রবিবার, ৮ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

নদ-নদীর বেহাল অবস্থা

খনন ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নিন

দেশের নদ-নদীগুলো ক্রমেই নাব্যতা হারাচ্ছে। পলি পড়ে ভরাট হয়ে হারাচ্ছে গভীরতা। চর পড়ে অনেক নদী যেমন সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে তেমন অনেক নদী হারাচ্ছে তাদের অস্তিত্ব। স্বাধীনতার পর গত পৌনে পাঁচ দশকে দেশের নদী পথের দৈর্ঘ্য এক-পঞ্চমাংশে নেমে এসেছে। একাত্তরের আগে দেশে নদী পথের দৈর্ঘ্য ছিল ২৪ হাজার ১০০ কিলোমিটার। এখন সে দৈর্ঘ্য পাঁচ হাজারেরও নিচে নেমে এসেছে। নদ-নদী খনন না করায় পলি পড়ে অস্তিত্ব হারাচ্ছে একের পর এক নদী। ভাটির দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলোতে প্রতি বছর ১ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ১২০ কোটি ঘনমিটার পলি প্রবাহিত হয়। এর বড় অংশই নদীর তলদেশে জমে নাব্যতা সংকট সৃষ্টি করছে। ৪৭ বছরে নদীগুলোতে পলি জমেছে প্রায় ১৭৮ কোটি টন। পলির কারণে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে প্রায় ৩০০ নদী। অধিক হারে পলি জমা, নদী সংরক্ষণে অবহেলা, অবকাঠামো নির্মাণ, খনন যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবলের অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নদ-নদী রক্ষায় পরিবেশ অধিদফতর, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বিআইডব্লিউটিএ, ডিসিসিসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা গত ১০ বছরে নদ-নদী অপদখলকারীদের উচ্ছেদে প্রায় ৪০ দফা অভিযান চালিয়েছে। উচ্ছেদ করা হয়েছে সাড়ে আট হাজারেরও বেশি অবৈধ স্থাপনা। তবে অভিযানের পর পরই নজরদারির অভাবে অপদখলকারীদের থাবা আবারও বিস্তৃত হয়েছে। ঢাকার চারপাশ ঘিরে থাকা বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যা দখল-দূষণে মৃতপ্রায়। নাব্যতা সংকটে বালু নদেও নৌযান চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। ৩৬ কিলোমিটার এই নদের ২২ কিলোমিটারই অবৈধ দখলে। নদটি ড্রেজিংও হয় না। তুরাগ নদ দখল ও দূষণে সরু খালে পরিণত হয়েছে। নদ-নদী খননে প্রায়ই কোটি কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হলেও তাতে জনগণের ট্যাক্সের টাকার অপচয় ঘটছে। ড্রেজিং করে নদীর গভীরতা বাড়ানোর বদলে কর্তাব্যক্তিদের পকেট পূর্তি আসল উদ্দেশ্য হয়ে ওঠায় প্রায় প্রতিটি প্রকল্প প্রহসনে পরিণত হয়। দেশের নদ-নদীর অস্তিত্ব রক্ষায় ব্যাপকভাবে ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নিতে হবে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকার অধিবাসীদের সম্পৃক্ত করতে হবে। ড্রেজিংয়ের নামে হরিলুট যাতে না হয় সে দিকে রাখতে হবে তীক্ষ নজর। নদী অপদখল এবং দূষণের বিরুদ্ধেও সরকারকে কঠোর হতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর