শুক্রবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভালো মানুষের নীরবতায় সমাজ বখে যায়

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

ভালো মানুষের নীরবতায় সমাজ বখে যায়

মানুষ যখন ভালো হয়, তখন সমাজও সুন্দর হয়। সমাজ সুন্দর হলে সুন্দর হয় রাষ্ট্র। রাষ্ট্রকে সুন্দর রাখার দায়িত্ব আমার-আপনার, আমাদের সবার। মানুষ ভালো না হলে যেমন রাষ্ট্র সুন্দর হয় না, তেমন রাষ্ট্র সুন্দর না হলেও মানুষ ভালো থাকতে পারে না। এজন্য যুগে যুগে যত নবী-রসুল এসেছেন, তাদের দাওয়াতি মিশন ছিল দুটি। এক. ভালো মানুষ তৈরি করা। দুই. ভালো মানুষকে সংগঠিত করা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দাওয়াতি কাজ শুরু করেন, তিনি আসলে ভালো মানুষ তৈরির কাজটিই শুরু করেন। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর যখন একদল ভালো মানুষ তৈরি হয়েছে, তখন তাদের নিয়ে একটি রাষ্ট্র গঠন করলেন। মদিনা রাষ্ট্র।

শুধু ভালো মানুষ তৈরি করাই যথেষ্ট নয়। তাদের সংগঠিত শক্তিতে পরিণত করতে হবে। তা না হলে পুরো পৃথিবী ভালো মানুষে ভরে গেলেও সমাজ ও রাষ্ট্রে ভালোর সুবাতাস বইবে না। কোনো এক দার্শনিক বলেছিলেন, খারাপ মানুষের জন্য সমাজ ধ্বংস হয় না। সমাজ ধ্বংস হয় ভালো মানুষের নীরবতায়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কথাটি যথোপযুক্ত। এ দেশে ভালো মানুষের সংখ্যাই বেশি। ব্যক্তিগত জীবনে অন্যায়-দুর্নীতির ধারেকাছেও ঘেঁষতে রাজি নই আমরা। কিন্তু কাজে কর্মে আমাদের অন্যায়ের আশ্রয় নিতে হয়। দুর্নীতির সঙ্গে মিশতে হয়। কারণ, যাদের মাধ্যমে আমরা কাজকর্ম করি, তারা অধিকাংশই ভালো নয়। সংখ্যায় তারা কম। কিন্তু শক্তিতে তারা আমাদের চেয়ে বড়। কারণ, তারা সংঘবদ্ধ।

ভালো ও সৎ মানুষের হাত শক্তিশালী করতে হলে আমাদের এক হতে হবে। আল কোরআনেও আল্লাহ-তায়ালা বলেছেন, ‘যদি তোমরা সফল হতে চাও, তাহলে এক হয়ে আল্লাহর কোরআনকে আঁকড়ে ধর। তোমরা যদি বিভক্ত হয়ে যাও, তবে মনে রেখো, সফলতা তোমাদের জন্য নয়।’ আজ ভালো মানুষগুলো ঐক্যবদ্ধ নেই। তাই তারা শক্তিহীন। মন থেকে না চাইলেও বাধ্য হয়ে অন্যায়-দুর্নীতির সঙ্গে তাদের মিশতে হয়। তারা মিশে যায়। যদি ভালো মানুষগুলো সংঘবদ্ধ থাকত, তবে তারা সংখ্যায় কম হলেও আল্লাহ তাদের বিজয় দিতেন। দুনিয়াজুড়ে ভালোর সুবাতাস বইয়ে দিতেন। আল কোরআনে সে ওয়াদাই করেছেন আল্লাহ। তিনি বার বার বলেছেন, ‘যদি তোমরা আমার কালামের ঘোষণায় বিশ্বাসী হও, তবে বিজয় তোমাদেরই।’ আরেক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যারা আমার কালামে বিশ্বাস করে, তাদের সাহায্য করা আমার কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়।’

প্রিয় পাঠক! আমাদের সামনে নির্বাচন এসেছে। এসেছে ভালো মানুষ নির্বাচিত করার সুযোগ। আমার আপনার ভোটের মাধ্যমেই এ দেশের কর্ণধার নির্বাচিত হবে। তাই ভোট আমাদের জন্য আমানত। আমরা যদি দেখেশুনে সৎ মানুষ নির্বাচন করি, তবেই ভোট আমানতের সঠিক প্রয়োগ করা হবে। আল কোরআনে আল্লাহ বিশ্বাসীদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে নামাজের পাশাপাশি আমানতের বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘বিশ্বাসীদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, তারা আমানত ও ওয়াদা রক্ষা করে।’ আমরা যদি সৎ লোককে ভোট না দিই, তবে আল্লাহর আমানত খিয়ানত করা হবে। এতে সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটি হবে তা হলো আমার ভোটে একজন অসৎ মানুষ নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রে অন্যায়-অসত্যের কাজ এগিয়ে নেবে। এতে যত গোনাহ হবে, একটি অংশ আমার আমলনামায়ও যোগ হবে। সৎ মানুষকে ভোট দেওয়া আমার ইমানি দায়িত্ব। আমার দলের প্রার্থী যদি সৎ না হয়, অন্যায়-দুর্নীতির সঙ্গে তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পর্ক থাকে, তাহলে তাকে ভোট না দেওয়াটাই আমার ইমানি দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে, ভোট কোনো সাধারণ আমানত নয়। এটি মহান আল্লাহর আমানত। তাই নিজের ইচ্ছামতো যাকে খুশি তাকে ভোট দেওয়া যাবে না। অবশ্যই সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দিতে হবে। আমরা যদি সিদ্ধান্ত নিই, সৎ, দেশপ্রেমিক ও রাষ্ট্র চালানোর যোগ্যতা রাখে শুধু এমন প্রার্থীদেরই নির্বাচিত করব, তাহলে আশা করা যায়, এ দেশের ভাগ্যাকাশে যে দুর্নীতি-অশান্তির কালো মেঘ জমেছে তা দূর হয়ে শান্তি-সমৃদ্ধির উজ্জ্বল সূর্য উঠবে। আমাদের দেশ আমরা কাদের হাতে তুলে দেব, সে সিদ্ধান্ত আমাদেরই নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আল্লাহ সেই জাতির ভাগ্যে কখনো শান্তি-সমৃদ্ধি দেন না, যে জাতি নিজেরা নিজেদের শান্তিতে রাখার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয় না। আসুন! আমরা সিদ্ধান্ত নিই, আগামী নির্বাচনে আমরা তাদের হাতেই দেশ তুলে দেব, যারা আল্লাহুভীরু মন নিয়ে দেশ পরিচালনা করবে। দেশপ্রেম নিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে, আমার আপনার ভোট তারাই পাক। আল্লাহ আমাদের সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক নেতা নির্বাচনের তাওফিক দিন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব

চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি

         www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর