এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৯৮ জন হজে যাবেন। এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় অর্থাৎ হাবের সদস্য ৫২৮টি হজ এজেন্সির মাধ্যমে। বাকিরা সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন। এই বিশালসংখ্যক হজযাত্রীকে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের সব আইন-কানুন মেনে নির্দিষ্ট সময়ে গমন এবং মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা, জামারাহ, তাওয়াফ, সায়ি, মদিনায় গমন ইত্যাদি আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে সময়মতো স্বদেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। এর মধ্যে আহার, বাসস্থানসহ সম্ভাব্য সব স্বচ্ছন্দের ব্যবস্থা করা, হাজীদের মধ্যে ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন প্রকার পছন্দ, ইচ্ছা, চিন্তা ও রুচির সমন্বয় সাধন করে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালনা দুরূহ ব্যাপার। সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, আল্লাহর অশেষ রহমতে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করা সম্ভব হয়। হজের মতো একটি কষ্টসাধ্য ইবাদতকে প্রতিপালনের বিষয়ে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি হাজীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বিগত বছরগুলোয় দেখা গেছে, হজে যাওয়ার প্রক্রিয়া মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে সম্পন্ন করায় কেউ কেউ প্রতারিত বা বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। অনেক সময় মধ্যস্বত্বভোগীরা হজযাত্রীদের টাকা খরচ করে ফেলেন এবং এজেন্সিকে পরিশোধ করেন না। হজযাত্রীরা এজেন্সির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অথবা এজেন্সির অফিসে টাকা জমা দিয়ে মানি রসিদ সংগ্রহ করবেন। বাসস্থান ও অন্যান্য সুবিধার বিষয়ে অবগত হয়ে সরাসরি হজ এজেন্সির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবেন। বেসরকারি হজযাত্রীরা হাব কর্তৃক নির্ধারিত সর্বনিম্ন প্যাকেজ মূল্যের নিচে হজ গমনে কারও সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবেন না।
হজযাত্রীরা এয়ারলাইনসে টিকিটের বিষয়ে সরাসরি এজেন্ট থেকে নিশ্চিত হয়ে হজযাত্রার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হবেন। অনেক হজযাত্রী মধ্যস্বত্বভোগীর খপ্পরে পড়েন এবং তাদের প্ররোচনায় হজযাত্রার টিকিটের বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে আশকোনা হজ ক্যাম্পে চলে আসেন এবং অনেক বিড়ম্বনার মধ্যে পতিত হন। পাসপোর্ট, বিমান টিকিট, ভিসার কপি ও আইডি কার্ড ইত্যাদি হজযাত্রার আগে বুঝে নেবেন। এ বছর থেকে হজযাত্রীদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে। হজ একটি কষ্টসাধ্য ইবাদত। এর জন্য শারীরিক সক্ষমতা অত্যাবশ্যক। বিশেষত মিনা, আরাফাত, মুজদালিফায় অবস্থান ও যাতায়াতের বিষয়টি খুবই কষ্টসাধ্য বিধায় হজযাত্রীদের এ কষ্টের বিষয়ে আগে থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। ৮ জিলহজ জোহরের নামাজের আগে মিনার তাঁবুতে পৌঁছানোর বিধান রয়েছে। মক্কার হোটেল থেকে মিনায় নিয়ে যাওয়া এবং মিনায় রাত-যাপনের পর সেখান থেকে আরাফাতে পৌঁছানো। ৯ জিলহজ আরাফাতের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে মুজদালিফায় পৌঁছানো। মুজদালিফায় রাতযাপনের পরে মিনার তাঁবুতে নিয়ে আসাসহ সব যানবাহন নিশ্চিত করা, মিনা, আরাফাতে খাবার সরবরাহসহ এসব সেবা প্রদানের জন্য সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত মুয়াসসাসার অধীন মুয়াল্লিমদের দায়িত্ব। অর্থাৎ হজযাত্রীদের মক্কার হোটেল থেকে মিনায় নেওয়া, মিনা থেকে আরাফাতে নেওয়া, আরাফাত থেকে মুজদালিফায় নেওয়া এবং পুনরায় মিনার তাঁবুতে ফিরিয়ে আনা, জামারাহর আনুষ্ঠানিকতাসহ হজের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে মক্কার হোটেলে ফিরিয়ে আনা পর্যন্ত সব বাস সার্ভিস, খাবার, তাঁবু ইত্যাদি সৌদি আরবের মুয়াসসাসার অধীন মুয়াল্লিমদের দায়িত্ব। বাংলাদেশ সরকার, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, হাব বা হজ এজেন্সির এ বিষয়ে কিছুই করার থাকে না শুধু মুয়াসসাসার অধীন মুয়াল্লিমদের অবহিত বা যোগযোগ করা ছাড়া। মিনা, আরাফাত, মুজদালিফায় ভারী খাবার কম গ্রহণ ও প্রচুর পানি পান করা উচিত। এসব স্থানে টয়লেট ব্যবহারের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। বিশেষত ফজরের নামাজের আগে কমপক্ষে ৩০ মিনিট এবং অন্যান্য সময়ে কমপক্ষে ২০ মিনিট টয়লেট ব্যবহারের জন্য লাইনে অপেক্ষা করতে হয়।হজে গমনকারী অনেকে গাইডকে অনুসরণ না করায় মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা, হারাম শরিফ ও সংলগ্ন এলাকায় হারিয়ে যান। হজযাত্রীদের তার হজের আইডি কার্ড সব সময় গলায় ঝুলিয়ে রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো। বিশেষ করে মিনার তাঁবু নম্বর, সড়ক নম্বর, ব্লক নম্বর ও মুয়াল্লিম নম্বর সংরক্ষণ করুন। কেউ হারানো গেলে আতঙ্কিত না হয়ে হজ আইডি কার্ডটি নিকটস্থ কোনো স্বেচ্ছাসেবককে প্রদর্শন করলে তিনি তাকে মক্কার বাংলাদেশ হজ মিশনে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। মক্কার বাংলাদেশ হজ মিশনে হাব ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হেল্পডেস্ক আছে। সেখানে হাজীদের জন্য তাত্ক্ষণিক প্রয়োজনীয় আহার, পানীয়, সেবা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট এজেন্সির কাছে হারিয়ে যাওয়া হজযাত্রীকে দ্রুততম সময়ে পাঠানো হয়। অনেক সময় হজযাত্রীরা নিজের সুবিধামতো হজযাত্রার ও প্রত্যাবর্তনের তারিখ নির্ধারণের ইচ্ছা পোষণ করেন যা সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি করে। যেহেতু হজযাত্রা একটি গ্রুপভিত্তিক মুভমেন্ট এবং দুটি রাষ্ট্রের বহুবিধ নিয়ম-কানুন মেনে পালন করতে হয়, তাই নিজের ইচ্ছামাফিক তারিখ নির্ধারণ না করে গ্রুপের বেঁধে দেওয়া তারিখের সঙ্গে নিজে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। সব হজযাত্রী দুটি লাগেজে সর্বোচ্চ ২৩ কেজি করে ৪৬ কেজি ওজনের মালামাল বহন করতে পারবেন। এ ছাড়া ৭ কেজি ওজনের একটি হাতব্যাগ রাখতে পারবেন। লাগেজের ওজনের বেশি হলে হজযাত্রীদের এয়ারপোর্টে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। হজ একটি কষ্টসাধ্য ইবাদত। এর জন্য আর্থিক, শারীরিক সক্ষমতা ও ধৈর্যধারণ অত্যাবশ্যক। উপরোল্লিখিত সব বিষয়ে অবহিত হয়ে, হজের মাসয়ালা-মাসায়েল সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান আহরণ করে হজযাত্রার বিষয়টি নিশ্চিত করা উত্তম।
লেখক : মহাসচিব, হাব।