মঙ্গলবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্বাচন সমাজ নির্মাণের একটি শক্তিশালী ভিত্তি

অ্যাডভোকেট শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ

নির্বাচন সমাজ নির্মাণের একটি শক্তিশালী ভিত্তি

নির্বাচন শব্দের মধ্যে একটা সর্বজনীনতা বিদ্যমান। এই সর্বজনীনতাকে পুঁজি করে একটি স্বতঃস্ফূর্ত, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন গণতন্ত্রের ভিতকে মজবুত করে তোলে ও বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে। দেশের পরিস্থিতির দৃশ্যপট বদলে দেয় নির্বাচন। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে সরকারের উচিত নিরপেক্ষভাবে সব পক্ষকে সমানতালে তাদের কর্মসূচি নিয়ে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। মনে রাখা প্রয়োজন, ছোট্ট একটি ভুল ভবিষ্যতে বড় ভুলকে উৎসাহিত করে। ফলে দেশ ও সমাজের সর্বনাশে তা সহায়ক হয়। জনগণ চায় অংশগ্রহণমূলক ও স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার নিরপেক্ষ ও দক্ষ নির্বাচন কমিশন। সাধারণত দেখা যায়, যারা ক্ষমতায় থাকে তারা নিজের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহারের চেষ্টা করে। স্বাধীন নাগরিক হিসেবে যদি নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ না করা যায় তাহলে সেই নির্বাচনকে স্বচ্ছ বলা যাবে না। স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও দক্ষ নির্বাচন কমিশন একান্ত প্রয়োজন।

অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য দাগি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের আইনের আওতায় আনা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, চাঁদাবাজি রোধ, কালো টাকার ছড়াছড়ি ইত্যাদি রোধ করে নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লে­য়িং ফিল্ড তৈরি করা। সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে না পারলে কোনোভাবেই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা যাবে না। সরকারকে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। তারা যেন তাদের প্রয়োজনমতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সেদিকে সরকারকেই খেয়াল রাখতে হবে। প্রশাসনের ইচ্ছার ওপরই নির্ভর করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। আর সরকার বা আমাদের দক্ষ নির্বাচন কমিশন সেটা চাইলেই পারে- এ বিশ্বাস আমাদের আছে। সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে নির্বাচনের আগেই লেভেল প্লে­য়িং ফিল্ড করে নেবে। এতে নির্বাচনের আগেই সে আইনশৃঙ্খলাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে। আর যদি প্রয়োজন মনে করে তাহলে নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী নামানো যেতে পারে। এজন্য সবাই মিলে বসে আলোচনার মাধ্যমে অর্থাৎ রাজনৈতিক দল, শিক্ষক, ছাত্র, বুদ্ধিজীবী, সুধী সমাজের প্রতিনিধি- সবাইকে নিয়ে বসে ঠিক করতে হবে নির্বাচনের সময় কীভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সরকারের সদিচ্ছা, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছার ওপরই তা নির্ভর করছে। আশা করি বিষয়টি সব রাজনৈতিক দলের নেতারা ভেবে দেখবেন। নির্বাচনে ভোটাররা যেন অবাধে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে পারেন, সে নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে নির্বাচন মানে শুধু রদবদল বা পরিবর্তন নয়। এর সামাজিক বাস্তবতা অনেক। এটি সমাজ নির্মাণের একটি শক্তিশালী ভিত্তি। আমি মনে করি, নির্বাচন সামনে রেখে সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তির রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় পরিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণের স্বাধীনতা থাকা উচিত। রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মী ও সমর্থকদের অবশ্যই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকা, প্রচারণা চালানো, ভয়ভীতি, প্রতিশোধ বা জবরদস্তিমূলক বিধিনিষেধ ছাড়াই সমাবেশ করার স্বাধীনতা থাকতে হবে। নির্বাচনের আগে, নির্বাচন চলাকালে ও নির্বাচনের পরে শান্তি বজায় রাখতে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। মনে রাখতে হবে, সহিংসতায় কেবল তারাই লাভবান হয়, যারা বাংলাদেশের ভালো চায় না। পরিশেষে বলছি, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণে একটি সুন্দর দেশ আরও সুন্দর হতে পারে। আসুন, আমরা হাতে হাত রেখে সুন্দর দেশ গড়ি।

লেখক : সভাপতি, সাউথ এশিয়ান

ল ইয়ার্স ফোরাম

অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

সর্বশেষ খবর