বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আল কোরআনের মর্যাদা অপরিসীম

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

আল কোরআনের মর্যাদা অপরিসীম

কোরআন আল্লাহর বাণী। কোরআন এমন একটি কিতাব যা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অবতীর্ণ এবং যা সন্দেহমুক্ত প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকভাবে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে।

আল কোরআন হচ্ছে বিশ্ব পালনকর্তা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত মানবজাতির জন্য এক মহাপাথেয়। এ কিতাব ইহকালের শান্তি ও পরকালের মুক্তি নিশ্চিত এবং মানুষকে সত্যের পথ প্রদর্শন করে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুপস্থিতিতে কোরআনই হলো মানবজাতির দিকনির্দেশনার একমাত্র সম্বল। কোরআনই হলো রসুলের পবিত্র জীবনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি।

সৃষ্টিকুলের ওপর যেমন স্রষ্টার সম্মান ও মর্যাদা অপরিসীম, তেমনি মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর বাণী কোরআনের মর্যাদা দুনিয়ার সব বাণীর ওপর শ্রেষ্ঠত্বের বিবেচনায় প্রতিষ্ঠিত। মানুষের মুখ থেকে যা উচ্চারিত হয়, তার মধ্যে কোরআন পাঠ সর্বাধিক উত্তম। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের মাঝে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজে কোরআন শিক্ষা করে ও অন্যকে তা শিক্ষা দেয়।’ বুখারি। কোরআন পাঠে রয়েছে অশেষ নেকি (পুণ্য)। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআনের একটি অক্ষর পড়বে, সে একটি নেকি পাবে। আর একটি নেকি ১০টি নেকির সমপরিমাণ।’ তিরমিজি।

ইবনে রজব (রহ.) বলেন, প্রতিটি নেক কাজেরই সওয়াব ১০ গুণ বৃদ্ধি হয়। এর প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহর বাণী ‘যে একটি নেক কাজ করবে, তার জন্য রয়েছে অনুরূপ ১০ গুণ প্রতিদান।’ সূরা আনয়াম, আয়াত ১৬০। আর আল্লাহ যাকে চান তাকে ১০ গুণেরও বেশি প্রতিদান দেবেন। এই বৃদ্ধি ৭০ থেকে ৭০০ বা আরও অধিক গুণে হয়। এটা হচ্ছে আল্লাহর অনুগ্রহ এবং অন্তরের বিনয়সহ গবেষণা ও বুঝে পাঠ করার কারণে।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করবে এবং তা মুখস্থ করবে (এবং বিধিবিধানের) প্রতি যতœবান হবে, সে উচ্চ সম্মানিত ফেরেশতাদের সঙ্গে অবস্থান করবে। আর যে ব্যক্তি কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও কোরআন পাঠ করবে এবং তার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখবে সে দ্বিগুণ সওয়াবের অধিকারী হবে।’ বুখারি, মুসলিম। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কিয়ামত দিবসে কোরআন অধ্যয়নকারীকে বলা হবে, কোরআন পড় এবং ওপরে ওঠো। যেভাবে দুনিয়ায় তারতিলের সঙ্গে কোরআন পড়তে সেভাবে পড়। যেখানে তোমার আয়াত পাঠ করা শেষ হবে, জান্নাতের সেই সুউচ্চ স্থানে হবে তোমার বাসস্থান।’ তিরমিজি। আবু হুরায়রা ও আবু সাইদ (রা) থেকে বর্ণিত। তারা বলেন, রসুল সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো সম্প্রদায় যখন কোথাও বসে জিকির  (কোরআনের আলোচনা) করে তখন ফেরেশতারা তাদের ঘিরে রাখে, রহমত তাদের ঢেকে রাখে, তাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হয় এবং আল্লাহ তার কাছে যারা আছে (অর্থাৎ ফেরেশতা) তাদের মাঝে এদের কথা উল্লেখ করে তাদের নিয়ে গর্ববোধ করেন।’ মুসলিম।

হাদিসে এসেছে, জান্নাতের সিঁড়ির সংখ্যা হচ্ছে কোরআনের আয়াতের সংখ্যা পরিমাণ। কোরআনের পাঠককে বলা হবে, তুমি যতটুকু কোরআন পড়েছ ততটি সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠো। যে ব্যক্তি সম্পূর্ণ কোরআন পড়েছে, সে আখেরাতে জান্নাতের সর্বশেষ সিঁড়িতে উঠে যাবে। যে ব্যক্তি কোরআনের কিছু অংশ পড়েছে সে ততটুকু ওপরে উঠবে। অর্থাৎ যেখানে তার পড়া শেষ হবে সেখানে তার সওয়াবের শেষ সীমানা হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আল কোরআন পাঠ করার, অন্যকে কোরআন শিক্ষা দেওয়ার এবং কোরআনের শিক্ষা আমল করার তাওফিক দিন।

 

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর