মঙ্গলবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

জীবন্ত সত্তা নদী

আদালতের ঐতিহাসিক রায়

নদীর দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ নামের ভূখণ্ড প্রকৃত অর্থে নদ-নদীরই দান। উজান থেকে নেমে আসা নদ-নদীর পলি জমেই হাজার হাজার বছরের প্রক্রিয়ায় স্থিতি লাভ করেছে আজকের বাংলাদেশ নামের ভূখণ্ড। বাংলাদেশের জনজীবনের সঙ্গেও নদীর সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। এক সময় যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল নদীপথ। এখনো দেশের চাষাবাদে নদ-নদীর ভূমিকা মুখ্য। বাংলাদেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও অস্তিত্বের অনুষঙ্গ হলেও নদী রক্ষায় আমাদের ব্যর্থতা প্রায় ক্ষমাহীন। এ অকাম্য অবস্থার অবসানে তুরাগ নদকে ‘জীবন্ত সত্তা’ ঘোষণা করে দেশের সব নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়কে রক্ষার জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে আইনগত অভিভাবক ঘোষণা করেছে হাই কোর্ট। ঐতিহাসিক এ রায়ে নদী দখলকারীদের নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণাও করা হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, নদী দখলের সঙ্গে জড়িতরা ঋণও পাবে না। তুরাগ নদ রক্ষায় আনীত রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে রবিবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ ঐতিহাসিক রায় দেয়। রায়ে নদী রক্ষা কমিশন যাতে নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয় রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে, সে জন্য আইন সংশোধন করে ‘কঠিন শাস্তির’ ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে সরকারকে। পাশাপাশি জলাশয় দখলকারী ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের তালিকা প্রকাশ, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের সব নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়ের ডিজিটাল ডেটাবেজ তৈরি এবং সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানায় নিয়মিত সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিতে বলা হয়েছে হাই কোর্টের রায়ে। স্মর্তব্য, এ পর্যন্ত পৃথিবীর চারটি দেশ ইকুয়েডর, নিউজিল্যান্ড, ভারত ও কলম্বিয়া নদ-নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। আদালতের রায়ের ফলে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হবে পঞ্চম। নদ-নদী সুরক্ষায় যা অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়। তবে নিছক ঘোষণা নয় তার যথাযথ বাস্তবায়নেও নজর দিতে হবে। আদালতের রায় যাতে সর্বোতভাবে কার্যকর হয় সেদিকে সরকার তীক্ষ্ম নজর রাখবে আমরা এমনটিই আশা করতে চাই। দেশের নদ-নদী রক্ষায় আদালতের রায়টি রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত হবে এমনটিই প্রত্যাশিত।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর