বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

পাঠ্যপুস্তক বিড়ম্বনা

টিআইবির প্রতিবেদন আমলে আনুন

প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক দেওয়ার কর্মসূচি শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে প্রশংসা অর্জন করেছে। উন্নয়নশীল একটি দেশের কয়েক কোটি শিক্ষার্থীর কাছে বছরের প্রথম দিনেই পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এমন একটি মহতী পদক্ষেপ গ্রহণ করে সরকার প্রমাণ করেছে, আগামী প্রজন্মকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে তারা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। কিন্তু এই মহৎ কর্মসূচির বাস্তবায়নে অনিয়মের শেষ নেই এটি ছিল ব্যাপকভাবে উচ্চারিত এক অভিযোগ। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবেদনেও এ বিষয়টি উঠে এসেছে। টিআইবির ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন ও প্রকাশনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তকের পাণ্ডুলিপি তৈরি, ছাপা ও বিতরণ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। এনসিটিবির পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায়ও রয়েছে অস্বচ্ছতা। সঠিকভাবে পাণ্ডুলিপি লেখা পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে না, এতে দলীয়, রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত প্রভাব থাকছে। পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন ও পাঠ্যপুস্তক প্রকাশনা এবং সরবরাহের সর্বমোট ২০টি ধাপের মধ্যে ১৬টি ধাপে সুশাসনের ঘাটতি, রাজনৈতিক প্রভাব ও অনিয়ম-দুর্নীতি রয়েছে। এনসিটিবির কর্মকর্তারাও এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। প্রতিবেদনে পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রণয়নের প্রক্রিয়া চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, এসব কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের মতাদর্শীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক বিবেচনায় কাউকে কাউকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়। লেখা নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক মতাদর্শের প্রভাবও দেখা যায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের কোনো কোনো বিষয় এবং শব্দ পরিবর্তন করা হয়। শিক্ষাক্রম অনুসরণ না করেই অনেক সময় অনিয়মতান্ত্রিকভাবে লেখা পরিবর্তন করা হয়। পাঠ্যপুস্তকের পাণ্ডুলিপি তৈরি, ছাপা ও বিতরণ পর্যায়ের অস্বচ্ছতা পুরো প্রক্রিয়ার ওপর অপপ্রভাব বিস্তার করছে। বিশেষত মানহীন কাগজে পাঠ্যপুস্তক ছাপা, দেশে মানসম্মত ছাপাখানা থাকা সত্ত্বেও মানহীন ছাপাখানাকে কাজ দেওয়ার বিষয়টি একের পর এক সংকট সৃষ্টি করছে। সরকারের সুনামের স্বার্থেই এ বিষয়ে কড়া নজর দিতে হবে। টিআইবির প্রতিবেদনটি আমলে নিতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর