শিরোনাম
শনিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

মুফতি মাওলানা মো. এহছানুল হক মোজাদ্দেদী

তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি রব্বুল আলামিন। লাখো-কোটি দরুদ ও সালাম প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর, যিনি মুমিনের ইমান। তাঁর পরিবার ও বংশধর, সাহাবায়ে কিরাম, নেককার বান্দাদের ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষণ হোক অঝর ধারায়। নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি কেবল মুত্তাকিনদের জন্যই নির্ধারিত।

রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ হলো সমস্ত আম্বিয়ার সুন্নত। আল্লাহর মাহবুব বান্দাদের অভ্যাস। আর আল্লাহর সঙ্গে বান্দার গভীর সম্পর্ক স্থাপন তথা নৈকট্য ও সন্তোষ অর্জনের অন্যতম পন্থা। তাহাজ্জুদের ফজিলত প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ নামাজ কায়েম করুন; এটা আপনার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, আপনার প্রতিপালক আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন মাকামে মাহমুদ তথা প্রশংসিত স্থানে।’ সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৭৯। তিনি আরও বলেন, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে আকাক্সক্ষা ও আশঙ্কার সঙ্গে তাদের প্রতিপালককে ডাকে এবং আমি তাদের যে রুজি দিয়েছি, তা থেকে তারা দান করে।’ সূরা সিজদা, আয়াত ১৬। তাহাজ্জুদ নামাজ নফসের রিয়াজাত ও তারবিয়াতের এক বিশেষ মাধ্যম। কারণ প্রভুর প্রেমে গভীর রাতে সুখশয্যা ত্যাগ করেই আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হতে হয়। এ নামাজ মন ও চরিত্রকে নির্মল করে। পবিত্র করে। এবং সত্য পথে অবিচল রাখে।

আল কোরআনের উল্লেখ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই রাতে ঘুম থেকে ওঠা মনকে দমিত করার জন্য খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কোরআন পাঠ বা জিকির খুবই যথার্থ।’ সূরা মুজাম্মিল, আয়াত ৬। অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘আর আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।’ সূরা ফুরকান, আয়াত ৬৪।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ী হওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা ছিল তারা রাতের শেষ ভাগে  আল্লাহর দরবারে চোখের পানি ফেলতেন আর ক্ষমাপ্রার্থনা করতেন। যেমন কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা ছিল কঠিন পরীক্ষায় পরম ধৈর্যশীল, অটল-অবিচল, সত্যের অনুসারী, পরম অনুগত। আল্লাহর পথে ধনসম্পদ উৎসর্গকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৭।

প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসেও তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য উল্লেখ করা হয়েছে। মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থকার সুনানে আহমদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ।’ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য এক হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ প্রতি রাতেই নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে। তিনি তখন বলতে থাকেন কে আছো যে আমায় ডাকবে, আর আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আছো যে, আমার কাছে কিছু চাইবে, আর আমি তাকে তা দান করব। কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করব।’ বুখারি, মুসলিম।

শরহে সুন্নাহর বরাত দিয়ে মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থকার বর্ণনা করেন, হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ খুশি হন। এক. যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের জন্য ওঠেন এবং নামাজ পড়েন। দুই. যারা নামাজের জন্য সারিবদ্ধভাবে কাতারে দাঁড়ায়। তিন. মুজাহিদ যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়।’

অনুরূপ অন্য আরেকটি হাদিস রয়েছে। হজরত জাবির (রা.) বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘রাতের মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত আছে যদি কোনো মুসলমান তা লাভ করে এবং আল্লাহর কাছে ইহ ও পরকালের কোনো কল্যাণ চায় আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে তা দেন।’ মুসলিম। আসুন, আমরা তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে মনকে পবিত্র করি এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দা হই। আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন।

 

লেখক : খতিব, মণিপুর বাইতুর রওশন (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ মিরপুর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর