রবিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

মিসওয়াকের গুরুত্ব ও ফজিলত

যুবায়ের আহমাদ

মিসওয়াকের গুরুত্ব ও ফজিলত

ইসলাম পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার ধর্ম। অপবিত্রতা ও অপরিচ্ছন্নতার স্থান নেই ইসলামে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের দেহ, পরিচ্ছদ ও আত্মাকে পবিত্র করেছেন। ইসলাম পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাকে এতটাই গুরুত্ব দিয়েছে যে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন, ‘পবিত্রতা ইমানের অর্ধেক।’ মুসলিম। পবিত্রতা নামাজের অনিবার্য শর্ত। আল কোরআনে নামাজের আগে গোসল/অজুর মাধ্যমে পবিত্র হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাজে দাঁড়াতে যাও তখন তোমাদের মুখম-ল ও হাত কুনই পর্যন্ত ধুয়ে নাও এবং তোমাদের মাথা মাসেহ কর এবং তোমাদের পা টাখনু পর্যন্ত ধোও!’ সূরা মায়েদা, আয়াত ৬। এমনকি অসুস্থতা বা শরিয়তে গ্রহণযোগ্য অন্য কোনো কারণে পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্র হওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার ইসলামী পদ্ধতিগুলোর একটি হলো মিসওয়াক। মিসওয়াক পবিত্রতা ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মিসওয়াক মুখের পবিত্রতার মাধ্যম ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উপায়।’ নাসায়ি। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত মিসওয়াক করে তাঁর দাঁতগুলো পরিষ্কার রাখতেন। তাঁর দাঁতগুলো এতটাই ঝকঝকে রাখতেন যে, তিনি কথাবার্তা বললে মনে হতো যেন দাঁত থেকে আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। হুজাইফা (রা.) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘুম থেকে উঠতেন তখন মিসওয়াক করে নিতেন।’ বুখারি। মিসওয়াক করা আগের নবীদেরও সুন্নত। আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘চারটি বিষয় নবীদের সুন্নত। ১. লজ্জা করা ২. সুগন্ধি ব্যবহার করা ৩. মিসওয়াক করা ৪. বিয়ে করা।’ তিরমিজি।

জিবরাইল (আ.) রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিসওয়াক করার কথা বলতেন। তিনি বলেন, ‘এমনটি কখনো হয়নি যে, জিবরাইল আমার কাছে এসেছেন আর মিসওয়াকের নির্দেশ দেননি। এতে আমার আশঙ্কা হচ্ছিল যে, মিসওয়াক করতে করতে আমি আমার মুখের অগ্রভাগ ছিলে না ফেলি।’ মুসনাদে আহামাদ। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে তো মিসওয়াক করতেনই সাহাবিদেরও এ ব্যাপারে নির্দেশ দিতেন। ফরজ বা ওয়াজিব না হলেও মিসওয়াকের খুবই গুরুত্ব রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যদি আমি আমার উম্মতের ওপর কঠিন মনে না করতাম তাহলে প্রতি নামাজের সময়ই মিওয়াকের নির্দেশ দিতাম।’ বুখারি।

মিসওয়াক করা অজুর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। মিসওয়াক করে অজু করলে অজুর সওয়াব বেশি। আবার সে অজুতে নামাজ পড়লে নামাজের সওয়াবও বহুগুণে বেড়ে যায়। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মিসওয়াক করে যে সালাত আদায় করা হয় তাতে মিসওয়াকবিহীন সালাতের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি সওয়াব হয়।’ বায়হাকি।

লেখক : জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কারি ও খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ, বোর্ডবাজার, গাজীপুর।

 

সর্বশেষ খবর