শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মহররমের তাৎপর্য

মুফতি শামছুল হক সা’দী আল-হাবীবী

মুসলমানদের জন্য আরবি বা ইসলামী মাসসমূহের হিসাব রাখা ফরজে কিফায়াহ। আরবি বা ইসলামী মাসসমূহের মধ্যে চারটি মাস অত্যন্ত সম্মানিত। সে মাসগুলো হলো—জিলকদ, জিলহজ, রজব ও মহররম। তার মধ্যে আবার মহররমের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। ইসলামী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মহররম মাস প্রথম মাস। মহাগ্রন্থ আল-কোরআনুল কারিম ও পবিত্র হাদিস শরিফের আলোকে জানা যায়, মহররমসহ উল্লিখিত চারটি সম্মানিত মাসগুলোতে সব ধরনের গুনাহ বর্জন করতে হবে এবং যথাসম্ভব বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে। প্রিয় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহররম মাসকে ‘মহান আল্লাহর মাস’ হিসেবে অভিহিত করে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করেছেন। যেমনটি বোঝা যায় সহিহ মুসলিম শরিফ বর্ণিত হাদিস দ্বারা পবিত্র রমজানুল মোবারকের পরে সবচেয়ে বেশি উত্তম বা ফজিলত পূর্ণ রোজা হলো ‘মহান আল্লাহর মাস মহররমের রোজা।’ মহররমের ১০ তারিখকে বলা হয় আশুরা। সাধারণভাবে আশুরা বললে আমাদের মনে হয়, এই দিনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রাণাধিক দৌহিত্র, হজরত ইমাম হুসাইন (রা.) কারবালার প্রান্তরে  মর্মান্তিকভাবে শহীদ হয়েছিলেন। আশুরার তাৎপর্য বোধহয় এখানেই। মূলত আশুরার তাৎপর্য কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নয়। বরং হাদিসে এসেছে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরত করার পর দেখলেন সেখানকার বনি ইসরাইল অর্থাৎ, ইহুদিরা আশুরার দিন অর্থাৎ, মহররমের ১০ তারিখে রোজা রাখে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে চাইলেন তারা এই দিনে রোজা রাখে কেন? তাঁকে জানানো হলো, এই দিনে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর কুদরতে বনি ইসরাইলকে সমুদ্র পার করে নিয়েছেন, আর ফেরাউন ও বাহিনীকে সমুদ্রে নিমজ্জিত করেছেন। এর শোকর আদায় করার জন্য হজরত মুসা আলাইহিস সালাম রোজা রেখেছেন। কারণ এটা মহান আল্লাহর কতবড় একটা নেয়ামত ছিল, কোনো রকম নৌযান ছাড়া এই মহাসমুদ্র তাঁরা পার হতে পারলেন। মহান আল্লাহর কুদরতে পানি ফাঁক হয়ে সমুদ্র গর্ভে রাস্তা বের হয়ে গেল এবং হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর অনুসারীরা সেই রাস্তা দিয়ে পার হয়ে গেলেন। আর ফেরাউন তার বাহিনীসহ সেখানে নিমজ্জিত হয়ে গেল।  যেহেতু এই নেয়ামতের শোকর আদায় করার জন্য মুসা আলাইহিস সালাম রোজা রাখতেন সেহেতু ইহুদিরা রোজা রাখে। তখন তিনি বললেন, আমরা সম্মানিত নবী মুসা আলাইহিস সালামের অনুসরণ তোমাদের চেয়ে বেশি করব। তাই বিশ্বনবী, রোজা রাখা শুরু করলেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের রোজা রাখতে বললেন। এই হলো আশুরার দিনের তাৎপর্য। নেয়ামতের শোকর আদায় করার শিক্ষা গ্রহণ করাই হলো এই দিনের শিক্ষা। (বোখারি, মুসলিম, সুনানে ইবনে মাজাহ) এ ছাড়া প্রিয় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের বহু বছর পরে ১০ মহররমে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনায় তাঁর প্রিয়তম দৌহিত্র, হজরত ইমাম হুসাইন (রা.) কারবালার প্রান্তরে মর্মান্তিকভাবে শহীদ হয়েছিলেন। অনেক মর্যাদাপূর্ণ এই শাহাদাতের মাধ্যমে তিনি ইসলাম জিন্দা করার জন্য প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের শিক্ষা দিয়েছেন।

লেখক : মুহতামিম, মুহাম্মাদিয়া কওমি মহিলা মাদ্রাসা, ৮৬, মুসলমানপাড়া রোড, খুলনা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর