শনিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

গো-প্রেমিকদের পরাজয়

ভারতের পাঁচ রাজ্যে মনুষ্যত্বের জয়

মানুষের বদলে গোরক্ষায় নিবেদিতপ্রাণ ভূমিকা পালন করেছে ভারতের ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি। সাধারণ মানুষের ধর্মভীরুতাকে রাজনৈতিক মূলধন হিসেবে ব্যবহার করে বাজিমাত করতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শে বলীয়ান ভারতের মানুষকে দীর্ঘদিন ধোঁকা দেওয়া যে সম্ভব নয়, তা প্রমাণিত হয়েছে সদ্যসমাপ্ত পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে। এ নির্বাচনে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে জয় হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতার। বিশেষত রাজস্থানের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে গোহারা হারতে হয়েছে। রাজ্যের ভোটাররা মানুষের চেয়ে গো-দেবতার সুরক্ষায় যারা যুদ্ধংদেহী তাদের নির্বাচনে বেছে নেওয়াকে যুক্তিযুক্ত মনে করেনি। নিজেদের মনুষ্য চেতনা স্পষ্ট করতেই তারা ভোট দিয়েছে বিজেপির গো-প্রেমিক প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। ফলে অন্য প্রার্থীদের পাশাপাশি রাজস্থানের বিধানসভা নির্বাচনে ভারতের নিবেদিতপ্রাণ ‘গরুমন্ত্রী’ ওতারাম দেবাসি পরাজিত হয়েছেন। সবসময় মাথায় লাল পাগড়ি ও সাদা ধুতি পরিহিত ওতারাম রাজ্যের সিরোহি আসনের নির্বাচনে ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র এক প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় গোরক্ষাকে কেন্দ্র করে রাজস্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ব্যাপকভাবে। বিশেষত সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে সংখ্যালঘুরা। ভারতের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপির পরাজয়ে কংগ্রেস বা দলবিশেষের জয় হয়েছে ভাবলে ভুল হবে। বরং নির্বাচনে মানবতার জয় হয়েছে। সব মানুষের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ভারতের যে সুনাম তা ফিরিয়ে আনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু, মাওলানা আবুল কালাম আজাদের মতো মহান মানবতাবাদী নেতারা। তারা গরু বা কোনো পশুকে নয়, মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তার বিষয়ে যতœবান ছিলেন। বিজেপির উত্থান সে চেতনার ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। পাঁচ রাজ্যে গোরুপন্থিদের বিরুদ্ধে মনুষ্য-চেতনার ধারকদের জয় প্রকারান্তরে ভারতের স্বাধীনতার চেতনাকে জনমানসে ফিরিয়ে এনেছে; যা অবশ্যই অভিনন্দনযোগ্য।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর