মঙ্গলবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

জাহালমের মুক্তি

বিনা কারণে কারোর কারাবরণ কাম্য নয়

‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ বলে একটি প্রবাদ আমাদের দেশে বেশ প্রচলিত। এ অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে সমাজ ও সরকারের ক্ষমতাবান ব্যক্তিরাও যে মুক্ত নন, তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। একজনের দোষ আরেকজনের ওপর চাপানোর পরিণতিতে অপরাধীর পিঠ বাঁচলেও নিরপরাধ মানুষকে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার ওপর পরিকল্পিত গ্রেনেড হামলার দায় চাপানো হয়েছিল জজ মিয়া নামের এক নিরপরাধ ব্যক্তির ওপর। নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে জজ মিয়াকে দিয়ে স্বীকরোক্তিমূলক জবানবন্দিও নেওয়া হয়। তবে গ্রেনেড হামলার হোতারা উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়েও শেষ রক্ষা করতে সক্ষম হননি। সোনালী ব্যাংকের ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতি মামলায় জড়িত ছিল আবু সালেহ নামের এক জালিয়াত। দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক এ অভিযোগে ২৬টি মামলাও করে। কিন্তু গ্রেফতার করা হয় আবু সালেহের বদলে পাটকল শ্রমিক জাহালমকে। এ মামলায় ইতিমধ্যে তাকে তিন বছর জেল খাটতে হয়েছে। প্রতিবারই আদালতে এসে জাহালম আমি আবু সালেহ নই জাহালম এই আকুতি জানালেও কেউ তাতে কর্ণপাত করেননি। পত্রপত্রিকায় একজন নিরপরাধ ব্যক্তির বছরের পর বছর জেল খাটার বিষয়ে প্রতিবেদন ছাপা হলে তা বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়। আদালত এ বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন এবং কেন জাহালমের আটকাদেশ অবৈধ ঘোষণা করা হবে না সে বিষয়ে জানতে চান। এ বিষয়ে শুনানির পর গত রবিবার আদালত ওই দিনই জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ দেয়। দুদককে এ বিষয়ে খরচ বহনেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয় আগামী ৬ মার্চ। একজন নিরপরাধ মানুষের অকারণে কারাভোগের বিরুদ্ধে আদালতের স্বপ্রণোদিত রুল মানবাধিকার সুরক্ষা তথা বিচার ব্যবস্থার প্রতি দেশবাসীর আস্থা সৃষ্টিতে অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়। আমরা আদালতের এ ভূমিকার জন্য অভিনন্দন জানাই। আশা করতে চাই, আর যাতে কাউকে জজ মিয়া বা জাহালমে পরিণত করার সাহস কেউ না পায় সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও উচ্চ আদালত এগিয়ে আসবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর