রবিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

দুঃসময়ের কর্মীরা মনোনয়ন না পেলেও কেন থাকেন দলে

নঈম নিজাম

দুঃসময়ের কর্মীরা মনোনয়ন না পেলেও কেন থাকেন দলে

ছেলে মনোনয়ন চাইলেন আওয়ামী লীগের। বাবা চাইলেন বিএনপি থেকে। কী আদর্শ কী রাজনীতি বুঝি না। তবে ছেলে পেলেন না। পাওয়ার কথা নয়। বাবা বিএনপির গণমনোনয়ন তিনটির একটি পেয়েছেন। চূড়ান্ত এখনো হয়নি। বাবার আচরণে ক্ষুব্ধ পুত্র। সামাজিক গণমাধ্যমে পুত্র লিখলেন, ‘আমার বাবাকে কেউ ভোট দেবেন না। এমন আদর্শ-বিবর্জিত মানুষকে ভোট দেওয়া যায় না।’ এ ঘটনা চট্টগ্রামের একটি আসনে। কিন্তু তোলপাড় সারা দেশে। আমার কথা হলো এই ছেলে কি তার বাবার এত দিনের কাহিনী জানতেন না। জানলে চুপ থাকলেন কেন? অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শ্বশুর-জামাইয়ের টানাপড়েন চলছে মহাজোটের মনোনয়ন নিয়ে। মেয়ে পড়েছেন বিপাকে। বাবার দিকে যাবেন, না স্বামীর দিকে। তার জন্য সমস্যা বাবা বড় না স্বামী? বড় অশান্তি চলছে ঘরে। ভোট নিয়ে নানা কাহিনী চলছে দেশজুড়ে। ভোটের বাক্সে আপন-পর নেই। ছোটবেলায় আমার এক মামা চেয়ারম্যান নির্বাচনে দাঁড়ালেন। মামাকে ভাই ডেকে স্লোাাগান দিতাম। লাভ হলো না। মামা পাস করতে পারেননি। পাস করলেন বাবার এক বন্ধু। ভোট নিয়ে আমার নিজেরও অনেক অভিজ্ঞতা। একজন সংবাদকর্মী হিসেবে যেমন, তেমন আছে একসময় রাজনীতি করার অভিজ্ঞতাও। ভোটের দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসবে, আলাপ-আলোচনাও বাড়বে। ভোটে আমার অনেক বন্ধু মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি থেকে। আবার বঞ্চিতও হয়েছেন অনেকে। মনোনয়নকে ঘিরে দেখছি একদিকে উৎসব, আনন্দ, অন্যদিকে থাকে কান্নার রোল। সামাজিক গণমাধ্যমের হিরো শেখ তম্ম য়ের বিস্ময়কর যাত্রা দেখে নিজেই ফোন করলাম শেখ হেলাল ভাইকে। বললাম, আমাদের ভাতিজা কিন্তু দেখিয়ে দিচ্ছে। তিনি বললেন, দোয়া করবেন। অন্যদিকে নানক ভাইকে ফোন করতে গিয়ে করলাম না। আবদুল আউয়াল মিন্টুকে ফোন করার কথা ভাবছিলাম। তিনি কেন সরে দাঁড়ালেন জানি না। তবে জাহাঙ্গীর কবীর নানকের অশ্রু সামাজিক গণমাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। নানক কাঁদলেন। কাঁদালেন। কুমিল্লার বন্ধু ও একসময়ের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা নাসিমুল গনি চৌধুরী নজরুল ও টাঙ্গাইলে রোমেল ভাই হাসলেন শেষ মুহূর্তে। ভাগ্য বলে কথা। অন্যদিকে চোখে পড়ল আলাহউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের ফেসবুকে অনেক স্টাটাস। তিনি তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘জীবনে নির্বাচন করার অনিচ্ছার কথা বার বার বলেছিলাম। সেজন্য দশম সংসদে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন করিনি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য করার পরও কোনো সভায় যাইনি। ভেবেছিলাম বরাবরের মতো নীরবে-নিভৃতে কাজ করে যাব। রাজনৈতিক সহযোগী, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, নেতা-কর্মী, শুভানুধ্যায়ীদের ক্রমাগত অনুরোধে দলীয় মনোনয়ন চাইতে বাধ্য হই। সাময়িকভাবে বিভ্রান্ত হই। সবার ধারণা ছিল আমি চাইলে নেত্রী মনোনয়ন দেবেন। এলাকার অবস্থাও সম্ভবত খারাপ ছিল না। মনোনয়ন পাইনি। অর্থাৎ নেত্রী আমাকে পছন্দ করেন না বা অন্য হাজারো প্রার্থী থেকে আমি আলাদা কেউ না। এটাই বাস্তবতা, এটাই আজ প্রমাণিত। তাই যারা আমাকে নেত্রীর কাছের মানুষ হিসেবে জেনে সম্পর্ক রাখেন বা গুরুত্ব দেন তাদের আমার সম্পর্কে নতুনভাবে ভাবতে হবে। জীবন এমনই। আমি কিছু মনে করব না। আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন কর্মী। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ঘোষিত নৌকা মার্কার প্রার্থীদের জয়যুক্ত করার জন্য আমি সর্বশক্তি নিয়োগ করব। সবাইকে অনুরোধ করব তাই-ই করতে। জয় বাংলা।’ প্রিয় আলাহউদ্দিন নাসিম আপনার মন খারাপের কিছু নেই। এই জীবনে গভীর স্নেহ পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যার। টানা ১৩ বছর সঙ্গে ছিলেন। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলেন। ’৭৫ সালের পর লড়াই করেছেন। প্রতিকূলতা নিয়ে রাজনীতি করেছেন। বিসিএস কর্মকর্তা হিসেবে উপসচিব হিসেবে চাকরি ছেড়েছেন। দলের সুসময়-দুঃসময় দুটোই দেখেছেন। সবাই জানে, চাওয়া-পাওয়ার হিসাব নিয়ে রাজনীতি করতে আসেননি। আপনিও শেখ হাসিনার আদর্শকে লালন করে রাজনীতি করছেন, সেই আদর্শকে নিয়েই বেঁচে থাকবেন আপনার সর্বশেষ লেখাগুলো দেখে বুঝলাম। আপনি সর্বশেষ লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার মার্কা নৌকা। আবার নৌকাকে জয়ী করতে হবে সুন্দর আগামীর জন্য। আপনি আপনার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, আপনাকে যারা পছন্দ করে তারা আপনার সঙ্গেই থাকবে। আপনি মন্ত্রী-এমপি ছিলেন না। কিন্তু মানুষের ভালোবাসা আপনার সঙ্গে রয়েছে। জীবন এক বহতা নদী। রাজনীতির সাময়িক ওঠানামাতে কিছু যায় আসে না। যারা জীবনযুদ্ধে আদর্শের প্রশ্নে আপস করে না তারাই টিকে থাকে দীর্ঘমেয়াদে। আপনিও টিকে থাকবেন। নানকের অশ্রু যে কর্মীদের আলোড়িত করেছে। জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আবদুর রহমান, বাহাউদ্দিন নাছিম, বি এম মোজাম্মেল, আলাহউদ্দিন নাসিমদের রাজনীতি শুধু মনোনয়নের জন্য নয়। শেখ হাসিনার আদর্শকে বুকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। দলের জন্য নিবেদিত এই মাপের কর্মী সবাই হতে পারে না।

প্রিয় আলাহউদ্দিন নাসিম, আওয়ামী লীগের সারা দেশের অনেক নেতা-কর্মী টিকে আছে হৃদয়ের ক্ষত নিয়ে। তারা দলের বিপক্ষে এক সেকেন্ডের জন্যও যায়নি। বাড়ির দুষ্ট ছেলেরা সবসময় খারাপ সময়েও বাড়িতে থাকে। সুসময়ে অভিমান করে দূরে সরে থাকে। কিন্তু পরিবারের কোনো অসময় দেখলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। লড়ে যায় পরিবারের জন্য। তারা জানে, সুবিধা নেওয়ার গ্রুপ পরিবারে আলাদা। ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল থাকার মানুষও আলাদা। রাজনীতির এই আদর্শিক দিকটাই সবার জন্য জরুরি। সবাই স্বপ্নের আগামীকে নিয়ে কঠোর দৃঢ়তা নিয়ে দীর্ঘ সময় থাকতে পারে না। কেউ কেউ পারে। সেদিন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাঈন উদ্দিন হাসান চৌধুরী ফোন করলেন। মেধাবী সাহসী এই সাবেক ছাত্রনেতাকে কবি শামসুর রাহমানও প্রশংসা করেছিলেন। সেই মাঈনু তার বঞ্চনা শেয়ার করেন। মাঈনুকে বলেছি, তোমার আদর্শ, তোমার চিন্তা, তোমার সততা নিষ্ঠা ত্যাগই আগামী প্রজম্মে র কাছে থেকে যাবে। এই জীবনে সব হিসাব মিলবে না। মাঈনু