মঙ্গলবার, ১ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইসলামে শ্রমিকের অধিকার অলঙ্ঘনীয়

মুফতি তরিকুল ইসলাম আল আযহারী

ইসলামে শ্রমিকের অধিকার অলঙ্ঘনীয়

ইসলাম আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে শ্রমজীবীদের ন্যায্য অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। মে দিবসের ১৩০০ বছর আগে শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা তুলনাহীন। তিনি শ্রমিকের পাওনা দ্রুত পরিশোধ করার জন্য জোর তাগিদ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার আগেই তার পাওনা পরিশোধ কর।’ শ্রমিক, কর্মচারী, দিনমজুর যেই হোক তার থেকে শ্রম আদায়ের পর যথারীতি তার পাওনা পরিশোধ না করা মহাজুলুম। এ জুলুম এখন হামেশাই হচ্ছে। শ্রমিকের প্রতি জুলুমের বিচিত্র রূপ রয়েছে। যেমন : ১. শ্রমিক স্বীয় কাজের পক্ষে কোনো প্রমাণ পেশ করতে না পারায় তার পাওনা সম্পূর্ণ অস্বীকার করা। এ ক্ষেত্রে দুনিয়ায় তার হক মাঠে মারা গেলেও কিয়ামতে তা বৃথা যাবে না। কিয়ামতের দিন জালিমের পুণ্য থেকে মজলুমের পাওনার পরিমাণ পুণ্য প্রদান করা হবে। আর যদি তার পুণ্য শেষ হয়ে যায় তবে মজলুমের পাপ জালিমের ঘাড়ে চাপানো হবে। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ২. যে পরিমাণ অঙ্ক মজুরি দেওয়ার জন্য চুক্তি হয়েছে তার থেকে কম দেওয়া। এ বিষয়ের সমূহ ক্ষতি প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা নিম্নের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, ‘যারা (পাওনা) পরিমাণে কম দেয় তাদের জন্য দুর্ভোগ রয়েছে।’ সূরা মুতাফফিফিন : ১। অনেক নিয়োগকর্তা দেশ-বিদেশ থেকে নির্দিষ্ট বেতন বা মজুরির চুক্তিতে শ্রমিক নিয়োগ করেন। তারপর তারা যখন কাজে যোগদান করে তখন তিনি একতরফাভাবে চুক্তিপত্র পরিবর্তন করে বেতন বা মজুরির পরিমাণ কমিয়ে দেন। কিন্তু অনিচ্ছাসত্ত্বেও ওইসব শ্রমিক তখন কাজ করতে বাধ্য হয়। অনেক সময় শ্রমিকরা তাদের অধিকারের সপক্ষে প্রমাণ হাজির করতে পারে না। তাই তখন কেবল আল্লাহর কাছে অভিযোগ করা ছাড়া তাদের কোনো উপায় থাকে না। এ ক্ষেত্রে যদি নিয়োগকর্তা মুসলমান ও নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি কাফির হয় তবে বেতন অর্থাত্ মজুরি হ্রাসে ওই শ্রমিকের ইসলাম গ্রহণে বাধা সৃষ্টি হয়। ফলে কিয়ামত দিবসে ওই কাফিরের পাপ তাকে বহন করতে হবে। ৩. বেতন বা মজুরি বৃদ্ধি না করে কেবল কাজের পরিমাণ কিংবা সময় বৃদ্ধি করা। এতে শ্রমিককে তার অতিরিক্ত কাজের পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত করা হয়। ৪. বেতন বা মজুরি পরিশোধে গড়িমসি করা। অনেক চেষ্টা-তদবির-তাগাদা, অভিযোগ ও মামলা-মোকদ্দমার পর তবেই প্রাপ্য অর্থ আদায় করা সম্ভব হয়। অনেক সময় নিয়োগকারী শ্রমিককে ত্যক্ত-বিরক্ত করার উদ্দেশ্যে টালবাহানা করে, যেন সে পাওনা ছেড়ে দেয় এবং কোনো দাবি না তুলে চলে যায়। আবার কখনো তাদের টাকা খাটিয়ে মালিকের তহবিল বৃদ্ধি করার নিয়ত থাকে। আর অনেকে তা সুদি কারবারেও খাটায়। অথচ সেই শ্রমিক না নিজে খেতে পাচ্ছে, না নিজের পুত্র-পরিজনের জন্য কিছু পাঠাতে পারছে। অথচ তাদের মুখে দুই মুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার জন্যই সে দূর দেশে পড়ে আছে। এজন্যই এসব জালিমের জন্য এক কঠিন দিনের শাস্তি অপেক্ষা করছে। এ প্রসঙ্গে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি তিন শ্রেণির মানুষের বিরুদ্ধে বাদী হব। ১. যে ব্যক্তি আমার অনুগত হওয়ার পর বিশ্বাসঘাতকতা করে। ২. যে ব্যক্তি  স্বাধীন বা মুক্ত লোককে ধরে বিক্রি করে। ৩. যে ব্যক্তি কোনো মজুরকে নিয়োগের পর তার থেকে পুরো কাজ আদায় করেও তার পাওনা পরিশোধ করে না।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

www.muftitariqulislam.com

সর্বশেষ খবর