বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আজানের বাণী কী শিক্ষা দেয়

মুফতি আবু হোরাইরা রায়পুরী

আজানের বাণী কী শিক্ষা দেয়

আজান এমন একটি ইবাদত যার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। এটা মহান আল্লাহর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি প্রদানের অনন্য কর্ম। আজান ইসলামী সমাজের বাস্তবতা প্রকাশের বিশেষ দিক। আজানের বাণী দৈনিক পাঁচবার এ ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে যে, তিনি আল্লাহ তিনি লা-শারিক, তাঁর কোনো অংশীবাদী নেই, তাঁর সমতুল্য, সমকক্ষ কেউ কোথাও নেই। তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি ছাড়া কেউই প্রভু সার্বভৌমী নেই, তিনিই  সার্বভৌমত্বের একমাত্র মালিক, তিনিই একমাত্র মহান, সুউচ্চ-শ্রেষ্ঠতম। আজান হলো ইসলামের অন্যতম নিদর্শন, অপূর্ব ধ্বনি, শ্রুতিমধুর বাণী, ইসলামের প্রতীক যা আমাদের আহ্বান করে ঐক্যের পথে, সত্যের দিকে, যা আমাদের সুযোগ করে দেয় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার মাধ্যমে ঐক্যের শপথ গ্রহণ করতে। রসুল (সা.) বলেছেন, মুয়াজ্জিন কিয়ামতের দিন উঁচু গর্দানবিশিষ্ট হবে। তিনি আরও বলেছেন, মুয়াজ্জিনের আওয়াজের শেষ পর্যন্ত যত মানুষ, জিন ও বস্তু তার আওয়াজ শুনবে, তারা প্রত্যেকে কিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। (বুখারি)। রসুল (সা.) আরও বলেছেন, কিয়ামতের দিন তিন ধরনের লোক মিশকের টিলার ওপর থাকবে : ১. যে চাকর আল্লাহ ও তার মালিকের হক আদায় করে। ২. যে ব্যক্তি কোনো গোত্রের ইমাম হয় এবং তারা সবাই তার ওপর সন্তুষ্ট থাকে। ৩. যে ব্যক্তি প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজান দেয়। (তিরমিজি)। রসুল (সা.) আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি শুধু সওয়াবের আশায় সাত বছর আজান দেবে, তার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির সনদ লেখা হবে। (মিশকাত)। সর্বোপরি আজান আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক মহান আহ্বান, এতে জাদুর মতো প্রভাব রয়েছে। অনেক অমুসলিম আজানের ধ্বনিতে প্রভাবিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ত্ব অকপটে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। যেমন কোনো একটি গির্জার পাশে আজান হলে গির্জার পাদরি বলেন, এ আওয়াজে রয়েছে এক আশ্চর্য ধরনের বড়ত্ব-মহত্ত্ব ও আকর্ষণ। কানাডার পপস্টার ওরাং বাউল আজানের ধ্বনিতে প্রভাবিত হয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেন।

কবির ভাষায় : ‘কে ঐ শোনাল মোরে আজানের ধ্বনি, মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সুমধুর। আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী। কি মধুর আজানের ধ্বনি।’ বাংলার লাখো মসজিদের উঁচু মিনার থেকে মুয়াজ্জিনের সুললিত কণ্ঠে আজানের সুমধুর ধ্বনিতে যখন সোনার বাংলা মুখরিত হয়ে ওঠে, তখন এ দেশের মুসলমানদের অন্তরে অনাবিল শান্তি বয়ে যায়। বৃদ্ধি পায় তাদের অন্তরে আল্লাহর মহব্বত ও ভালোবাসা। ঘুমন্ত ইমান জেগে ওঠে। সাড়া দেয় আল্লাহর আহ্বানে। এ দেশের নদীর কল্লোলে, বৃষ্টির রিমঝিমে, সূর্যের সোনালি আভায়, বাতাসের হিল্লোলে, ভোরের স্নিগ্ধতায়, চাঁদের জ্যোত্স্নায়, ঝরনার নূপুরে আজানের সুর শুনতে পাওয়া যায়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, এ দেশের কিছু মুসলিম নামধারী নাস্তিক-মুরতাদ প্রাচুর্যের প্রলোভনে, পদমর্যাদার লিপ্সায় ইসলামের নির্মল সৌন্দর্য, গৌরবময় অধ্যায়, মহাসত্যকে বিসর্জন দিয়ে আজানকে হেয় পতিপন্ন করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আল্লাহতায়ালা যেন তাদের চক্রান্ত থেকে মুসলিম উম্মাহকে হেফাজত করেন। আমিন।

 

লেখক : পরিচালক, ইস্পাহানি দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসা আগানগর, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর