হজ পালনের আহ্বান জানান। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর উত্তর পুরুষ আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কাবাঘরকে পৌত্তলিকতা বাদীদের হাত থেকে মুক্ত করেন এবং হজ পালনে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নাতকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন।

হজ পালনের জন্য প্রয়োজন মূলধন। এ মূলধনের বিষয়ে সূরা বাকারার ১৯৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘হজের সফরের জন্য পাথেয় সঙ্গে নিয়ে যাবে। তাকওয়াই হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম পাথেয়।’ যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে তাদের জন্য হজ ফরজ। যাদের সে সঙ্গতি নেই আল্লাহ তাদের জন্য এটি ফরজ ইবাদত করেননি। তবে অর্থ থাকলেই হজ হবে না, তাকওয়া হলো এর আসল মূলধন। যার পরহেজগারি বা তাকওয়া নেই তার অর্থ থাকলেও যে হজের স্বার্থকতা নেই।

আর্থিক সঙ্গতি থাকার কথা বলা হলেও বান্দাকে হজ পালনে যেতে হবে সমর্পিতের বেশে। নিজের অহংবোধকে বিসর্জন দিয়ে। হজ পালনের জন্য এহরাম বাঁধতে হয়। এটি একটি বাধ্যবাধকতা। এই এহরাম হলো সেলাই না করা একটি লুঙ্গি, একটি চাদর এবং সেলাইবিহীন জুতা। হজ পালনকারী দুনিয়াদারির বিচারে যত ধনীই হোক, সব সৃষ্টি ও সৃষ্টজীবের মালিক আল্লাহর দরবারে তাকে হাজির হতে হবে ফকিরের বেশে, দীনহীন বেশে। তার পোশাকে কোনো আভিজাত্য থাকবে না। অহংবোধও বিসর্জন দিয়ে হাজির হতে হবে। এ সময় কোনো সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না, জাঁকজমক চলবে না। এমনকি বৈধ যৌনাচার অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর জৈবিক সম্পর্ক থেকেও দূরে থাকতে হবে। সব ধরনের অন্যায় কাজ থেকে দূরে থাকা শুধু নয়, মনকেও দূরে রাখতে হবে। আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করতে হবে। হজ পালন শেষ হওয়ার পর বাকি জীবনেও আল্লাহকে সর্বক্ষণ হাজির-নাজির জানতে হবে। এ সম্পর্কে সূরা আল বাকারার ২০০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘হজের অনুষ্ঠানগুলো যখন সম্পন্ন হয়ে যাবে, তখন তোমাদের পূর্ব পুরুষরা যেভাবে বাপ-দাদাকে স্মরণ করত ঠিক অনুরূপ বা তদপেক্ষা বেশি করে তোমরা আল্লাহকে স্মরণ করবে প্রকৃতপক্ষে হজ পালনের পরও আল্লাহকে সর্বক্ষণ স্মরণে রাখার মানসিকতা যদি হজ পালনের সময় অর্জন করা যায়, তবে সেখানেই রয়েছে প্রকৃত স্বার্থকতা।

হজ পালনের সময় মুমিনের হৃদয় সর্বদা মদিনার জিয়ারতে ব্যাকুল থাকে; যে পবিত্র ভূমি নবীকুল শিরমণি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে বুকে ধারণ করে চিরধন্য; যার কোলে ঘুমিয়ে আছেন ইসলামের অতন্ত্র প্রহরী হাজারো সাহাবায়ে কেরাম। যে বরকতময় নগরী সম্পর্কে প্রিয়নবী (সা.) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, হে আল্লাহ! আপনি মক্কায় যেভাবে বরকত দান করেছেন, তার দ্বিগুণ বরকত মদিনায় দান করুন। (সহিহ মুসলিম)

আল্লাহ পবিত্র হজ পালনের সফরে আল্লাহ আমাদের মদিনায় প্রিয় নবী (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারতের তৌফিক  দান করুন।

            লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর