পরিবহন খাতের চাঁদাবাজি যেন নিয়তির লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে। একশ্রেণির পরিবহন শ্রমিক, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন মহলের আশীর্বাদপুষ্টের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে চাঁদাবাজ চক্র। তাদের কাছেই জিম্মি হয়ে পড়েছেন যানবাহন চালক, মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই। সন্ত্রাসীরা রাখঢাক না রেখে সরাসরি ‘চাঁদা’ তুললেও পরিবহন শ্রমিকরা চাঁদা নেন শ্রমিককল্যাণের নামে। রাস্তা ক্লিয়ার ফি, ঘাট ও টার্মিনাল সিরিয়াল, পার্কিং ফির নামে চলে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। পরিবহন মালিকদের একাংশও জড়িত চাঁদাবাজিতে। পাড়ামহল্লার মাস্তান কিংবা পেশাদার সন্ত্রাসী হিসেবে যাদের উত্থান। একপর্যায়ে তারা জড়িয়ে পড়েছেন পরিবহন ব্যবসায়েও। সেখানে গিয়েও তারা ছাড়তে পারেননি পুরনো অভ্যাস। পেশিশক্তির জোরে এদের কেউ কেউ পরিবহন মালিক সমিতির নেতাও বনে গেছেন। তাদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ পরিবহন মালিকরা। শ্রমিক নেতা নামধারীদের চাঁদাবাজি তো প্রথাগত বিষয় হিসেবে পরিচিত। চাঁদাবাজিতে কম যান না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা পুলিশ সদস্যরা। রাজনৈতিক নেতা, সন্ত্রাসী সবারই টার্গেট থাকে পরিবহন খাত। এসব চাঁদাবাজির ধকল মেটাতে গিয়ে পরিবহন সেক্টর বেহাল অবস্থায় পতিত হয়েছে। সেখানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে পরিবহন শ্রমিক সংগঠন, মালিক সমিতি, প্রশাসনসহ সরকারের দায়িত্বশীল মহলের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি হয়ে উঠেছে। তবে সংগতভাবেই প্রশ্ন ওঠে- বিড়ালের গলায় ঘণ্টি পরাবে কে? কর্তৃপক্ষীয় নজরদারির অভাবে লাগামহীন চাঁদাবাজি পরিবহন খাতের নিয়তির লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোয় যে চাঁদাবাজি হয় তা এককথায় অবিশ্বাস্য। টার্মিনালে ঢোকার সময় যেমন চাঁদা দিতে হয় তেমন বের হওয়ার সময় গুনতে হয় টাকা। সায়েদাবাদ থেকে দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলাসমূহের অর্ধশত রুটের দুই হাজারের বেশি বাস থেকে দৈনিক আদায় হয় লাখ লাখ টাকা। পিছিয়ে নেই গাবতলী, মহাখালী বাস টার্মিনালের চাঁদাবাজরা। পণ্যবাহী ট্রাকগুলোও বেপরোয়া চাঁদাবাজির শিকার। এ ব্যাপারে এগিয়ে পুলিশ সদস্যরা। চাঁদাবাজির কারণেই নিত্যপণ্যের দামে তার অশুভ প্রতিক্রিয়া পড়ছে। পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে
আনতে চাঁদাবাজি বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে এখনই।