মঙ্গলবার, ১ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

মহান মে দিবস

শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক প্রত্যাশিত

পয়লা মে শ্রমজীবী জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার শপথ নেওয়ার দিন। আজ থেকে ১৩২ বছর আগে ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা বুকের রক্ত দিয়ে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। শ্রমিকদের রক্তঝরা আন্দোলনের মুখে মালিকপক্ষ ন্যায্য মজুরি ও দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের সীমা মেনে নিতে বাধ্য হয়। পয়লা মের পথ ধরে কালক্রমে দুনিয়াজুড়ে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার স্বীকৃত হয়। আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় শিল্প ক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিক দরকষাকষি বৈধতা পায়। মালিক ও শ্রমিকপক্ষের মধ্যে সমঝোতার সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টিতেও কালের বিবর্তনে অবদান রেখেছে মহান মে দিবসের চেতনা। ১৮৮৬ সালের রক্তক্ষরণের এই দিনটি শ্রমিক সংহতির দিন হিসেবেও পালিত হয়ে আসছে দুনিয়ার দেশে দেশে। ১৩২ বছর আগে শিকাগো শহরের শ্রমিক আন্দোলনে মালিকপক্ষের নৃশংসতার শিকার শ্রমিকরা প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করেন শ্রমজীবী মানুষের শৃঙ্খল ছাড়া হারানোর কিছু নেই। মহান মে দিবসের শিক্ষা শ্রমজীবীদের সামনে অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। এ পথ ধরে পরবর্তীতে সংঘটিত হয় রুশ বিপ্লব। চীন, ভিয়েতনাম, উত্তর কোরিয়া, পূর্ব ইউরোপ, কিউবাসহ বিভিন্ন দেশে শ্রমিক শ্রেণির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। মে দিবস বিশ্বজুড়ে সমাজবাদী চেতনারও বিকাশ ঘটায়। তবে গণতান্ত্রিক চেতনাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে শ্রমিক শ্রেণির একনায়কতন্ত্রের নামে নিষ্ঠুর ধরনের স্বৈরাচারী শাসনের ভ্রান্তি পরিণামে সমাজতান্ত্রিক ধারার পতনেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মে দিবসের ইতিহাস ধনবাদের সঙ্গে শ্রমিক শ্রেণির সংঘাত বলে বিবেচিত হলেও তা পরবর্তীতে পুঁজিবাদের মানবিক বিকাশেও অবদান রাখে। শ্রমিকদের ঠকিয়ে কিংবা তাদের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে পুঁজির সুষ্ঠু বিকাশ যে সম্ভব নয় এটি এখন ধনবাদীরাও স্বীকার করেন। নারীমুক্তি এবং ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের ক্ষেত্রেও মে দিবসের চেতনা ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে পুঁজির দ্রুত বিকাশ ঘটছে। গত দুই যুগে পোশাকশিল্পে স্পুটনিক গতিতে এগিয়েছে আমাদের দেশ। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে ৪০ লাখ শ্রমিকের ভাগ্য; যার অধিকাংশই নারী। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের আরেকটি খাত হলো প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স; যার সিংহভাগই বিদেশে শ্রম দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, দেশের অর্থনীতির বিকাশে যারা অনন্য অবদান রাখছেন তাদের মর্যাদা সমাজে প্রশ্নবিদ্ধ। দেশের অগ্রগতির স্বার্থে উত্পাদন ক্ষেত্রে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সুষ্ঠু সম্পর্কের বিকল্প নেই। এবারের মে দিবস সে সম্পর্ক স্থাপনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্বুদ্ধ করুক— এমনটিই কাম্য।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর