সোমবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

উধাও হচ্ছে নদ-নদী

এ কাণ্ডজ্ঞানহীনতার অবসান কাম্য

বাংলাদেশকে বলা হয় নদ-নদীর দেশ। মিঠাপানির দিক থেকে দুনিয়ার যেসব দেশ সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্থান সবার শীর্ষে। তবে এ সম্পদ তথা নদ-নদী জলাশয় সুরক্ষায় আমরা যে যতœবান নই তা একটি নিষ্ঠুর সত্যি। গত ৫০ বছরেও বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে গেছে ৫২০টি নদী। মাত্র কয়েক দশক আগেও দেশের সব এলাকার নদীতে দেখা যেত পালতোলা নৌকার বহর। এখন কিলোমিটারের পর কিলোমিটার পানিশূন্য নদীর কোথাও কোথাও চলে চাষবাদ। খনন না করা ও দখলদারদের থাবায় নদীর নাব্যতা যেমন কমছে, ঠিক একইভাবে কমছে নদীর সংখ্যাও। নদী গবেষকদের তথ্যানুযায়ী, ষাট দশকে সাড়ে সাতশ নদী ছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে এ সংখ্যা কমে মাত্র ২৩০টিতে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রবাহিত ২৩০ নদীর মধ্যে ৫৯টি আন্তর্জাতিক। তবে সরকারি হিসাবে দেশে নদীর সংখ্যা ৪০৫। শুকনো মৌসুমে প্রায় সব নদীতে পর্যাপ্ত পানি থাকে না। ফলে বদলে যাচ্ছে নদীগুলোর গতিপথ, শুকিয়ে মরে যেতে যেতে দেশের মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী। এক সময় ৩৬৭ কিলোমিটার দীর্ঘ কপোতাক্ষ ছিল প্রমত্ত নদ। এখন সে নদের কপিলমুনি অংশ একবারে শুকিয়ে গেছে। এর নিচের অংশে জোয়ারে পানি আসার পরিমাণ কমছে। দেশের উত্তরাঞ্চলেও মাত্র কবছর আগেও তিস্তা ছিল প্রমত্ত নদী। শুষ্ক মৌসুমে সে নদীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দায়। তার অবস্থা দাঁড়ায় ‘পার হয়ে যায় গরু পার হয় গাড়ি।’ পানির অভাবে দেশের বৃহত্তম তিস্তা সেচ প্রকল্প স্থবির হয়ে পড়ছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় শুরু হয় নদী দখলের অপকৌশল। খোদ রাজধানীর চারটি নদী শুধু দখল নয় দূষণেরও শিকার। এক সময় শীতলক্ষ্যার পানির স্বচ্ছতা ছিল কিংবদন্তির মতো। এখন দুনিয়ার অন্যতম দূষিত নদীর তালিকায় তার নাম ওঠার উপক্রম হয়েছে। নদ-নদীর সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের জীবন-মরণের সম্পর্ক যুগ যুগ ধরে। দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ নদ-নদী হত্যায় আমরা যে কাণ্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিচ্ছি, তা থেকে এখনই সরে আসতে হবে।

নদী সুরক্ষায় সচেতন হতে হবে নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর