শিরোনাম
শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইসলামের নির্দেশনা

মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান : সিনিয়র পেশ ইমাম

রোগব্যাধি থেকে সতর্কতা অবলম্বনে ইসলাম বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে।  রোগ প্রতিরোধ হচ্ছে নিরাময়ের চেয়ে সস্তা। এ কারণেই ইসলাম এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। হজরত আবদুল্ল­াহ্ ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্ল­াহ্ (সা.) পানপাত্রের মধ্যে নিশ্বাস ফেলতে ও তার মধ্যে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। এটাও এক ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা। কারণ নাক ও মুখের ভিতর অনেক ধরনের রোগজীবাণু থাকতে পারে, যেগুলো পানিকে দূষিত করে থাকে। আর এতে দেহের মধ্যে রোগের সৃষ্টি হতে পারে। আল্ল­াহতায়ালা বলেন, তার (মৌমাছির) উদর থেকে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয় (মধু) যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য। (সূরা নাহল, ১৬ : ৬৯)

কালোজিরা সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেছেন, তিনি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, কালোজিরার মধ্যে মৃত্যু ব্যতীত আর সমস্ত রোগের আরোগ্য রয়েছে। বর্তমানে মধু ও কালোজিরা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় গবেষণা হচ্ছে। রোগ প্রতিরোধ এবং রোগ নিরাময়ে এর যে অপরিমেয় শক্তি তা ক্রমশ আবিষ্কার হচ্ছে। ইসলামে পুত্র সন্তানদের খাতনা করানোর যে নিয়ম এটা তাকে বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে মুক্ত রাখে। স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য দাঁত ও মুখ অপরিষ্কার থাকলে এতে বিভিন্ন প্রকারের রোগব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে রসুলুল্ল­াহ (সা.) দাঁত ও মুখ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে বিশেষভাবে তাগিদ দিয়েছেন। ওজুর মধ্য দিয়ে দিনে পাঁচবার কনুই থেকে হাতের আঙুল পর্যন্ত, পায়ের টাখনু থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত পরিষ্কার করা সম্ভব হয়। নাক, মুখ, কান ও চোখ দিনে পাঁচবার পরিষ্কার করা সম্ভব হয়ে থাকে। এর ফলে এই সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে কোনো ধূলিকণা বা রোগজীবাণু লেগে থাকতে পারে না। ইসলামে মদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে মানুষ হৃদরোগ ও ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারে। নিরাময় সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত স্পষ্ট। হজরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেন, আল্ল­াহতায়ালা এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি যার নিরাময়ের ব্যবস্থা দেননি। যেমন যদি কারও জ্বর হয় তাহলে জ্বর কমানোর জন্য আধুনিক বিশ্বের চিকিৎসা হলো, ঠাণ্ডা পানি দিয়ে শরীর ধুয়ে ফেলা কিংবা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গা মুছে ফেলা। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জ্বর জাহান্নামের উত্তাপ থেকে সৃষ্ট, তাই পানি দিয়ে তা ঠাণ্ডা কর। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে উত্তম ও পবিত্র খাদ্য গ্রহণের ব্যাপারে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। যা গ্রহণ করলে শুধু শরীর গঠন ও ক্ষয়পূরণই নিশ্চিত হবে না বরং রোগ-ব্যাধির প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। এ ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা সুস্পষ্ট। মহান আল্লাহ বলেন, “মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক। আমি প্রচুর বারিবর্ষণ করি। এরপর আমি ভূমি প্রকৃষ্টরূপে বিদীর্ণ করি এবং এতে আমি উৎপন্ন করি শস্য, আঙুর, শাক-সবজি, জলপাই, খেজুর, বহুবৃক্ষ-বিশিষ্ট উদ্যান, ফল এবং গবাদির খাদ্য । এটা তোমার এবং তোমাদের গবাদিপশুর ভোগের জন্য।” (সূরা আবাসা, ৮০ : ২৪-৩২) অন্য আয়াতে আল্ল­াহতায়ালা বলেন, “তারপর আমি তা দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙুরের বাগান সৃষ্টি করি। তোমাদের জন্য এতে প্রচুর ফল আছে এবং তোমরা তা থেকে আহার করে থাক।” (সূরা মুমিনুন) এমনিভাবে ইসলামে শিশু স্বাস্থ্যের প্রতি সতর্কতা অবলম্বনের জন্য গুরুত্বারোপ করেছে। হাদিস গ্রন্থ তিরমিজিতে আছে, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা সর্বপ্রথম যে নিয়ামত সম্পর্কে বান্দাকে প্রশ্ন করবেন তা হল সুস্থতা। কিয়ামত দিবসে তাকে প্রশ্ন করা হবে, “আমি কি তোমাকে শারীরিক সুস্থতা দিইনি?” এই সুস্থতার ব্যাপারে শিশুদের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে অধিক যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। কারণ আজকের একজন সুস্থ শিশু আগামী দিনের সুস্থ সবল একজন নাগরিক। একটি সুস্থ জাতি গঠনে শিশুর স্বাস্থ্যে প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা অত্যন্ত জরুরি। আল্ল­াহতায়ালা আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইসলামের নির্দেশনাগুলো সঠিকভাবে মেনে চলার তাওফিক দান করুন।

সর্বশেষ খবর