সোমবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

যানজটে জীবন জট

সামিয়া রহমান

যানজটে জীবন জট

জানেন কি, যানজটের শহর ঢাকার রাস্তায় এখন ৯ হাজার বাস-মিনিবাস চলছে? জানেন কি, ঢাকার রাস্তায় এখন রিকশার সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ? জানেন কি, একটি শহরের মানুষের যাতায়াতের জন্য ২৫ ভাগ সড়ক থাকার কথা থাকলেও, রাজধানী ঢাকাতে আছে মাত্র সাত ভাগ? অথচ ৮১৬ বর্গকিলোমিটারের রাজধানীতে প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষের বাস। ভাবা যায়, কতটা অসহনীয় রাজধানীবাসীর জীবনযাপন!

রাজধানীর গণপরিবহনের নৈরাজ্য-অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রতিমুহূর্তে আমরা মুখে ফেনা তুলি। ব্যাপারটি যেন এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, গণপরিবহনের ভোগান্তির সমাধান সেদিনই হবে, যেদিন আমরা গণপরিবহন ব্যবহার ছেড়ে দেব, ঘরের ভিতরে বসে জীবনযাপন করব।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার কোন রুটে কত যাত্রীর চলাচল- তার সুনির্দিষ্ট গবেষণা ছাড়াই চলে আসছে ঢাকার গণপরিবহনের রুট। নিউজটোয়েন্টি ফোরের প্রতিবেদক প্লাবন রহমান আর ফখরুল ইসলামের সরজমিন রিপোর্টে জানা যায়, রাজধানীতে রুটের সংখ্যা বেড়ে এখন ৩৬৬টি। দুশোরও বেশি কোম্পানি এর দায়িত্বে আছে। গত দেড় বছরেই নাকি ১২০টি রুটের পারমিশন দিয়েছে রুট পারমিট অথরিটি। নতুন করে এক হাজার বাস-মিনিবাসের সংযোজন হয়েছে গত দেড় বছরে। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই রুটের সংখ্যা নাকি ২২টিতে নামিয়ে আনা সম্ভব। চিন্তা করে দেখুন, শুধু বিমানবন্দর সড়কেই নাকি ৫০টি রুটে ৪৫টি কোম্পানির ২০০০ বাস-মিনিবাস চলছে। সড়কে যানজট ঠেকায়Ñ তবে কার সাধ্য! একই সড়কে একাধিক কোম্পানির বাস যাতায়াতে তাই যাত্রী নিয়ে চলছে তুমুল বেপরোয়া প্রতিযোগিতা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত রুটের কারণেই ঢাকার রাস্তা বিশৃঙ্খল। প্রত্যেকটি যানবাহন প্রতিটি যাত্রীর জন্য প্রতিযোগিতা করছে। অথচ একেবারে বিপরীত চিত্র গুলশান-বনানী-বারিধারায়। ঢাকা চাকার বদৌলতে বদলে গেছে সেখানকার চিত্র। এটিকে ভবিষ্যৎ ঢাকার মডেল বলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের দায়িত্ব দক্ষিণের মেয়রকে দেওয়া হলেও, গতি কিন্তু পায়নি প্রোগ্রামটি।

ভাড়া নিয়ে মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই। এক টাকা সত্তর পয়সার প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া, ক্ষেত্রবিশেষে ২৫-৩০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০-৭০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর পরিচালক, শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই রব্বানী এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হোসেন আহমেদ মজুমদার জানান, এই তথ্য নাকি অসত্য। প্রতিটি বাসে সরকার নির্ধারিত চার্ট মেনেই নাকি ভাড়া নেওয়া হয়। বাস্তবতা কি তাই বলে জনগণ???

নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিবের মতে, বিআরটিএ এবং পুলিশ যদি আন্তরিক হয়, তবে গণপরিবহনের এই নৈরাজ্য বন্ধ হওয়া খুবই সম্ভব। সাড়ে পাঁচ কোটি মোবাইল ফোন মানুষের হাতে আছে। এই মোবাইল ফোনে অভিযোগ করলে এবং প্রতিটি বাসে ওয়াইফাই যুক্ত সিসিক্যামেরা স্থাপন করলে, নগর অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ সরাসরি কর্তৃপক্ষের কাছে চলে যাবে। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক যেটি করতে চেয়েছিলেন। এর মাধ্যমে অরাজকতার অনেকটাই সমাধান সম্ভব। বিশেষ করে ভাড়া বেশি চাওয়া, মারামারি, মহিলাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ- সবই তখন সিসিটিভির মাধ্যমে প্রমাণিত হওয়া সম্ভব, নজরদারি করা সম্ভব। এই আইডিয়া কিন্তু নতুন নয়। উন্নত বিশ্বের প্রতিটি উন্নত শহরের গণপরিবহনের খুব সাধারণ চিত্রই এটি। তবে ডিজিটাল বাংলাদেশে এর বাস্তবায়ন হচ্ছে না কেন? কার্ড সিস্টেমে ভাড়া প্রদানের পদ্ধতি চালু হতে সমস্যা কোথায়?

ইকবাল হাবিবের মতে আসলে আত্মশ্লাঘায় ভুগছেন কর্তৃপক্ষ, রয়েছে তাদের চরম আন্তরিকতার অভাব, প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ লোকের অভাব। বুয়েটের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের মতে, একটি কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে সড়ক ও গণপরিবহনের বিষয়টি না থাকায় প্রত্যেকে একে অপরের প্রতি দায় চাপিয়ে ক্ষান্ত। অভিযোগের দায়িত্ব নিতে চায় না কেউ, অথচ সরকার বিশাল অঙ্কের প্রজেক্ট হাতে নিলে তার অংশীদার হতে চায় আবার সবাই। অর্থকড়ির ব্যাপারে সবাই উৎসাহী, দায়িত্ব পালনে নয়। অবশ্য বিআরটিএ’র পরিচালকের দাবি, সামর্থ্যরে চেয়ে তারা বেশি কাজ করছেন। তিনি বরং উল্টো দায় চাপান যাত্রীদের প্রতি। কিন্তু বিবেক জানতে চায়, শুধু যাত্রীরা দায়িত্ব পালন করলেই যদি সব সমস্যার সমাধান হয়, তবে সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের আর কি প্রয়োজন? বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের দাবি, মোবাইল কোর্ট ছাড়া তাদের আর করণীয় কী বা আছে! তারা নাকি নিয়মিত সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, মতবিনিময় করে কি তারা কোনো সমস্যার সমাধান করেছেন? এমনকি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও কি বন্ধ করতে পেরেছেন? নিয়োগপত্র ড্রাইভারের কাছে থাকার বিধান, বাসে চার্ট থাকার বিধান- আদতে কি আছে? ইন্সপেক্টর কি নজরদারি করছেন? উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার মতো, সব দোষ কেষ্ট বেটার অর্থাৎ যাত্রীরাই দোষী। যাকে নিয়ে ব্যবসা, সেই নাকি সবচেয়ে দোষী!!

বিআরটিএ কি যাত্রীবান্ধব, জনবান্ধব দায়িত্ব পালন করছে? বিআরটিএ বলছে সমস্যা সমাধানে প্রধান স্টেকহোল্ডার পুলিশ। তবে কি পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে না? যদিও বিআরটিএ পরিচালক হয়তো তার অবস্থানগত কারণে পুলিশকেও দোষ দিতে পারছেন না। কিন্তু সাধারণ জনগণ হিসেবে আমাদের মন জানতে চায়, দায়িত্বটা পালন করছে না কে তবে? অরাজকতা হচ্ছে না বলে দিয়ে কি অরাজকতার দায় এড়ানো যায়?

একমাত্র সরকারি গণপরিবহন বিআরটিসি অস্তিত্ব সংকটে ধুঁকছে। যাত্রী সেবার চেয়ে নিজেদের বেতন-ভাতা উঠাতেই তারা বেশি ব্যস্ত। বিআরটিসির ১ হাজার ৪৪৫টি বাসের মধ্যে ৫২৪টিই অচল। ৪৫৬টির মধ্যে ঢাকায় ২৫০টি চলে চুক্তিভিত্তিক হিসেবে। তবে দেশে গণপরিবহনে এখনো একমাত্র ভরসার জায়গা বিআরটিসি, তারা এখনো সরকার নির্ধারিত হারে ভাড়া নেয়। তাই একমাত্র সরকারি গণপরিবহন পাবলিক সার্ভিস না করে চুক্তিভিত্তিকভাবে চলা কতটা যুক্তিসংগত, সেই প্রশ্নটিও ওঠে। সমস্যা হচ্ছে, জনগণের অর্থ দিয়ে সংস্থাটি নামি-দামি গাড়ি আনছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন, সেই গাড়ি ক্রয় করাতে তাদের যতটা আগ্রহ, সেই গাড়ি দেখভালে তারা ততটাই নিরুৎসাহিত। আর চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করার ফলে জবাবদিহিতা বা দায়বদ্ধতার বিষয়টিও থাকছে না। অভিনেতা ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বিআরটিসির বাসের কোনো চালক যদি অপরাধ করে, তার বিরুদ্ধে নাকি কোনো মামলা হয় না। কারণ সে সরকারি বেতনভুক্ত কর্মচারী। কতটুকু সত্য এটি তা অনুসন্ধানেই যাচাই হবে, কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, সরকারের এই সেবা খাতটি কি আদৌ সেবা দিতে পারছে?

আচ্ছা একটি প্রশ্ন করতে চাই। বিআরটিসির বাস জেলাশহরগুলোতে চলাচল করে না কেন? কার নির্দেশে বন্ধ থাকে? মালিকরা কি বলবেন? স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের ভাষায়, এখানে মালিকরা তাদের প্রবল প্রভাব খাটান। আজ গাড়ি বের হলেই, কাল থেকে শুরু হয়ে যাবে পরিবহন ধর্মঘট।

মূল দায়িত্ব কার আদতে? যাত্রী কল্যাণ সমিতি? নাকি বিআরটিএ বা পুলিশ বা মালিক সমিতির? নিজে ভালো কাজ করছি, সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছি- এমন আত্মঅহংকারে অন্ধ হয়ে, অন্যের প্রতি দোষারোপে কি সমাধান মিলবে?

নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিবের মতে, নিজস্ব বাস নেই এমন বাস মালিকরা ফ্র্যাঞ্চাইজি হয়ে গেলে নেতৃত্ব চলে যাওয়ার আশঙ্কায়, এক রুটে এক কোম্পানির মতো প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহী নয়। যদিও মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হোসেন আহমেদ মজুমদার এই তথ্যের সত্যতাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, মালিক ছাড়া নেতা হওয়া সম্ভব না। তাই নেতৃত্ব চলে যাওয়ার আশঙ্কাও তাদের নেই। বরং তার মতে গণপরিবহন নিয়ে যতটা অসহনীয় বা নৈরাজ্যকর অবস্থার কথা আমরা বলছি, পরিস্থিতি সেরকম নয়। অবস্থা যদি এতটাই নৈরাজ্যপূর্ণ হতো, তবে ঢাকা শহরকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হতো। যেহেতু ঢাকা পরিত্যক্ত নয়, তাই গণপরিবহনের ভোগান্তির দাবিও সঠিক নয়। অর্থাৎ ‘কাদম্বরীকে মরিয়া প্রমাণ করিতে হবে সে মরে নাই’। ঢাকাকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পর মালিক সমিতি বা বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ কি বুঝবেন, ঢাকা বসবাসের অযোগ্য? সাধারণ মানুষ হিসেবে সত্যিই প্রশ্ন জাগে, আমাদের মালিক সমিতি, বিআরটিসির কর্তৃপক্ষরা কি আদৌ গণপরিবহনে চলাচল করেছেন কখনো? সবচেয়ে ভালো হতো যদি আমাদের মন্ত্রী, আমলা, সংসদ সদস্য, নীতিনির্ধারকদের গণপরিবহনে চলাচল বাধ্যতামূলক করা হতো। তবেই হয়তো গণপরিবহনে জনগণের ভোগান্তি তারা টের পেতেন।

মালিক সমিতি আর বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের অভিযোগের আঙ্গুল যাত্রী কল্যাণ সমিতির দিকে। তাদের অভিযোগ, ১০টা গাড়ি নামিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতি কি উদাহরণ তৈরি করতে পেরেছে গণপরিবহন কেমন হওয়া উচিত? অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে যাত্রীরা কেন প্রতিবাদ করছে না? তাদের কাছে যেহেতু অভিযোগ আসে না, তাই অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টিও নাকি অসত্য! অর্থাৎ বিষয়টি যেন এমন, যাত্রী কল্যাণ সমিতি যাত্রী হিসেবে নয়, বরং মালিক হয়ে বাস নামিয়ে দেখুক কত ধানে কত চাল!

ফুটপাথ দখল, সড়ক দখলÑ সমানেই চলছে। সবাই জানি কিন্তু চোখ কান বন্ধ রাখছি। ‘দ্বার বন্ধ করে ভ্রমটারে রুখি, সত্য বলে আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি’? নির্জলা সত্যও আজ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, মালিকানা-নেতৃত্ব আর লাভ-লোকসানের হিসাব-নিকাশে জলজ্যান্ত মিথ্যা হয়ে যায়!

কিন্তু বাস ফ্র্যাঞ্চাইজি করে ফেললেই কি ম্যাজিকের মতো ঢাকার যানজট নিয়ন্ত্রণ সম্ভব? ভুলে গেলে চলবে না ভবিষ্যতের ৫টি মেট্রোরেল বা এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে বা বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের বড় বড় মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হলেও এর সুবিধা ভোগ করতে পারবে মাত্র ১৭ ভাগ মানুষ। ৪০ ভাগ মানুষের নির্ভরতা কিন্তু থাকবে ওই বাস বা রেলপথের ওপরই। বুয়েটের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের মতে, ঢাকার সাত ভাগ রাস্তা থাকলেও কার্যকর আছে মাত্র পাঁচ ভাগ। উন্নত বিশ্বে আদর্শ শহরে যেখানে ২৫ ভাগ সড়ক আছে, সেখানে যদি ১৫-২০ ভাগ সড়কও এখানে থাকত তবে সহনীয় মাত্রায় যানজটকে নিয়ন্ত্রণ করা যেত। বাস নিয়ন্ত্রণে আনলে বা ফ্র্যাঞ্চাইজির মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে দায়িত্ব দিলে হয়তো কিছুটা সুফল আসবে, কিন্তু সড়ক না থাকলে ভোগান্তি কমবে না। ঢাকা শহরে সড়ক নেটওয়ার্ক বাড়ানো সম্ভব নয়, তাই বিকল্প হিসেবে রেলপথের নেটওয়ার্ক বাড়াতে হবে। সেটি আন্ডারগ্রাউন্ড হোক বা সমতলে হোক বা এলিভেটেড হোক।

কমিউটার ট্রেনের কথা কি মনে আছে? যার আরেক নাম ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট বা ডিইএমইউ ট্রেন। ঢাকা থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী কমিউটার ট্রেনগুলো নির্দিষ্ট সময়ে ঢাকায় আসত। দূরের যাত্রীরা ঠিক সময়ে ঢাকায় এসে অফিস করে আবার গন্তব্যে ফেরত যেতে পারত। কিন্তু সেই ট্রেনের সময়সূচিও এমনভাবে বদলে দেওয়া হলো যেন ঢাকার বাইরের অধিবাসীরা অফিস সময়ে এসে আবার অফিস সময়ে ফেরত যেতে না পারে। বুয়েটের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, এর নেপথ্যেও নাকি বাস মালিকদের হাত আছে!

সমাধান কি অধরা স্বপ্নই থেকে যাবে? ইকবাল হাবিবের মতে, এসটিপি ও আরএসটিপির আদলে পথচারী-বান্ধব সড়কের সুবিধা, বাস স্টপেজের সুবিধা দেওয়া, মাল্টি-মোডাল নেটওয়াকের্র ভিত্তিতে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন, এমআরটিএ আর বিআরটি প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। লন্ডন বা সিঙ্গাপুরের মতো শহরে ২-৩ কিলোমিটার রাস্তা মানুষ হেঁটেই চলাচল করে। সুযোগ থাকলে আমরাই হাঁটব না কেন? গবেষণা করে দেখতে হবে কত শতাংশ মানুষ কোন দিকে চলাচল করে, সেদিকে প্রাধান্য দিতে হবে। ব্যক্তিগত গাড়িকে নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। গণপরিবহনের সেবা যদি উন্নত হয় সেক্ষেত্রে এটির দ্রুত নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। বর্তমান অপ্রতুল সড়কের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জনসম্পৃক্ত বিষয়গুলোকে নজরদারিতে আনতে হবে। তাহলেই অনিয়ম অন্তত দূর হবে। সংগঠনগুলোকে পেশাজীবী দিয়ে শক্তিশালী করতে হবে অর্থাৎ দক্ষতার ভিত্তিতে লোক নিয়োগ হবে, স্বজনপ্রীতি দিয়ে নয়। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষকে ঢেলে সাজানোর সময় এসেছে। ইকবাল হাবিবসহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের অভিযোগ ডিটিসিএ তে নাকি ৭৮ জনের মধ্যে প্রযুক্তিতে দক্ষ মানুষের সংখ্যা মাত্র ৪-৫ জন। অনেকে বলেন, একক নেতৃত্বের অধীনে সড়ক পরিবহনের বিষয়টি নিয়ে আসতে হবে। নতুবা একে অন্যের ওপর দায় চাপানোর প্রবণতা চলতেই থাকবে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের মতে, নৈরাজ্য থেকে বের হয়ে আসতে হলে চাঁদাবাজি বন্ধ, ট্রাফিক পুলিশের দুর্নীতি বন্ধ করা সর্বপ্রথম জরুরি। জরুরি, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা। ফুটপাথের দখলদারিত্ব বন্ধও জরুরি। পথচারীবান্ধব যে শহর নয়, সে শহর উন্নয়নের সূচকে যেখানেই থাকুক না, জীবনমানের সুবিধাপ্রাপ্তির সূচকে তার অবস্থান জিরোতেই থাকবে। প্রশিক্ষিত আইন জানা চালকদের নিয়োগ দেওয়া বাধ্যতামূলক করা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জরুরি- পথচারীদের ট্রাফিক আইন মেনে চলা। ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার কি সময় এখনো আসেনি? আমাদের স্বপ্ন অজস্র, কিন্তু সমাধান দ্রুত না হলে উন্নয়নের বাংলাদেশের মডেল হবে ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার মতো। আমরা কি সেটি চাই!

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর