বাংলাদেশ প্রতিদিনের শীর্ষ প্রতিবেদন ‘যত বিল তত কমিশন’ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার যাচ্ছেতাই অবস্থাকে তুলে ধরেছে। চিকিৎসা নামের মানবিক পেশা গুটিকয়েক লোভী মানুষের জন্য আজ ভাবমূর্তির সংকটে নিপতিত। সেবার আশায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেই চিকিৎসকদের কমিশন ফাঁদে নিঃস্ব হচ্ছেন রোগীরা। অসাধু চিকিৎসকের প্রতারণায় বাড়ছে স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়। কমিশনের আশায় নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কথা বলে রোগীদের ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ডজনখানেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফর্দ। অসৎ চিকিৎসকদের কারণেই সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সাইনবোর্ড-সর্বস্ব এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মনীতির কোনো বালাই নেই। হাতুড়ে টেকনিশিয়ান দ্বারাই চালানো হয় রোগ নির্ণয়ের যাবতীয় পরীক্ষা। একই রোগ পরীক্ষায় একেকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে একেক রকম রিপোর্ট পাওয়ার নজিরও বিস্তর। পুরুষদের পরীক্ষা রিপোর্টে তুলে ধরা হয় মেয়েলি রোগের হালফিল বিবরণ। মেয়েদের রিপোর্টে পুরুষদের বিবরণ দেওয়া হয় অবলীলাক্রমে। বিলের ক্ষেত্রেও আছে নিয়ন্ত্রণহীনতা। একই পরীক্ষা-নিরীক্ষা একেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে একেক রকম বিল আদায় করার বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। ডায়াগনস্টিক টেস্টের ক্ষেত্রে কোনো মানদ্ল নিশ্চিত হচ্ছে না। নিশ্চিত হচ্ছে না জবাবদিহি। একশ্রেণির চিকিৎসকের সহায়তায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের টেস্টবাণিজ্য চলছে বেপরোয়াভাবে। বেশিরভাগ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত সার্টিফিকেটধারী দক্ষ টেকনিশিয়ান নেই। কমিশনের লোভে বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতালের প্যাথলজিক্যাল বিভাগটিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে দেওয়া হয় না। সবচেয়ে দামি আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হলেও এবং এগুলোর তত্ত্বাবধানে দক্ষ টেকনেশিয়ানরা কাজ করলেও অজ্ঞাত কারণে দ্রুততম সময়েই সেগুলো অকেজো হয়ে পড়ে। চিকিৎসকদের এক বড় অংশ রোগ নির্ণয় এবং নিরাময়ের বদলে কমিশন লাভের জন্য বিনা কারণেও নানা পরীক্ষার জন্য রোগীদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানোর নির্দেশনা দেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য চলছে তা বন্ধে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে কড়া হওয়ার বিকল্প নেই।