বাংলাদেশের নব্বই ভাগ মানুষই মুসলমান। মুসলমানরাই বাংলা সনের প্রবর্তক। সব ধর্মের মানুষের কাছে এ সন অনুসরণীয় হলেও সৌরবর্ষীয় বাংলা সন চন্দ্র আরবি হিজরি সনের উত্তরাধিকার। মোগল আমলে ফসলি সন হিসেবে বাংলা দিনপঞ্জি তৈরি করা হয় সৌরবর্ষকে সামনে রেখে। চন্দ্র-সূর্য সবকিছুই যেমন আল্লাহর সৃষ্টি তেমনি চান্দ্রবর্ষ বা সৌরবর্ষ— যেভাবেই সময়কে ভাগ করা হোক না কেন, সবকিছুর নিয়ন্তা মহান আল্লাহ। সূরা আম্বিয়ার ৩৩ নং আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘(আল্লাহ হচ্ছেন) তিনিই যিনি সৃষ্টি করেছেন রাত, দিন, চন্দ্র ও সূর্য। এদের প্রত্যেকেই পরিভ্রমণে নিয়োজিত রয়েছে নিজ নিজ কক্ষপথে, নিজস্ব গতিবেগসহকারে।’ এ বিষয়ে সূরা ইয়াসিনের ৩৬ নং আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘সূর্য কখনই চন্দ্রকে ধরতে পারবে না কিংবা রাত কখনো অতিক্রম করতে পারবে না দিনকে। প্রত্যেকেই পরিভ্রমণে নিয়োজিত নিজ নিজ কক্ষপথে, নিজস্ব গতিবেগসহকারে।’ আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে আল্লাহ তার খলিফার মর্যাদা দিয়েছেন। আল্লাহ তার হাবিবকে সৃষ্টি করেছেন মানুষের মধ্য থেকে। মানুষের উচিত আল্লাহ প্রদত্ত সময় অর্থাৎ দিন, রাত ও বছরকে তার নির্দেশিত পথে অতিবাহিত করা। এ বিষয়ে গাইডলাইন রয়েছে পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন সূরায়। সূরা ফাতেহায় সরল পথ পাওয়ার জন্য এবং বিপথগামীদের পথ থেকে রক্ষা পাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ সূরার ৫-৭ আয়াতে আছে, ‘তুমি আমাদের সরল পথ দেখাও, তাদের পথ যাদের তুমি অনুগ্রহ দান করেছ, তাদের পথ নয়— যারা ক্রোধ নিপতিত ও পথভ্রষ্ট।’

মানব জাতির সবারই আল্লাহর রহমত যে পথে সেই পথ অনুসরণ করা উচিত। দ্বিতীয় সূরা বাকারার তৃতীয় আয়াতে রয়েছে, ‘সৎ জীবিকা থেকে ব্যয় করার আদেশ সৃষ্টিকর্তার।’ এ ব্যাপারটি প্রত্যেক মানুষ মেনে চললে পৃথিবীতে একটি সুষম সমাজ গড়ে উঠবে। সম্পদ বণ্টনে ভারসাম্য হবে। অসৎ উপার্জন থেকে মানুষ বিরত থাকলে পৃথিবীতে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হবে। ৪২ নং আয়াতে রয়েছে, ‘মিথ্যার সঙ্গে সত্য না মিশিয়ে ফেলার আদেশ এবং জেনেশুনে সত্য না গোপন করার কথা।’ পবিত্র কোরআনের এ ঐশী শিক্ষার সফল বাস্তবায়ন ও চর্চা মানুষকে সঠিক পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করবে এমনটি কাঙ্ক্ষিত। ৬০ নং আয়াতেই রয়েছে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি না করার উপদেশ। আজকের এ সময়ে যে নির্দেশনার অনুসরণ আমাদের অবশ্য কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।

লেখক : ইসলামী গবেষক।