মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ডাকসু নির্বাচন

হাই কোর্টের রায় এড়িয়ে যাওয়া দুর্ভাগ্যজনক

ডাকসুসহ দেশের ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন হচ্ছে না দুই যুগের বেশি সময় ধরে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে হাই কোর্ট নির্দেশ দিলেও তা এখনো প্রতিপালন করা হয়নি। কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি কালো চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে ২৮ বছর ধরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। তার আগে সামরিক শাসকদের আমলেও ডাকসুসহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের নজির রয়েছে। ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ সামরিকতন্ত্র থেকে গণতান্ত্রিক শাসনের নতুন সোপানে পা রাখলেও অদৃশ্য কারণে রুদ্ধ হয়ে যায় ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় গণতন্ত্রচর্চায় প্রতিকূল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। ডাকসুসহ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন শিক্ষাঙ্গনে যেমন গণতন্ত্রচর্চার সুযোগ সৃষ্টি করত তেমন পরিশীলিত রাজনৈতিক নেতৃত্ব সৃষ্টিতে অবদান রাখত। তার ব্যত্যয় হওয়ায় জাতীয় পর্যায়ে যোগ্য নেতৃত্বের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। রাজনীতির প্রতি দায়বদ্ধ নেতৃত্বের বদলে টাকাওয়ালারা রাজনৈতিক অঙ্গনে উড়ে এসে জুড়ে বসার সুযোগ পাচ্ছে। শিক্ষাঙ্গনে জ্ঞানার্জনের মূল ধারণাও উপেক্ষিত হচ্ছে দুর্ভাগ্যজনকভাবে। জ্ঞানার্জনের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্র-শিক্ষকের পারস্পরিক সহযোগিতায় পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও তা চলছে ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব ছাড়াই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষমতা কাঠামোর সর্বোচ্চ স্তর সিনেট। আইন অনুযায়ী সিনেটে পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি থাকার কথা থাকলেও বছরের পর বছর ধরে সেখানে শূন্যতা বিরাজ করছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় পেশিশক্তির দাপটও অনুভূত হচ্ছে ছাত্র রাজনীতিতে। রাজনীতির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় উগ্রবাদের ধারক-বাহকরাই লাভবান হচ্ছে। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে নির্দেশ মহামান্য হাই কোর্ট দিয়েছিল তা এড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা আশা করব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্দেশ পালনে কুম্ভকর্ণের ঘুম থেকে অচিরেই জেগে উঠবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর