শিরোনাম
রবিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

আল্লাহ আমাদের জ্ঞান বাড়িয়ে দিন

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

আল্লাহ আমাদের জ্ঞান বাড়িয়ে দিন

আল্লাহর কাছে একদিন মুসা (আ.) বললেন, প্রভু হে! এই যে বিশাল সৃষ্টিজগৎ, দৃষ্টিনন্দন এত আয়োজন, বিশ্বপ্রকৃতিকে সাজিয়েছ তুমি অনন্য সৌন্দর্য দিয়ে; তাহলে কেন সৃষ্টি করার পর আবার সবকিছু ধ্বংস করবে? একবার সাজানোর পর আবার ভেঙে ফেলার এই খেলার মাঝে কী রহস্য লুকিয়ে আছে? আল্লাহ বললেন, মুসা! আমি চাইলেই তোমাকে উত্তর বলে দিতে পারি। কিন্তু আমি তোমাকে বোঝাতে চাই। তুমি এক কাজ কর। ওই যে জমি দেখতে পাচ্ছ, সেখানে গিয়ে ধানের বীজ লাগিয়ে আস। যখন ধান পাকবে তখন ফসল নিয়ে আমার কাছে আসবে। কথামতো মুসা (আ.) কিছু শস্যদানা রোপণ করলেন। কয়েকদিন পর বীজ ফুঁড়ে গাছ বেরোলো। খেতে সবুজের ঢেউ খেলে গেল। তারপর ধান হলো। ধান পেকে সবুজ থেকে হলুদ হলো। এবার মুসা (আ.) কাস্তে হাতে খেতে গেলেন। শস্য কেটে ঘরে তুললেন। মাড়াই করে খড় থেকে ধান-গম আলাদা করলেন। এমন সময় আসমান থেকে ওহি এলো। কী হে মুসা! শস্য যখন দানার আকৃতিতে ছিল তখন জমিতে রুয়ে দিয়েছ। আর এখন পাকার পর কেন কেটে ফেলেছ?

মুসা জবাব দিলেন, ওগো প্রভু আমার! ধান-গম গোলায় তোলার জন্যই এ ফসল কাটা। আমি দেখতে চাই, দেখাতে চাই যে, ধান গাছ বা গম গাছের যে খড় আছে, সে খড়ের সঙ্গে দানা আছে। খড়ের ভিতর দানা রেখে দেওয়া নিরাপদ নয়। আবার দানার গোলায় খড় রেখে দিলে সব নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়। আমি খড় ও দানা আলাদা করতে চাই। তাই মাড়াই করার এ কসরত। বুদ্ধিও একই কথা বলে। দুটোর মাঝে একটা তফাত থাকা চাই। এবার আল্লাহতায়ালা জানতে চাইলেন, হে মুসা! এ শিক্ষা তুমি কোথায় পেলে যে, পাকা খড় থেকে শস্য আলাদা করা জরুরি? মুসা (আ.) বললেন, হে আল্লাহ! আমার স্বাভাবিক জ্ঞানই বলে দিয়েছে, এ দুটোর মাঝে একটি পার্থক্য থাকা দরকার। তখন আল্লাহতায়ালা বললেন, তাই যদি হয়, তাহলে আমি নিজে আমার সৃষ্টিতে কেন এ পার্থক্য, এমন তফাত করব না বল? মাওলানা রুমি বলেন, ‘সৃষ্টির মাঝে ভালো যেমন আছে, আছে তেমন মন্দও। অর্থাৎ আল্লাহ বলছেন, মুসা! আমার বিশাল সৃষ্টিরাজ্যে বহু মানুষ আছে, তাদের প্রাণ আছে, প্রাণের সঙ্গে আত্মা আছে। কারও আত্মা পবিত্র, কলুষমুক্ত, স্বচ্ছ, কামনা-বাসনার, জড়বস্তুর কদর্যতা থেকে নির্মল। আবার কারও আত্মা আছে কামনা-বাসনায় কলুষিত, হীনতা-নীচতার রোগে আক্রান্ত। খনিতে দেখ অনেক মহামূল্যবান পাথর-রতœ আছে। আবার শুধু পাথরও আছে। ‘অবশ্যই ভালো ও মন্দের মাঝে তফাত থাকতে হবে। যেমন খড় থেকে গম আলাদা করে নিতে হয়।’ অর্থাৎ, ধান-গম যেমন খড়কুটো থেকে পৃথক করা জরুরি, তেমন মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভালো ও মন্দ গুণও আলাদা করা আবশ্যক।

হে পাঠক! তোমার অস্তিত্বে সততার যে রত্ন আছে, তা লুকিয়ে গেছে মিথ্যা ও প্রতারণার আড়ালে। এ মিথ্যা-প্রতারণা হচ্ছে তোমার দৈহিক আরাম-আয়েশ ও জৈবিকতার মতো ক্ষণস্থায়ী বিষয়-আশয় চর্চার মাধ্যমে। আর তোমার সত্য ও সততার রতœ ঘুমিয়ে আছে আত্মায়। নিজের আত্মাকে জাগিয়ে তোলো। দৈহিক কামনা-বাসনাকে আত্মিক শক্তি দিয়ে পরাজিত কর। যদি তা করতে পারো তবেই তুমি সত্যিকার মানুষ হতে পারবে।

মুসা (আ.) যেমন খড় থেকে শস্য আলাদা করেছেন, তেমন তুমিও তোমার ভালোকে মন্দ থেকে আলাদা করে দাও। ভালো-মন্দ একসঙ্গে থাকলে কিন্তু ভালোরই ক্ষতি হবে। মনে রেখো, শস্যে যখন পোকা ধরে, তখন শস্য নষ্ট হয়। পোকার কিছুই হয় না। হে পাঠক! প্রকৃতিও তার ভালো-মন্দকে, সত্য-মিথ্যাকে প্রতিনিয়ত আলাদা করে ফেলছে। তুমিও প্রকৃতিরই একটি অংশ। তাই প্রকৃতির স্রষ্টা আল্লাহর ঘোষণা, ‘সত্য আলাদা হয়ে আসবে মিথ্যা ছেঁটে দিলে। মিথ্যা তো ছেঁটে দেওয়ার জন্যই।’ হে আল্লাহ! আমাদের জীবন থেকে মিথ্যার খড় আলাদা করে সত্যের সোনালি ফসল আখেরাতের ঘরে তোলার তাওফিক দিন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর