শুক্রবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

হৃদয় থেকে হৃদয়ে প্রশান্তি ছড়ায় সালাম

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

হৃদয় থেকে হৃদয়ে প্রশান্তি ছড়ায় সালাম

মানুষ যখন শান্তি শান্তি বলে হাহাকার করছিল তখনই হেরাগুহা থেকে শান্তির প্রদীপ নিয়ে বেরিয়ে এলেন শান্তির দূত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি শেখালেন কী করে  শান্তিতে থাকা যায়। কীভাবে মানুষে মানুষে মিলেমিশে সুন্দরভাবে বসবাস করা যায়। একটি শান্তিময় সুন্দর সমাজ গঠনের প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে কারও সঙ্গে দেখা হলেই তাকে মনে করিয়ে দেওয়া, আমরা শান্তিপ্রিয়-শান্তিকামী। তাই নবীজি (সা.) বিশ্বাসীদের পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাৎ, লেনদেন, কথাবার্তার শুরুতে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বাক্যটি শিখিয়েছেন। আসসালামু আলাইকুম মানে আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। কেউ যখন কারও সঙ্গে দেখা হওয়ার পর বলে, আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, তখন স্বাভাবিকভাবেই শান্তিতে থাকা ও শান্তি বজায় রাখার মানসিকতা তৈরি হয়।

পবিত্র কোরআনে আল্ল­াহতায়ালা বলেন, ‘ওয়া ইজা হুইয়িতুম বিতাহিয়্যাতিন ফাহাইয়ু বিআহসানা মিনহা আও রুদ্দু হা। অর্থ, কেউ যখন তোমাকে সালাম দেয়, তুমি তাকে এর চেয়ে ভালোভাবে সালাম দাও। অথবা তার মতো করেই সালাম বল।’ একবার রসুল (সা.) সাহাবিদের নিয়ে বসেছিলেন। এমন সময় একজন সাহাবি এসে বলল, আসসালামু আলাইকুম। এরপর আরেকজন সাহাবি এসে বলল, আসাসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্ল­াহি। তারপর আরেকজন সাহাবি এসে বলল, আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্ল­াহি ওয়া বারাকাতুহু। অর্থাৎ সাহাবিরা সালামের পর একটি করে শব্দ বাড়াতে লাগলেন। তখন নবীজি বললেন, সালাম হলো দোয়া। কোনো মুমিন যদি তার ভাইয়ের জন্য অতিরিক্ত বাক্য বলে দোয়া করে তাহলে প্রতি শব্দের বিনিময়ে দশ নেকি করে বাড়িয়ে দেওয়া হবে।

সালামের মাধ্যমে পরস্পরের মাঝে ভালোবাসা বাড়ে। একদিন নবীজি (সা.) সাহাবিদের ডেকে বললেন, তোমরা কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা মোমিন হতে পার। তোমরা কেউ মোমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না একজন আরেকজনকে ভালোবাসো। আমি কি তোমাদের বলে দেব কী কাজে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি হবে? সেটি হলো সালাম। তোমাদের মধ্যে সালামের প্রচলন বাড়িয়ে দাও। তাহলে সমাজে-পরিবারে-রাষ্ট্রে সব জায়গায় প্রেম-প্রীতি ভালোবাসা এবং শান্তি ও সমৃদ্ধি বেড়ে যাবে। রসুল (সা.) এর কথাকে সাহাবিরা এত গুরুত্ব দিয়েছেন যে, কোনো কোনো সাহাবির সালামের মাত্রা দেখে কেউ কেউ বাড়াবাড়ি মনে করতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি আর ওমর (রা.) প্রায় দিনই বাজারে যেতাম শুধু মানুষকে সালাম দেওয়ার জন্য। বেশি বেশি সালাম দিয়ে নেকি কুড়ানো আমাদের নেশা হয়ে গিয়েছিল।

সালাম দেওয়া সুন্নত। আর সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। কেউ যদি সালামের জবাব না দেয় তবে সে বড় গুনাহগার হবে। যে সালাম দেয় সে নব্বই নেকি পায়। আর যে সালামের জবাব দেয় সে পায় ১০ নেকি। মূলত এ কারণেই সাহাবিদের মধ্যে সালাম দেওয়ার প্রতিযোগিতা লেগে যেত। সবাই চেষ্টা করত যেন আগে আগে সালাম দিয়ে ৯০ নেকি অর্জন করতে পারে। পিছিয়ে ছিলেন না আমাদের প্রিয়নবী (সা.)ও। নবীজির জীবন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নবীজি (সা.)-কে কেউ কখনো আগে সালাম দিতে পারেননি। এমনকি লুকিয়ে থেকেও কেউ কেউ চেষ্টা করেছেন নবীজিকে আগে সালাম দিতে। কিন্তু সাহাবিরা কখনো নবীজির আগে সালাম দিতে পারতেন না।

হে আমার দীনি ভাই, আসুন! আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া শান্তি-সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনতে আবার প্রতিযোগিতা করে সালামের প্রচলন করি। নিজে শান্তিতে থাকি। সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি বজায় রাখতে চেষ্টা করি। আল্ল­াহ আমাদের তৌফিক দিন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর