মঙ্গলবার, ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

নতুন বছরের প্রত্যাশা

আফতাব চৌধুরী

আরও একটু সৎ হব, সৎ পথে থাকব, মিথ্যা কথা কম বলব, কাজে ফাঁকি দেব না। অফিস-আদালতে গিয়ে কিছু টাকা গছিয়ে দিয়ে নিজের কাজটি তাড়াতাড়ি করিয়ে নেওয়ার ফন্দি-ফিকির খুঁজব না। যদি শিক্ষক হই স্কুলটিকে ভালোবাসব। ছাত্রছাত্রীদের নিজের ছেলেমেয়ে মনে করে পড়াব। তাদের বলব মানুষ হওয়ার কথা। যদি ডাক্তার হই আরও একটু সহানুভূতি দিয়ে রোগীর কথা শোনার চেষ্টা করব। চিকিৎসায় যত্ন নেব। যদি ইঞ্জিনিয়ার হই কর্মক্ষেত্রে অন্যায়ের সঙ্গে বোঝাপড়া করার আগে দুই দণ্ড ভাবব। যদি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালাই তবে কথা ও কাজে মিল রাখব। অতিরিক্ত মুনাফার জন্য সর্বদা ব্যস্ত থাকব না। যদি প্রশাসনিক স্তরের কেউ হই তবে প্রশাসনকে স্বচ্ছ ও সুদৃঢ় রাখার চেষ্টা করব। এক কথায়, নতুন বছরের শুরুতে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে নিজেরা আগে একটুখানি সজাগ হই, সতর্ক থাকি। এভাবে নিজেকে খানিকটা পাল্টে নিতে পারি কিনা এ পরীক্ষা নিজের কাছে একেবারে নিজের।

একটি বিষয় খেয়াল করলে দেখা যায়, ঘুষ দেওয়া ও নেওয়া, কালোবাজারি, স্বজনপোষণ, দুর্নীতি, নানা ধরনের কারচুপি, উঠতে বসতে মিথ্যাচার আজ আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে। প্রতিদিনের কাজ যেমন- বিছানা ছেড়ে ওঠা, ভাত খাওয়া, অফিস-আদালত-ব্যবসা কেন্দ্রে যাওয়ার মতো এগুলো আমাদের নিত্যসঙ্গী। যে বা যেসব মানুষ এগুলো করে না, নানা ধরনের লোভের মধ্যে পড়েও সততার পরিচয় দেয়, তারা রীতিমতো ‘খবর’ হয়ে যায় অন্যদের কাছে। একটু আড় চোখে সবাই তাকে বা তাদের দেখে। কেউ বলে খ্যাপা। কেউবা বলে মান ও হুঁশ একে বলে মানুষ। তবে তাদের সংখ্যা খুবই কম। বাকিদের দেখলে হাল্লারাজার কারাগারে বন্দী গুপী গাইনের সেই আশ্চর্য গান মনে পড়ে, ‘যার ভাণ্ডারে রাশি রাশি সোনাদানা ঠাসাঠাসি তারও মনে সুখ নাই।’ প্রায় সবাই সুখ-শান্তি ভোগের পেছনে ছুটতে গিয়ে ক্রমে হারিয়ে ফেলছি সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে আমাদের কিছু অবশ্যই করণীয় দিকের কথা। হাতের যন্ত্র দিয়ে ওপাশে শুধু ছোট ছোট মিথ্যা বলে যাচ্ছি। কাছেই শিশু সন্তানটি বড় বড় চোখে তাকাচ্ছে। ইশারায় চুপ থাকতে বলছি। এবারে সে যখন বড় হবে কোনো মিথ্যা কথায় আমাকে ভোলাবে এর কোনো খোঁজখবর নিচ্ছি না এমন প্রশ্ন সভয়ে এড়িয়ে চলেছি।

দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি তালিকা তৈরি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি সংস্থা। তাদের প্রধান কার্যালয় বার্লিনে। প্রায় ১৬০টি দেশের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে তারা। সে তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান বেশি ওপরে। সংস্থাটির বিচারে বাংলাদেশের এ অবস্থান থেকে স্পষ্ট কত দুর্নীতিগ্রস্ত এ দেশ। সংস্থার চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, বাংলাদেশের জনগণের দুর্নীতি ক্রমে বেড়ে চলেছে। ফলে বাংলাদেশের স্থান দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় কোথায় যেতে পারে, তা ভাবলে শিহরিত হতে হয়।

সেটি আমরা আরও বেশি করে বুঝতে পেরেছি বিগত কয়েকটি দিনজুড়ে। নির্বাচনে জিতলে কে কত কম দামে চাল দিতে পারবেন, কে কত রকম সুযোগ-সুবিধা করে দিতে পারবেন দেশবাসীকে, তার একটি অলিখিত প্রতিযোগিতা চলছিল যেন। বিজ্ঞহীন মানুষ এসবে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে কবে। তাই তারা আর এসব নিয়ে মাথা ঘামায়নি বরং রাজনৈতিক নেতা এবং তাদের পারিষদের মিথ্যা প্রতিশ্র“তিতে নিজেদের খুব অপমানিত বোধ করেছে। অর্থাৎ এক পক্ষের মিথ্যা আশ্বাসবাণী অন্য পক্ষকে রীতিমতো অস্তিত্বহীন করে দেয়। এটি আমাদের দেশের জননেতারা বোঝেন না, বুঝলেও দিনের পর দিন এর চর্চা করার মধ্যে নিজেদের নানাবিধ লোভের প্রত্যাশা পূরণের আশা রাখেন। নতুন বছরে আমরা যেন জননেতাদের পথ অনুসরণ না করি। আমাদের দেশের এক কবি কুসুম কুমারী দাশ কবে বলে গেছেন, ‘আপনার পায়ে দাঁড়াতে যে পারে/কোন শক্তি নাই বধিবে তাহারে/নিজ হাতে যার রয়েছে সম্মান/কোন মানী তারে করে অপমান? আমরা যেন এ কথাগুলো একটু মনে রেখে স্বাগত জানাই ২০১৯ সালকে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর