শুক্রবার, ২০ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

বায়তুল্লাহর মুসাফিরের জন্য

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

বায়তুল্লাহর মুসাফিরের জন্য

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ইসলাম পাঁচটি খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে। এগুলো হলো— কলমা, সালাত, জাকাত, সিয়াম ও হজ।’ কলমা হলো ইসলাম নামক শান্তিসংঘে প্রবেশের মূলমন্ত্র। এ বাক্যটি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেই ইসলামে প্রবেশ করতে হয়। ইসলামে প্রবেশের পরই ব্যক্তির ওপর নামাজ ফরজ হয়। রমজান মাস এলে রোজা ফরজ হয়। ব্যক্তি যদি সম্পদশালী হয় তাহলে তার ওপর হজ ও জাকাত ফরজ হবে। প্রিয় পাঠক! এখন চলছে হজের মৌসুম। ইসলামের প্রতিটি ইবাদত সময়ের সঙ্গে নির্দিষ্ট। নির্ধারিত সময়েই ফরজ ও ওয়াজিব ইবাদতগুলো সম্পন্ন করতে হয়। তেমনি হজেরও নির্দিষ্ট সময় আছে। ৯ থেকে ১৩ জিলহজের মধ্যে শরিয়ত নির্দেশিত কাজগুলো করার মাধ্যমেই হজ আদায় করতে হয়।

আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ থেকে একে একে হজ ফ্লাইট উড়াল দিচ্ছে কালো ঘর আর সবুজ গম্বুজের উদ্দেশে। বায়তুল্লাহর মুসাফিরদের উদ্দেশে আল্লাহ একটি নসিহত করেছেন আল কোরআনে। সে কথাটি স্মরণ করিয়ে দিতেই আজকের এই লেখা।

হজের নির্দেশ ও বিধান বুঝিয়ে দেওয়ার পর আল্লাহতায়ালা বায়তুল্লাহর মুসাফিরদের প্রেমভরা কণ্ঠে ডেকে বলেন,  ‘তোমরা সফরে কিছু পাথেয় নিও। পাথেয় ছাড়া তো চলা মুশকিল। তবে জেনে রেখো! উত্তম পাথেয় হলো, তাকওয়া।’ হজের পবিত্র সফরে তোমরা যা কিছুই নাও না কেন, তাকওয়া নিতে কিন্তু ভুলো না।

আমার প্রিয় ভাই! আমরা যারা হজ করতে যাই, প্রয়োজনীয় সবকিছু নিই। কিন্তু তাকওয়াটাই নেওয়া হয় না অনেকের। তাকওয়া ছাড়া হজের সফর অর্থহীন হয়ে যেতে পারে। ভুল বুঝবেন না। তাকওয়া কোনো সদাই নয় যে, দোকানে কিনতে পাওয়া যাবে। তাকওয়া হলো অনুভূতি; যা হৃদয়ে লালন করতে হয়। আপনি যখন হজের জন্য বাড়ি থেকে রওনা করবেন, তখন অবশ্যই একটি ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে থাকেন। তেমনি মনের পিঠেও তাকওয়া নামের একটি ব্যাগ ঝুলিয়ে নিন। তাকওয়াকে ব্যাগের সঙ্গে তুলনা করার কারণ হলো, পথে-ঘাটে ব্যাগ নিলে যেমন একটু পরপর চেয়ে দেখি ব্যাগটা ঠিক আছে কিনা, কেউ আবার চুরি করতে পারে, তাই একদম শক্ত করে নিজের কাছে রেখে দিই। তেমনি অল্প পরপর তাকওয়াকেও পরীক্ষা করতে হয়। কারও ওয়াসওয়াসার কারণে যেন তাকওয়া হারিয়ে না যায়। যখনই বুঝবেন তাকওয়া তার জায়গা থেকে সরে যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে আবার টান দিয়ে হৃদয়ের মণিকোঠায় তাকওয়া নামক ব্যাগটাকে ঠেসে ধরবেন। এভাবে করাকেই বলা হয় মনের সঙ্গে জিহাদ। জিহাদে আকবার।

একজন হাজী যখন তাকওয়াকে সম্বল করে হজ সফরে রওনা করবে, তখন তার হজ হয়ে উঠবে তাকওয়ার আলোয় আলোকিত। হজ সফরের প্রতিটি মুহূর্তে হাজী যদি তাকওয়া তথা আল্লাহকে ভয় করে চলার চর্চা করে, আশা করি হজ-পরবর্তী জীবনেও তার ভিতর এক ধরনের মুত্তাকি ভাব চলে আসবে। হজের শুরুতেই যেহেতু তাকওয়ার পাথেয় নিয়ে হাজীকে চলতে হয়, তাই হজ শেষে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত লম্বা একটা সময় সে মুত্তাকির জীবনযাপন করবে। তাই হজ শেষে যখন সে বাড়ি ফিরে আসে তখন আর তার কোনো গুনাহ থাকে না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হজ বান্দাকে এমনভাবে নিষ্পাপ করে দেয়, যেমন সদ্যভূমিষ্ঠ শিশু নিষ্পাপ থাকে।’ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, ‘যে হজ হাজীকে মুত্তাকি বানায়, সে হজের বিনিময় শুধুই জান্নাত।’  হে আল্লাহর ঘরের মেহমান! বায়তুল্লাহর মুসাফির! আপনারা  অবশ্যই হজ সফরে তাকওয়ার পাথেয় নেবেন। মুত্তাকি হয়ে, নিষ্পাপ হয়ে, জান্নাত নিশ্চিত করে তবেই বাড়ি ফিরবেন। আল্লাহ হজ সফরকারীদের সাহায্য করুন।

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর