শুক্রবার, ২৫ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঋণখেলাপিদের কারসাজি

সরকারকে আসল জায়গায় হাত দিতে হবে

ঋণখেলাপিরা উচ্চ আদালতে রিট মামলার আশ্রয় নেওয়ায় আইনি লড়াইয়ের ঘোরপ্যাঁচে ৬২ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আটকে আছে। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হয়ে কোনো কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মূলধন সংকটেও পড়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের রিট মামলার কারণে যে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়া আটকে গেছে এর মধ্যে অর্থঋণ সংক্রান্ত রিট মামলার সংখ্যা ৩ হাজার ৫৬৭টি, অর্থের পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি টাকা। ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো সংক্রান্ত রিট মামলা ৫১১টি, জড়িত অর্থ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য ১ হাজার ৭৯০টি রিট মামলায় ১১ হাজার কোটি টাকা আটকে আছে। খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক পারফরমেন্স খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করার পর সেখানে রায় হওয়ার পরও অর্থ আদায় সম্ভব হয় না। উচ্চ আদালতে রিট মামলা করে স্থগিতাদেশের মাধ্যমে সেই অর্থ বছরের পর বছর আটকে রাখা হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতের অভিজ্ঞজনদের মতে, রিট মামলা এমন একটি অস্ত্র যার মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আটকে দেওয়া সম্ভব। জেনেশুনেই ঋণখেলাপিরা সে সুযোগ নিচ্ছেন। সামাজিক ও আর্থিকভাবে তারা প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় নানা কৌশলে মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তি বিলম্বিত করেন। এতে একদিন যেমন মামলাজট তৈরি হচ্ছে অন্যদিকে খেলাপি ঋণ যথাসময়ে আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। খেলাপি ঋণ স্ফীতির পেছনে ব্যাংক পরিচালক ও ঋণদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই বেশি দায়ী। ব্যাংকিং খাতকে তারা লুটেপুটে খাওয়ার ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন। ঋণদানের সময় গ্রাহকের যোগ্যতা বিবেচনার চেয়ে প্রদত্ত ঋণের কতভাগ নিজেদের পকেটে উেকাচ হিসেবে আসবে সেটিকেই গুরুত্ব দেন। ফলে ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে শত শত কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ হচ্ছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে দৃশ্যত ব্যাংকের কর্তাব্যক্তিদের কোনো মাথাব্যথাই দেখা যায় না। বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিংয়ের কারণে খেলাপি ঋণ আদায়ে মামলা করা হলেও সেখানেও থাকে শুভঙ্করের ফাঁকি। ফলে আদালতে রিট করে খেলাপি গ্রাহকরা নিম্ন আদালতের রায় স্থগিত করার সুযোগ পান। ব্যাংকিং খাতে সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে ঋণদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতা তথা আসল জায়গায় হাত দিতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর