বৃহস্পতিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইসলামে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব

ড. মাওলানা মো. মোরশেদ আলম সালেহী

ইসলামে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব

আল্লাহর এক বিশেষ নিয়ামত ও পরিপূর্ণ জীবন-ব্যবস্হার নাম ইসলাম। এতে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও আত্নর্জাতিক পরিমণ্ডলের যাবতীয় বিষয়ের সমাধানে হিকমতপূর্ণ বিধানের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এটি মানুষের জন্য যা কল্যাণকর সে বিষয় বৈধকরত সবিশেষ গুরুত্বারোপ এবং যাবতীয় অকল্যাণ ও তিকর বিষয় থেকে মানবজাতিকে সতর্ক করেছে। আল্লাহর নির্ধারিত ফরজ ইবাদত সম্পন্ন করার পর জীবিকা অন্বেষণে জমিনে ছড়িয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের শ্রমলব্ধ উপার্জনকে সর্বোত্তম বলে আখ্যায়িত করেছেন। সেই লক্ষ্যে ইসলাম হালাল উপার্জনে অপরিসীম গুরুত্ব প্রদান করেছে। মানুষ কীভাবে উপার্জন করবে, কোন পন্থায় তা ব্যয় করবে ও উপার্জনের ক্ষেত্রে যাবতীয় অর্জনীয় ও বর্জনীয় গুণাবলি সম্পর্কে এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা বিদ্যমান। তাই তো ব্যক্তির উপার্জিত সম্পদে আল্লাহ জাকাত ফরজ করেছেন, যেন সম্পদ একশ্রেণির লোকের মাঝে সীমাবদ্ধ না থাকে। নামাজের পাশাপাশি জাকাতের কথা ৮২ বার কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ নামাজ সমাপনান্তে জীবিকা নির্বাহের জন্য গুর"ত্বারোপ করেছেন ‘নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করতে হবে, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ সূরা জুমা, আয়াত ১০। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে কুরতুবিতে ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, যখন নামাজ শেষ হয়ে যাবে তখন তোমরা ব্যবসায়িক কাজকর্ম ও অন্যান্য পার্থিব প্রয়োজন পূরণে বেরিয়ে পড়। ব্যক্তি-জীবনে স্বাবলম্বী হওয়ার ব্যাপারে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনিভাবে উৎসাহিত করেছেন যে ভিাব"ত্তিকে তিনি নিন্দা করেছেন। এ মর্মে জুবাইর ইবনে আউয়াম (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ তার রশি নিয়ে চলে যাক, পিঠে কাঠের বোঝা বহন করে এনে বিক্রি করুক এবং তার চেহারাকে আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচিয়ে রাখুক। এটা তার জন্য মানুষের কাছে ভিক্ষা করা, চাই তাকে দান করুক বা না করুক, তার চেয়ে উত্তম।’ মুসলিম। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্বদা মানুষের কাছে চেয়ে বেড়ায় সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় আগমন করবে, তার মুখম-লে এক টুকরো গোশতও থাকবে না।’ মুসলিম। ইসলাম নিজ হাতে উপার্জন করাকে সর্বোত্তম বলে আখ্যা দিয়েছে। এ মর্মে হজরত রাফে ইবনে খাদিজ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, সর্বোত্তম উপার্জন কোনটি। জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তির নিজস্ব শ্রমলব্ধ উপার্জন ও সততার ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয়।’ মুসনাদে আহমাদ। সব নবী-রসুলের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা নিজ হাতে কর্ম সম্পাদনকে অধিক পছন্দ করতেন। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর প্রাথমিক জীবনে ছাগল চরানো ও পরে খাদিজা (রা.)-এর ব্যবসায়িক দায়িত্ব পালনের বর্ণনা পাওয়া যায়, যা নিজ হাতে জীবিকা নির্বাহে উৎকৃষ্ট প্রমাণ বহন করে। হালাল উপায়ে উপার্জন করা ইসলামে মৌলিক ইবাদত, যা ফরজ কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ মর্মে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ফরজ আদায়ের পর হালাল পন্থায় উপার্জনও ফরজ।’ বায়হাকি। উপার্জনের ক্ষেত্রে ব্যবসা-বাণিজ্য সবচেয়ে বড় মাধ্যম। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি একটি মহৎ পেশা। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন  হারাম।’ সূরা বাকারা, আয়াত ২৭৫। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘তোমরা ব্যবসা-বাণিজ্য কর, কারণ তাতেই নিহিত রয়েছে নয় দশমাংশ জীবিকা।’ এহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন। তা ছাড়া সততা, বিশ্বস্ততা, ন্যায়পরায়ণতা, ধোঁকামুক্ত, কল্যাণমুখী মানসিকতাসম্পন্ন ব্যবসায়ীদের প্রশংসায় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ব্যবসায়ী পরকালে নবী, সিদ্দিকিন ও আল্লাহর পথে জীবন বিসর্জনকারী শহীদদের সঙ্গী হবে।’ তিরমিজি। ব্যবসা-বাণিজ্যর ক্ষেত্রে ইসলাম যেসব মূলনীতি দিয়েছে তা হলো ধোঁকা ও প্রতারণামুক্ত, মিথ্যার আশ্রয়বিহীন, ভালো পণ্যের সঙ্গে খারাপ পণ্যের মিশ্রণ না করা, মজুদদারি চিন্তা-চেতনা পোষণ না করা, ওজনে হেরফের না করা, সর্বোপরি যাবতীয় প্রতারণা থেকে বিরত থাকা।

লেখক : খতিব, শাহজাদপুর জামে মসজিদ, গুলশান, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর