রবিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

মানুষের প্রকৃত বন্ধু নেক আমল

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

মানুষের প্রকৃত বন্ধু নেক আমল

পার্থিব জীবনে আমাদের অনেক বন্ধুবান্ধব থাকে। ঘরে-বাইরে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, সমাজে, কর্মক্ষেত্রে অনেক বন্ধু গড়ে ওঠে। চিন্তার বিষয় হলো, যাদের আমি বন্ধু মনে করি তারা আমাকে কত দিন মনে রাখবে? মানুষের প্রকৃত বন্ধু কে তা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়ে দিয়েছেন। হজরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘লাশের সঙ্গে (কবরের দিকে) তিন প্রকারের সঙ্গী যায়। দুই প্রকার সঙ্গী ফিরে আসে আর এক প্রকার তার সঙ্গে থেকে যায়। তার সঙ্গে যায় আত্মীয়স্বজন, কিছু মাল-সামানা (লাশ বহনের খাট ইত্যাদি) এবং তার আমল। (লাশ দাফনের পর) আত্মীয়স্বজন ও মাল-সামানা ফিরে আসে এবং আমল তার সঙ্গে থাকে।’ বুখারি, মুসলিম। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একবার রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের মধ্যে নিজের মাল অপেক্ষা নিজের ওয়ারিশদের মাল অধিক ভালোবাসে এরূপ কেউ আছে কি?’ সাহাবিরা বললেন, ‘ইয়া রসুলাল্লাহ! আমাদের মধ্যে এরূপ কেউই নেই; বরং সবাই ওয়ারিশদের মাল থেকে নিজের মালকে বেশি ভালোবাসে।’

তিনি বললেন, ‘যে (আল্লাহর পথে খরচ করে) আগাম প্রেরণ করে, তা-ই তার মাল। আর যা সে পেছনে রেখে যায়, তা তার ওয়ারিশদের মাল।’ বুখারি)। অর্থাৎ তার দান-অনুদানের নেক আমল তার সঙ্গে রয়ে যাবে আর বাকি সম্পত্তি ভাগবাঁটোয়ারা হয়ে যাবে। হজরত মুতাররিফ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, একবার আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আগমন করলাম। ওই সময় তিনি সূরা তাকাসুর পাঠ করছিলেন। তারপর তিনি বললেন, মানুষ বলে, আমার মাল আমার মাল! রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে মানব! তোমার মাল তো তা-ই, যা তুমি খেয়ে শেষ করেছ অথবা পরিধান করে ছিঁড়ে ফেলেছ; কিংবা দান-খয়রাত করে পরকালের পাথেয় জোগাড় করেছ।’ মুসলিম। হজরত আনাস (রা.) রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘কেয়ামত দিবসে আদমসন্তানকে এরূপভাবে উপস্থিত করা হবে, যেন সে একটি নিঃসহায় ছাগলছানা। অতঃপর তাকে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান করা হবে। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, আমি তোমাকে আয়ু এবং সুস্থতা দান করছিলাম, দাস-দাসী ও ধনসম্পদের অধিকারী করেছিলাম এবং আমি তোমাকে খাঁটি ধর্মস্বরূপ নিয়ামত দিয়েছিলাম। তুমি আমার সেসব নিয়ামত কী কাজে লাগিয়েছ? সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি ধনসম্পদ সঞ্চয় করেছি, ব্যবসা-বাণিজ্য দ্বারা তা বাড়িয়ে তুলেছি এবং পরিশেষে প্রথমে যে পরিমাণ ছিল, তা অপেক্ষা অধিক পরিমাণে রেখে এসেছি; সুতরাং আমাকে আবার দুনিয়ায় পাঠিয়ে দিন, আমি সেই যাবতীয় সম্পদ আপনার কাছে নিয়ে আসব। আল্লাহ তাকে বলবেন, যা কিছু আগে পাঠিয়েছ তা আমাকে দেখাও। জবাবে সে আবার বলবে, হে প্রতিপালক! আমি তা জমা করেছি, বাড়িয়ে তুলেছি এবং আগে যে পরিমাণ ছিল তা থেকে বেশি রেখে এসেছি; সুতরাং আমাকে আবার দুনিয়ায় পাঠিয়ে দিন। যাবতীয় সম্পদ নিয়ে আমি আপনার কাছে আসব। তখন প্রকাশ পাবে যে, সে এরূপ এক বান্দা, যে আখেরাতের জন্য কোনো নেক আমলই আগাম পাঠায়নি; সুতরাং তাকে তখন দোজখের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে।’ তিরমিজি।

লেখক : খতিব, সমিতিবাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর