বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

অন্যায় হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ইসলাম

যুবায়ের আহমাদ

অন্যায় হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ইসলাম

গণমাধ্যমে প্রায়ই খবর আসে, কতিপয় বিপথগামী লোক ‘ইসলাম কায়েমের’ নামে নিরপরাধ মানুষের ওপর আক্রমণ করে। কূটনীতিপাড়া-খ্যাত গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গিদের হাতে ২০ জন দেশি-বিদেশির প্রাণ হারানোসহ বিভিন্ন সময়ে জঙ্গিদের কর্মকাণ্ডে দেশবাসী বেদনাহত হয় প্রায়ই। নিরপরাধ মানুষের ওপর হামলা করে তাদের হত্যা করে ‘ইসলাম প্রতিষ্ঠা’র চেষ্টা করছে অথচ নবীজি (সা.) বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে মানুষের জানমালকে আরাফার দিনের মতো পবিত্র বলে ঘোষণা করে তা হারাম করে দেন। নবীজি (সা.) ঘোষণা করেন, ‘হে লোক সকল! জেনে রেখো, তোমাদের পরস্পরের জানমাল, সম্মানের ওপর হস্তক্ষেপ হারাম করা হলো। আজকের এই পবিত্র দিন, এই পবিত্র মাস (জিলহজ) পবিত্র এই শহর (মক্কা) যেমন পবিত্র ও সম্মানিত, তেমনি এগুলোও (অন্যের জানমাল, সম্মান) সম্মানিত ও পবিত্র। এখানে উপস্থিত ব্যক্তি অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে আমার এ বাণী যেন পৌঁছে দেয়। (বোখারি : ১/৩৬)। যারা নিরপরাধ মানুষের ওপর আক্রমণ করছে তাদের ধারণা এভাবে মানুষ হত্যা করলে কোনো ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই সোজা জান্নাতে যাওয়া যাবে। কখনো না। কোরআনুল কারিম, হাদিসে নববী (সা.) যেই কাজটিকে চরমভাবে ঘৃণা করেছে সেই (মানুষ হত্যার) কাজটি করেই বেহেশতে যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না বরং জাহান্নামই হবে এই ঘাতকদের ঠিকানা। একজন মুমিনকে হত্যা করা তো দূরের কথা তাকে গালিগালাজ করাও নিষিদ্ধ। কোনো মুমিনকে হত্যা করা সরাসরি কুফরি। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকি আর তাকে হত্যা করা হলো কুফরি।’ (বুখারি : ১/১৯; মুসলিম : ১/১৮)। কোরআনুল কারিম ওই ঘাতকদের জন্য চিরস্থায়ী জাহান্নামের ঘোষণা করেছে। এরশাদ হচ্ছে, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করল, তার শাস্তি চিরস্থায়ী জাহান্নাম। তার প্রতি আল্লাহর গজব ও অভিশাপ। তিনি তার জন্য ভয়ঙ্কর শাস্তি প্রস্তুত করে রাখবেন।’ (সূরা নিসা : ৯৩)। যদি কোনো ব্যক্তি সত্যিকারেই মুমিন হয় তাহলে তার হাতে তো অন্য একজন মুমিন আক্রান্ত হতে পারে না। যদি তার দ্বারা অন্য কোনো মুমিন অনিরাপদ হয় আক্রান্ত হয় তাহলে বুঝতে হবে, সে যতই মুমিন দাবি করুক না কেন, প্রকৃতপক্ষে সে মুমিন নয়। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রকৃত মুমিন তো কেবল সেই, যার জবান ও হাতের অনিষ্ট থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ।’ (বোখারি : ১/১১; মুসলিম : ১/৬৫)। প্রশ্ন হলো তাহলে কী কোনো অমুসলিমকে হত্যা করা বৈধ? কখনো না। মুসলিম হোক কিংবা অমুসলিম, কোনো মানুষকে হত্যা করা ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় অন্যায় ও ঘৃণ্য কাজ। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা এবং অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা।’ (বোখারি : ৫/২২৩০)। মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে কোনো মানুষকে হত্যাই ইসলামের দৃষ্টিতে সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করার শামিল। এরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করল সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকেই হত্যা করল।’ (সূরা মায়েদা : ৩২)

লেখক : খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ, বোর্ড বাজার (আ. গণি রোড), গাজীপুর।

সর্বশেষ খবর