বললেন, ২০১৪ সালে দলের নির্দেশ মান্য করে যে মানুষটির পক্ষে কাজ করেছেন, তিনি আওয়ামী লীগার নন। একসময় জামায়াত করতেন। তবু পার্টির আদেশ মেনেছেন। লিয়াকত সিকদারের কথা নাই বললাম। এমন দক্ষ সংগঠক খুব কম দেখেছি এই জীবনে। এখনো লিয়াকত কোনো জেলায় গেলে শত শত কর্মী তার পেছনে হাঁটে। অনেক নিষ্ঠুর বাস্তবতা আমাকেও মাঝে মাঝে কষ্ট দেয়। একজন নেতা তিল তিল করে একটি আসন গড়ে তোলেন। সেই আসনকে ঘিরে থাকে আশা-আকাক্সক্ষার আগামী। কিন্তু মনোনয়ন বিপর্যয় ভেঙে চুরমার করে দেয় সবকিছু। আর তখনই অনেকে জড়িয়ে পড়েন আত্মধ্বংসের খেলায়। নেতাদের নষ্ট চিন্তায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় কর্মীরা। তখনই সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট হয় রাজনীতি নিয়ে। রাজনীতির মানে শুধু ক্ষমতা নয়। আদর্শও থাকতে হয়। তবু নিজ অন্দরে অপমান, অপদস্থ হয়ে অনেক মানুষ নিজেকে আদর্শিকভাবে খুন করেন না। আমি সম্মান করি ছাত্রলীগের অনেক সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে। যারা নীরবে অশ্রু বিসর্জন দেন নবাগত বহিরাগত অথবা কোনো দোকানদারদের কাছে। তবু তারা বদল হন না। নিজেকে টিকিয়ে রাখেন আদর্শিক ধারায়। অথচ তাদের কান্না কেউই দেখে না। সবাই হিসাব মেলায় যার যার। এখন অবশ্য কারও কিছু করারও নেই। কারণ দলীয় মনোনয়নে একসময়ে নেতাদের বাড়িতে ভিড় ছিল। প্রভাবশালী সিনিয়র নেতারা মনোনয়ন বোর্ডে নিজের অনুসারীদের জন্য লড়তেন। এখন সেই যুগ নেই। এখনকার সবকিছুর হিসাব-নিকাশ আলাদা। বিশেষ করে সরকারি দলের মনোনয়ন হয় বিভিন্ন সংস্থার জরিপ নিয়ে। নানা রকম হিসাব নিয়ে। জোট-মহাজোটের লড়াই নিয়ে। এই লড়াইয়ে কে হারল, কে বাঁচল কী যায় আসে! ক্ষমতার রাজনীতি বড়ই কঠিন খেলা। প্রিয় আলাহউদ্দিন নাসিম, আপনি সর্বশেষ ফেসবুকের লেখায় বলেছেন, বাকি জীবন শেখ হাসিনার জন্যই কাজ করে যাবেন। আহ্বানও রেখেছেন কর্মীদের কাছে নৌকার জন্য কাজ করার। আপনি একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারে জম্ম  নিয়েছেন। সমাজে এখন নিজের একটা আলাদা স্বকীয়তা নিয়ে চলছেন। আপনার এই ইতিবাচক আদর্শিক চিন্তার আগামীর প্রতি সম্মান থাকল। আপনি এগিয়ে যান। শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শেষ ঠিকানা। এই ঠিকানার সঙ্গেই থাকুন। আপনার আগামী আরও উজ্জ্বল হবে। কারণ অনেক মানুষের দোয়া আছে আপনার সঙ্গে। সবাই পারে না। আপনি পারবেন। এখন চারদিকে তাকালে শুধুই দেখি অনেক মানুষের চেহারা বদল হয়ে যাচ্ছে। সরকারি কি বিরোধী দল হাইব্রিড ও নবাগতরা সবখানে এমন। সরকারি দলের সি গ্রেডের কারও কারও আচরণে ত্যাগী কর্মীদের মেজাজ খারাপ হয়। একই চিত্র বিএনপিতেও। তাদের অনেক সমর্থকেরও ভাব বেড়ে গেছে। সবকিছু অবাক করার মতো। এখন এক ধরনের অস্বস্তি নিয়েই সমাজে চলি। মাঝে মাঝে মনে হয়, দুদিনের দুনিয়া। কেন এত লড়াই। কেন এত বিরোধ। আসলে রাজনীতির কোনো সরল মেরুকরণ নেই। অদ্ভুত ধোঁয়াশা চারপাশে। হৃদয় নিংড়ানো কষ্ট আর ত্যাগের বিনিময়ে একজন রাজনৈতিক কর্মী বেড়ে ওঠে। ক্ষমতার রাজনীতিতে সেই ত্যাগ-তিতিক্ষা মূল্যহীন। বাস্তবতার কাঠিন্য সবাইকে মানতে হবে। রাজনীতির বীজগণিতে আপন-পর বলে কিছু নেই। আজ-কাল বলেও কিছু থাকে না। সময়টাই বড় হয়ে সামনে আসে। বিএনপির এক নেতা সেদিন ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন, পীর হাবিব ও আমার সামনে। বললেন, অনেক কষ্ট করেছি দলটির জন্য। আশির দশকে ছাত্ররাজনীতি করে জেল-জুলুম সহ্য করেছি। এখনো প্রতিকূলতার মাঝে ঝুঁকি নিয়ে রাজনীতি করি। কিন্তু এবারও আমাকে ত্যাগ করতে হবে? আর কত ত্যাগ করব? আমাদেরও বয়স হচ্ছে। অতীত আর বর্তমানের অবদান এখানে কিছুই নয়। শুধু এই নেতা নন আরও অনেকের দীর্ঘশ্বাস দেখতে পাচ্ছি। মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল চেষ্টা করছেন নিজেকে সামলাতে। কামরুজ্জামান রতন আছেন শুধুই অপেক্ষায়। আবদুল আউয়াল মিন্টুর বুকভরা অভিমান দেখি মনোনয়ন না নেওয়া থেকে। আসলে এই যুগের রাজনীতিতে তিল তিল শ্রম, মেধা, ঘাম মুহূর্তেই কুয়াশা হয়ে উড়ে যায়। চারপাশে থাকে শুধু নতুন নাবিকদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের শব্দ। পুরনোরা খসে পড়েন ক্ষমতার লড়াইয়ে নতুনদের কাছে। জীবনটাই এমন। এই জীবনে বেঁচে থাকাই যেন এক আনন্দ। সেই দুঃখ-আনন্দ দুটোই কাছ থেকে দেখেছি। অনেক দিন আগে এক মধ্যরাতে কুমিল্লা থেকে ঢাকা ফিরছিলাম। হঠাৎ আমার মাঝে বেজে ওঠে মৃত্যুচিন্তা। আকাশভরা পূর্ণিমা ছিল সেদিন। মৃত্যুভাবনার রাতেই দুই দফা দুর্ঘটনায় পড়লাম। বেঁচেও যাই। আরেকবার ২০০১ সালের শুরুতে বেলজিয়াম থেকে হল্যান্ড হয়ে সড়কপথে লন্ডন ফিরছিলাম। গাড়ি চালাচ্ছিলেন লন্ডনের আওয়ামী লীগ নেতা কয়েস ভাই। চমৎকার মানুষ। আমার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও অবজারভার পত্রিকার সাংবাদিক আশরাফ ভাই। হাইওয়েতে ভয়াবহ দুর্ঘটনায়ও পড়ি আমরা। বেঁচে যাই। আর বেঁচে থাকার আনন্দ নিয়ে চিৎকার করে হাসতে থাকেন কয়েস ভাই। বিস্ময় নিয়ে সবকিছু দেখছি আমি আর সিরাজ ভাই। কয়েস ভাইয়ের হাসিতে ক্ষুব্ধ আশরাফ ভাই। তিনি বললেন, এটা কী! মৃত্যু থেকে বাঁচলাম আর তিনি শুধু হাসছেন! জীবন এমনই। আরেকবার ’৯২ সালে নাঙ্গলকোট যাচ্ছি আওয়ামী লীগ নেতা বগুড়ার আবদুল মান্নান এমপিকে নিয়ে। সঙ্গে নাঙ্গলকোটের শাজাহান মজুমদার। কুমিল্লা বিশ্বরোড পার হয়ে নোয়াখালী সড়কে ওঠার পর দুর্ঘটনায় পড়েছিলাম। আল্লাহর রহমতে রক্ষা পাই। তাই মাঝে মাঝে মনে হয়, এই জীবনে বেঁচে থাকার অদ্ভুত একটা আনন্দ আছে। সেই আনন্দটুকু অনুভব করতে হয়। কখনো কখনো সময়ের ঘড়ি আমাদের অজানা অন্ধকারে নিয়ে যায়, আবার ফিরিয়ে আনে আলোর ঝলকানিতে। সবকিছুই নিয়তির খেলা। আলো-আঁধারির এই খেলায় কত কিছুই হারিয়ে যায় জীবন থেকে। ছোটবেলায় যে খেলনার জন্য কাঁদতাম, কিছু দিন পর মনে হতো এই খেলনার কোনো দরকারই নেই। নতুন কিছু চাই। জগতের সবকিছু অদ্ভুত! অদ্ভুত এই জীবনের আঁধারে আমরা বেঁচে থাকি সকালের সুন্দর আলোকিত সময়টুকুর জন্য। কবিগুরু বলেছেন, ‘হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে/হেমন্তিকা করল গোপন আঁচল ঘিরে/ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো/দীপালিকায় জ্বালাও আলো/জ্বালাও আলো, আপন আলো, সাজাও আলোয়...’ আলো জ্বলবে বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে গেলে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটুকু টিকে থাকলে। রাজনীতিতে সত্যিকারের কর্মীদের মূল্যায়ন মেধা, মনন, যোগ্যতা দক্ষতার ভিত্তিতে হলে।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

সর্বশেষ খবর