রবিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

দোয়ার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

দোয়ার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব

কোনো প্রয়োজনে আল্লাহকে ডাক দেওয়া ও তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়ার নাম হলো দোয়া। আল্লাহর কাছে চাইলে তিনি খুব খুশি হন, বান্দা আল্লাহর কাছে যত বেশি চায় তত বেশি তিনি খুশি হন। আর না চাইলে নারাজ হন, যেমনটি কবি খুব সুন্দর বলেছেন, ‘সব সময় আল্লাহতায়ালা বান্দাকে দিতে চান, আর যে না চায় তার ওপর আল্লাহ নারাজ হয়ে যান।’ আল্লাহর বান্দা একমাত্র আল্লাহর কাছেই চাইবে, এটাই ইসলামের বিধান। তাই কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে আল্লাহর কাছেই দোয়া করার মাধ্যমে চাইতে হবে এবং নিজের তামাম নেক হাজাত আল্লাহর থেকে চেয়ে নিতে হবে। ‘আল্লাহই আমাদের রব, আল্লাহই আমাদের সব’- এ কথাটির ওপর শতভাগ ইয়াকিন ও বিশ্বাস রাখতে হবে। দোয়া সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো আমি সাড়া দেব। যারা আমার ইবাদতে অহংকার করে, তারা অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে, লাঞ্ছিত হবে।’ সূরা আল মুমিন, আয়াত ৬০।  আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,  ‘উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য আল্লাহ এই শাশ্বত আদেশ ও ওয়াদাকে ব্যাপক করে দিয়েছেন অর্থাৎ উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্য থেকে যে ব্যক্তিই শর্ত ও আদব রক্ষা করে দোয়া করবে তিনি তার দোয়া কবুল করবেন; যা উম্মতে মুহাম্মদীর এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য।’

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যার জন্য দোয়ার দ্বার খুলে দেওয়া হয়, তার জন্য রহমতের দ্বার খুলে দেওয়া  হয়।’ তিরমিজি। অন্য হাদিসে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক পছন্দনীয় অন্য কিছু নেই।’ তিরমিজি। তিনি আরও বলেন, ‘দোয়া ইবাদতের মগজ, দোয়া মুমিনের হাতিয়ার, দোয়া দীনের খুঁটি, দোয়া আসমান-জমিনের নূর।’ হাকেম। অন্য হাদিসে এসেছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর কাছে রহমতের জন্য দোয়া কর। কেননা তিনি (বান্দার) অনুনয়-বিনয় ও দোয়াকে খুবই পছন্দ করেন। অভাব-অনটনের সময় সচ্ছলতার জন্য দোয়া করে রহমত পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করা অনেক বড় ইবাদত।’ তিরমিজি।

আরেক হাদিসে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা দোয়া করতে অপারগ হ’য়ো না। কেননা দোয়াসহ কেউ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় না।’ ইবনে হিব্বান। সুতরাং পরকালের আরাম-আয়েশের জন্য; সব অভাব-অনটন, রোগব্যাধি, চিন্তা-ভাবনা, দুঃখ-দুর্দশা ও বিপদ-আপদে একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। কেননা একমাত্র তিনিই তাঁর অপার মহিমায় দুনিয়া- আখিরাতের সব অবস্থা পরিবর্তন করতে পারেন। একবার সাহাবায়ে কিরাম (রা.) রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আরজ করলেন, আমরা আল্লাহর কাছে কীসের দোয়া করব? রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আফিয়াতের’ দোয়া কর। কেননা নিরাপত্তা চাওয়ার চেয়ে কোনো উত্তম দোয়া নেই। ‘আফিয়াত’ অর্থাৎ ‘নিরাপত্তা’ শব্দটি অত্যন্ত ব্যাপক অর্থবহ শব্দ। তাই সবসময় আমরা আফিয়াতের দোয়া করব এবং সেইসঙ্গে আল্লাহর কাছে দোয়া কবুলের প্রত্যাশা রাখব। কারণ দোয়া করে নিরাশ হতে নেই। বান্দা আল্লাহর কাছে যে দোয়া করে, তা-ই কবুল হয়। তবে দোয়াকারীর ফায়দার জন্য কখনো দোয়া দ্রুত কবুল হয়, আবার কখনো দেরিতে কবুল হয়। কখনো দোয়ার ফলাফল দুনিয়ায় পাওয়া যায় আবার কখনো পরকালে। অর্থাৎ কোনো দোয়াই কখনো বিফল হয় না। এ প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘বান্দা আল্লাহর কাছে যে দোয়াই করে, আল্লাহ তা কবুল করেন; যদি তা কোনো গোনাহ বা সম্পর্কচ্ছেদের দোয়া না হয়।’ প্রিয় পাঠক! দোয়া এমন এক গুরুত্বপূর্ণ আমল যা কবুলের জন্য কোনো সময়কে শর্ত সাব্যস্ত করা হয়নি। বরং সবসময় বান্দা আল্লাহকে ডাকবে, তাঁর কাছেই একমাত্র সাহায্য চাইবে। তিনি কবুল করবেন। তবে কিছু কিছু সময় ও স্থান এমন আছে যেখানে দোয়া দ্রুত কবুল হয়। সফরে দোয়া করা, রুগ্নাবস্থায় দোয়া করা, কাবা শরিফে দোয়া করা, মিজাবে রহমতে দোয়া করা, আরাফার ময়দানে খোলা আকাশের নিচে দোয়া করা- এ ধরনের আরও অনেক সময় ও স্থান আছে যেখানে  দোয়া করলে তাড়াতাড়ি কবুল হওয়ার আশা করা যায়। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে সব দোয়া কবুল হওয়ার জন্য হালাল রিজিক ও হালাল তরিকার ওপর চলতে হবে। তাহলেই দোয়া কবুল হবে। এ সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কোনো কোনো লোক খুব সফর করে এবং আকাশের দিকে হাত তুলে ইয়া রব, ইয়া রব বলে দোয়া করে; কিন্তু তাদের পানাহার ও পোশাক-পরিচ্ছদ হারাম পন্থায় অর্জিত। এ অবস্থায় তাদের দোয়া কীভাবে কবুল হবে?’ মুসলিম। সুতরাং আমরা সবাই সর্বদা হক-হালাল পথে চলব, যেন আমাদের দোয়া কবুল হওয়ার যোগ্য হয়। সেইসঙ্গে আমাদের প্রয়োজনগুলো আল্লাহর সামনে কায়মনে পেশ করে দোয়ার দ্বারা সেগুলো সমাধান করতে সচেষ্ট হব। আল্লাহ আমাদের হারাম থেকে বেঁচে থাকার এবং সব সমস্যায় তাঁর শাহি দরবারে সাহায্য চেয়ে দোয়া করার তাওফিক দান করুন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির খতিব ও টিভি উপস্থাপক।

 

 

সর্বশেষ খবর