শনিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাধীনতার গুরুত্ব

মুফতি মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহিল বাকি : পেশ ইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতিব

আল্লাহ মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্য ও চাহিদার উপযোগী ভূখণ্ডে তার জন্মের ব্যবস্থা করেছেন বলে আমরা মানুষ সারা বিশ্বে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসী হয়েছি। যে যেই অঞ্চলের অধিবাসী তাকে সেই অঞ্চলে স্বাধীনভাবে বিচরণ করার লক্ষ্যে প্রাকৃতিক নিয়মে সে অঞ্চল তাঁকে স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে দান করা হয়েছে। যতক্ষণ একে অন্যকে অত্যাচার করার মাধ্যমে সে স্বভাবজাত স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়া না হয় ততক্ষণ সে অঞ্চলটি তার জন্য স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের স্বাধীনতার প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো নিরাপত্তা। সেজন্য হজরত ইবরাহিম (আ.) যখন মক্কাকে নিজ নগর হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন তখন সেই ভূখণ্ডের জন্য প্রথম যে দোয়াটি করেছিলেন তা হলো নিরাপত্তার দোয়া। এ দোয়া সম্পর্কে উল্লেখ করতে গিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘স্মরণ কর সেই সময়ের কথা যখন ইবরাহিম বলেছিল “হে আমার প্রতিপালক! এই নগরীর তুমি নিরাপত্তা দান কর”।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১২৬। এই নিরাপত্তার অর্থ ব্যাপক। একটি অঞ্চলের চারদিকে শুধু সেনা সদস্যদের পাহারায় রত থাকার নামই নিরাপত্তা নয় বরং একই অঞ্চলে বসবাসকারী প্রত্যেক পক্ষ অন্য পক্ষের কাছে নিরাপদ থাকার নামই নিরাপত্তা, অর্থাৎ সন্তান মা-বাবার কাছে, মা-বাবা সন্তানের কাছে, স্ত্রী স্বামীর কাছে, স্বামী স্ত্রীর কাছে, ছাত্র শিক্ষকের কাছে, শিক্ষক ছাত্রের কাছে, শ্রমিক মালিকের কাছে, মালিক শ্রমিকের কাছে, শাসক শাসিতের কাছে, শাসিতরা শাসকের কাছে নিরাপদ থাকাই মানে নিরাপত্তা। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ঝুঁঁকি মনে করলে তখন এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ঘায়েল করার মিশনে লিপ্ত হয়ে যায়, অন্যদিকে এই ফাঁকে আল্লাহ-প্রদত্ত নিয়ামত স্বাধীনতা লুণ্ঠিত হয়ে যায়। এই স্বাধীনতা একটি বড় নিয়ামত। এই স্বাধীনতার সুরক্ষার জন্য দুটি বিষয় খুবই জরুরি, একটি হলো সেই ভূখণ্ডের জন্য একটি সামগ্রিক ইউনিভার্সেল সংস্কৃতি, তাহজিব-তামাদ্দুন যার ভিত্তিতে ওই অঞ্চলে ঐক্য গড়ে উঠবে, যে ঐক্যের ভিত্তিতে সে অঞ্চলের স্বাধীনতা কোনো ধরনের আক্রমণের শিকার হলে তা প্রতিহত করা হবে। যেমন আমেরিকার কিছু মানুষ ধর্ম পালন করে অথচ তাদের মুদ্রায় লেখা আছে আমরা ‘গড’কে বিশ্বাস করি। অর্থাৎ আমেরিকার খ্রিস্টান ও ইহুদি জাতি ধর্ম পালন করুক বা না-ই করুক আমেরিকার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্বার্থে ঐক্যের লক্ষ্যে ইউনিভার্সেল সংস্কৃতি হিসেবে ধর্মকে গ্রহণ করা হয়েছে। স্বাধীনতার সুরক্ষার জন্য দ্বিতীয় বিষয় যেটি খুবই জরুরি তা হলো, পারস্পরিক জুলুম পরিহার করা, আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আমি এসব জনপদ ধ্বংস করে দিয়েছি যখন তারা পারস্পরিক জুলুম শুরু করে দিয়েছে।’ সূরা ১৮, আয়াত-৫৯। মানবীয় দুর্বলতার সুযোগে পারস্পরিক জুলুম যখন প্রতিশোধস্পৃহা জাগিয়ে তোলে নিজের পায়ে কুড়াল মেরে হলেও শত্রুদের সঙ্গে আঁতাত করে হলেও তখন প্রতিশোধ নেওয়ায় মুখ্য হয়ে যায়। এই দুঃসময়ে ঐক্য বিনষ্ট হয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব লুণ্ঠিত হয়ে যায়। এজন্যই রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের পর মক্কার অধিবাসীদের মধ্যে একে অন্যকে  ঝুঁঁকি মনে করার প্রবণতা সৃষ্টি হওয়া থেকে দূরে রাখা এবং প্রতিশোধস্পৃহা দমন করার নিমিত্ত নিরাপত্তাবোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে স্পষ্ট ঘোষণা দেন ‘আজকে কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।’ অর্থাৎ অতীতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনৈক্য সৃষ্টি করে এই ভূখণ্ডের ক্ষতিসাধন ও অর্জিত স্বাধীনতার ক্ষতি হয় সে রকম কোনো কাজ করা যাবে না।

সর্বশেষ খবর