শনিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকারমের খুতবা

শোকর ও সবরের গুরুত্ব

মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম : পেশ ইমাম

শোকর ও সবর গুরুত্বপূর্ণ দুটি ইবাদত। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, সমস্ত নিয়ামতের দাতা একমাত্র আল্লাহ এবং বিপদাপদ ও দুঃখকষ্ট তারই পক্ষ থেকে আসে। সুতরাং আমাদের দায়িত্ব হলো নিয়ামত পেলে শোকর করা আর কোনো বিপদের সম্মুখীন হলে ধৈর্য ধারণ করা। কারণ, মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো কোনো নিয়ামত অর্জন হলে যেমন সে আল্লাহকে ভুলে যায় না তদ্রুপ কোনো বিপদ এলেও অস্থির হয়ে পড়ে না; বরং উভয় অবস্থায় আল্লাহর দিকেই ধাবিত হয়। সুতরাং আল্লাহ যদি আমাদের কোনো নিয়ামত দান করেন তখন আমরা আল্লাহর শোকর আদায় করব। আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা শোকর আদায় কর তাহলে তোমাদের নিয়ামত আরও বাড়িয়ে দেব আর যদি শোকর আদায় না কর তাহলে নিশ্চয় আমার শাস্তি হবে কঠোর।’ সূরা ইবরাহিম, আয়াত ৭। শোকর আমরা যেমন মৌখিকভাবে আদায় করব সেইসঙ্গে প্রতিটি নিয়ামতের যে হক রয়েছে সে হক পূরণ করাও শোকরের অন্তর্ভুক্ত। যেমন ধরুন আল্লাহ আমাদের দুটো চক্ষু দিয়েছেন। এর শোকর যেমন মৌখিকভাবে আদায় করব আল্লাহ! কত মানুষের চোখ নেই আপনি আমাকে সেই নিয়ামত দিয়ে ধন্য করেছেন এজন্য আপনার শোকর আদায় করছি আলহামদুলিল্লাহ! এটা হলো মৌখিক শোকর। আর সঙ্গে সঙ্গে চোখের হক আদায় করাও চোখের শোকর। চোখের হক হলো যা কিছু দেখতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন তা না দেখা যেমন গায়রে মাহরাম নারী (পরনারী), এটা হলো শোকরে আমলি। এমনিভাবে প্রতিটি নিয়ামতের ক্ষেত্রেই এমন করা উচিত। যেমন মৌখিক শোকর আদায় করা উচিত সঙ্গে সঙ্গে আমলি শোকরও আদায় করা উচিত। ধনসম্পদের আমলি শোকর হলো সঠিকভাবে জাকাত দেওয়া, গরিব-দুঃখীদের দান-সদকা করা। আল্লাহ আমাদের সকল নিয়ামতের যথাযথ শোকর আদায়ের তাওফিক দান করুন। আর যদি কখনো বিপদ আসে তখন আমাদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে। ধৈর্যশীলতার ফজিলত অনেক। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করতে চেষ্টা করে আল্লাহ তাকে সবরের শক্তি দান করেন। সবর অপেক্ষা সুপ্রশস্ত কল্যাণ কাউকে দেওয়া হয় না।’ মুসলিম, বুখারি। অন্য হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মুসলমান বান্দার ছোট-বড় যে কোনো পর্যায়ের কষ্ট বা বিপদাপদ আসুক না কেন বিপদ দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন। এমনকি সেই কাঁটা যা তার পায়ে বিঁধে তার কারণেও।’ বুখারি, মুসলিম। অন্য হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘সর্বাপেক্ষা বেশি বিপদাপদের সম্মুখীন হন নবীরা, তারপর নবীদের সঙ্গে যার আমলের সাদৃশ্য যত বেশি সে তত বেশি বিপদাপদের সম্মুখীন হয়। ব্যক্তিকে তার দীনদারির পরিমাণ অনুসারে বিপদগ্রস্ত করা হয়। অতএব, যার দীনদারি শক্ত তার ওপর আপতিত বিপদাপদও শক্ত আর যার দীনদারি দুর্বল হয় তার সে অনুসারেই বিপদাপদও দুর্বল হয়ে আসে। (কাজেই বিপদ দেখলে ঘাবড়াতে নেই) কারণ নেক বান্দার সঙ্গে বিপদাপদ লেগেই থাকে। একপর্যায়ে এমন হয় যে, সে ভূপৃষ্ঠের ওপর হেঁটে চলে অথচ তার আমলনামায় কোনো গুনাহ নেই।’ ইবনে মাজাহ। সুতরাং আসুন আমরা নিয়ামত পেয়ে যেমন আল্লাহর শোকর আদায় করব সঙ্গে বিপদ এলে ধৈর্য ধারণ করব। সব গুনাহের থেকে তওবা করে আল্লাহর দিকে ধাবিত হব। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর