শিরোনাম
শুক্রবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

এতিমদের সঙ্গে সর্বোত্তম আচরণ করতে হবে

মাওলানা মুহাম্মদ জিয়াউদ্দিন

এতিম শব্দটির অর্থ নিঃসঙ্গ। ইসলামী পরিভাষায় যে শিশু  সন্তানের পিতা ইন্তেকাল করে তাকে ইয়ামি বলা হয়। এতিমের সঙ্গে সর্বোত্তম ব্যবহারের তাগিদ দিয়েছে ইসলাম পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘তারা জিজ্ঞাসা করছে এতিমের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হবে? বলে দিন, যে কর্মপদ্ধতি তাদের জন্য কল্যাণকর তাই অবলম্বন করা ভালো। তোমরা যদি তোমাদের নিজেদের ও তাদের খরচপাতি ও থাকা-খাওয়া যৌথ ব্যবস্থাপনায় রাখ তাহলে তাতে কোনো ক্ষতি নেই। তারা তো তোমাদের ভাই। অনিষ্টকারী ও হিতকারী, উভয়ের অবস্থা আল্ল­­াহ ভালো করেই জানেন। আল্ল­­াহ চাইলে এ ব্যাপারে তোমাদের প্রতি কঠোর ব্যবহার করতেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতা ও পরাক্রমের অধিকারী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান ও হিকমতের অধিকারী’ (সূরা বাকারাহ : ২২০)। এতিমের সম্পদ সুসংরক্ষণ এবং তাদের হক বুঝিয়ে দেওয়ার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ইসলামে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘এতিমদের তাদের ধন-সম্পদ বুঝিয়ে দাও। ভালো সম্পদের সঙ্গে মন্দ সম্পদ বদল কর না। আর তাদের সম্পদ তোমাদের সম্পদের সঙ্গে মিশিয়ে গ্রাস কর না। এটা মহাপাপ’ (সূরা নিসা : ২)। এতিমের সম্পত্তি গ্রাস ইসলামের দৃষ্টিতে অমার্জনীয় অপরাধ। এ  অপরাধের কঠোর পরিণতির কথা বর্ণনা করে মহান আল্ল­াহ ইরশাদ করেন, ‘যারা এতিমের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা মূলত আগুন দ্বারাই নিজেদের পেট বোঝাই করে। তারা নিশ্চয়ই জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে’ (সূরা নিসা-১০)। এতিমের প্রতি সদয় হওয়ার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্ল­াহ ইরশাদ করেন, ‘এতিমের প্রতি কঠোর হইও না। সাহায্য প্রার্থীকে তিরস্কার কর না। আর নিজের রবের নেয়ামত প্রকাশ কর’ (সূরা আদ-দুহা : ৯-১১)। এতিমকে যে আশ্রয় দেবে, কাছে টেনে নেবে তার পুরস্কার ঘোষণা করে রসুল সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­াম বলেন, আমি আর এতিমের দায়িত্ব গ্রহণকারী ব্যক্তি জান্নাতে এভাবে থাকব। এই বলে তিনি নিজ হাতের তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলের মধ্যে সামান্য ফাঁক রেখে ইশারা করে দেখালেন (বোখারি ও মুসলিম)। অর্থাৎ হাতের দুই আঙ্গুল যেমন পাশাপাশি, তেমনি এতিমের অভিভাবক ও রসুল সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­াম একসঙ্গে জান্নাতে থাকবেন।

এতিমদের অধিকার বা হক সুসংরক্ষণে রসুল সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­াম বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্ল­াম বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে দূরে থাক। লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, হে আল্ল­­াহর রসুল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, সেগুলো হলো- ১. আল্ল­­াহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করা, ২. জাদু করা, ৩. অহেতুক আল্ল­াহর নিষিদ্ধ জীবজন্তু হত্যা করা, ৪. সুদ খাওয়া, ৫. এতিমের মাল ভক্ষণ করা, ৬. জিহাদের মাঠ থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং ৭. সতী-সাধ্বী মুসলিম নারীর ওপর ব্যভিচারের মিথ্যা দোষারোপ করা। (বোখারি ও মুসলিম)।

আল্ল­াহ এতিমদের প্রতি আমাদের সদয় হওয়ার তাওফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর