শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

অতিথি পাখিদের রক্ষা করুন

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

অতিথি পাখিদের রক্ষা করুন

শীত এলেই দূর-দূরান্ত থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে হাজির হয় কিছু নাম না জানা পাখি। যাদের আমরা আদর করে বলি অতিথি পাখি। পৃথিবীতে প্রায় ৫ লাখ প্রজাতির পাখি আছে। এর মধ্যে অনেক প্রজাতিই বছরের নির্দিষ্ট সময় অন্য দেশে চলে যায়। আমাদের দেশের বেশির ভাগ অতিথি পাখি হিমালয় কিংবা হিমালয়ের ওপাশ থেকে আসে। মজার বিষয় হলো, শীতের দৌরাত্ম্য কমে গেলে তারা ঠিকই তাদের পুরনো ঠিকানায় চলে যেতে সক্ষম হয়। আল্লাহতায়ালাই তাদের মধ্যে এ ধরনের একটি জিপিএস সিস্টেম দিয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া তারা রাতের বেলায় তারকা ও দিনের বেলায় সূর্যের অবস্থান দেখেও দিক নির্ণয় করে। পাখির মধ্যেও আল্লাহ জ্ঞানীদের জন্য অনেক নিদর্শন রেখেছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি লক্ষ্য করে না আকাশের শূন্যগর্ভে নিয়ন্ত্রণাধীন পাখিদের প্রতি? আল্লাহই ওদের স্থির রাখেন। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য।’ সূরা নাহাল, আয়াত ৭৯।

অতিথি পাখিরা আমাদের মেহমান। তাদের নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করা আমাদের দায়িত্ব। পাখিরা আল্লাহর জিকির করে। আপনার বাড়ির আঙিনার গাছে বসে যদি সে আল্লাহর জিকির করতে পারে তাহলে তার বরকত আপনিও অনুভব করবেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি কি দেখনি যে, আসমান ও জমিনে যারা আছে তারা এবং সারিবদ্ধ হয়ে উড়ন্ত পাখিরা আল্লাহর তসবিহ পাঠ করে? প্রত্যেকেই তাঁর সালাত ও তসবিহ জানে। তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত।’ সূরা নূর, আয়াত ৪১।

আমরা অনেকে গাছের ফল কিংবা পুকুরের মাছ রক্ষার জন্য এদের তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু আমরা হয়তো জানি না যে, পাখিরা আমাদের গাছ থেকে যদি কোনো ফল খেয়ে ফেলে তবে এর বিনিময়ে আমরা সদকার সওয়াব

পাব। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে কোনো মুসলমান (ফলবান) গাছ লাগায় আর তা থেকে যা কিছু খাওয়া হবে তা তার জন্য সদকা, তা থেকে যা কিছু চুরি হবে তা তার জন্য সদকা, পাখি যা খাবে তাও তার জন্য সদকা এবং যে কেউ এর থেকে কিছু নেবে তাও তার জন্য সদকা। অর্থাৎ সে দান-খয়রাতের সওয়াব পাবে।’ মুসলিম।

সুবহানাল্লাহ! পাখিদের নিরাপত্তা দানের এত ফজিলত থাকা সত্ত্বেও আমরা কেন অতিথি পাখিদের অহেতুক হত্যা করব? তা ছাড়া এটি সরকারিভাবেও নিষিদ্ধ। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী, ‘পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি ১ লাখ টাকা জরিমানা, এক বছরের কারাদ- বা উভয় দ-। একই অপরাধ আবার করলে শাস্তি ও জরিমানা দ্বিগুণ।’ বাংলা ট্রিবিউন।

যদিও ইসলামে পাখি শিকার করা জায়েজ। কিন্তু নির্ভরযোগ্য কারণ ছাড়া এদের নিশানা বানানো জায়েজ নেই। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অহেতুক কোনো চড়–ই পাখি মেরে ফেলল, কিয়ামতের দিন পাখিটি আল্লাহর কাছে এই বলে নালিশ করবে, হে আল্লাহ! অমুক ব্যক্তি আমাকে অহেতুক হত্যা করেছে।’ নাসায়ি, ইবনে হিব্বান। এ হাদিস দ্বারা আমরা বুঝতে পারি, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া পাখি শিকার করা ঠিক নয়।

পাখি নিধন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে ‘সময়’ টিভির একটি প্রতিবেদন দেখে আঁতকে উঠি। সেখানে দেখানো হয় বিভিন্ন চরাঞ্চলে ধানের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে, কারেন্ট জাল দিয়ে পাখি নিধন করা হচ্ছে। অনেক মৃত পাখি নদীতে ভেসে আছে। জমিতে পড়ে আছে। এভাবে বিষ মিশিয়ে, কারেন্ট জালে যে পাখি শিকার করা হয়, সেগুলো তো জবাই করার আগেই মারা যায়। এ ধরনের পাখি খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে যেমন ভালো নয় তেমনি ইসলামী শরিয়তেও নিষিদ্ধ। শুধু পাখি কেন, ‘যে কোনো পশুপাখিই জবাইয়ের আগে মারা গেলে তা খাওয়া বৈধ নয়।’ ফাতওয়ায়ে শামি।

আসুন আমরা সবাই মিলে অতিথি পাখিদের রক্ষা করি। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি।

                লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক।

সর্বশেষ খবর