রবিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

মৃতদের জন্য করণীয়

যুবায়ের আহমাদ

মৃতদের জন্য করণীয়

মৃত্যু আমাদের জীবনের অনিবার্য পরিণতি। আমাদের মৃত্যুবরণ করতেই হবে। চলে যেতে হবে অবিনশ্বর জগতের দিকে। কোনো মুমিন যখন অনুধাবন করতে পারে যে তার মৃত্যু আসন্ন তখন তার উচিত দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর দরবারে নিজের অতীত জীবনের গুনাহের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা। একজন মুসলমানের মৃত্যুর সময় ও মৃত্যুর পর অন্য মুসলমানদের কিছু করণীয় রয়েছে। সেগুলো হলো- ১. কালিমার তালকিন করা : কারও বাহ্যিক অবস্থা দেখে যদি মনে হয় যে লোকটি মৃত্যুশয্যায় তাহলে তাকে কালিমার তালকিন অর্থাৎ মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কালিমা স্মরণ করিয়ে দেওয়া এবং তাকে কালিমা পড়তে উদ্বুদ্ধ করা। মুমূর্ষুর কাছে কালিমা পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইসি ওয়াসাল্লাম। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের মুমূর্ষুদের লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর তালকিন দাও!’ মুসলিম। যখন লোকটির রুহ বের হয়ে যাবে, তখন অন্যদের করণীয় হলো- ২. মৃত ব্যক্তির দুই চোখ বন্ধ করে দিয়ে তার দুই হাত দুই দিকে শরীরের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া। মুখ যেন হাঁ করে না থাকে সেজন্য তা চাপিয়ে দেওয়া। ৩. গোসল ও কাফন- মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো জীবিতদের ওপর ফরজে কেফায়া। কোনো সন্তান যদি জীবিত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়, জন্মের পর নড়াচড়া করে, শ্বাস নেয় বা কান্না করে তারপর মারা যায় তাহলে তাকে গোসল দিতে হবে এবং জানাজাও দিতে হবে। তারপর তার কাফনের ব্যবস্থা করাও জীবিতদের জন্য ফরজে কেফায়া। কাফনের রং সাদা হওয়া উত্তম। পুরুষের জন্য তিনটি এবং নারীদের পাঁচটি কাপড় দেওয়া সুন্নত। ৪. ঋণ ও অসিয়ত আদায় করাÑ মৃত ব্যক্তির ঋণ থাকলে তা তার সম্পদ থেকে দ্রুত পরিশোধ করা উচিত। তিনি ইসলামী শরিয়ত অনুমোদিত কোনো বিষয়ে অসিয়ত করে গিয়ে থাকলে তা পূর্ণ করা উচিত। তবে শরিয়ত অনুমোদিত নয় এমন কোনো কাজের অসিয়ত করলেও তা পালনীয় নয়। ৫. জানাজা ও দাফনে শরিক হওয়া- কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার জানাজা ও দাফনে শরিক হওয়া অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইসি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যদি কেউ সালাতুল জানাজায় শরিক হয় তবে সে এক কিরাত সওয়াব লাভ করবে। আর যদি কেউ দাফন শেষ হওয়া পর্যন্ত জানাজার সঙ্গে গমন করে ও উপস্থিত থাকে তাহলে সে দুই কিরাত সওয়াব লাভ করবে। আর এক কিরাত হলো বিশাল একটি পাহাড় পরিমাণ।’ বুখারি। জানাজায় চারটি তাকবির বলা ও দাঁড়িয়ে জানাজা পড়া ফরজ। জানাজায় আল্লাহর হামদ ও সানা পড়া, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পড়া এবং মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া  করা সুন্নত। জানাজার পর মৃতকে দাফন করা ফরজে কেফায়া। ৬. বিলাপ না করাÑ কারও মৃত্যুর পর তার জন্য বিলাপ করে কান্না করা, মাতম করা, পকেট ছেঁড়া, গালে বা পিঠে আঘাত করা হারাম। যে ব্যক্তি এমন করে তাকে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইসি ওয়াসাল্লাম উম্মতের বাইরের লোক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গালে থাপ্পড় মারে, পকেট ছিঁড়ে ফেলে ও জাহিলিয়াতের রীতিনীতির প্রতি আহ্বান করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ বুখারি। যার মৃত্যুতে বিলাপ বা মাতম করা হয় তার জন্যও ব্যাপারটি কষ্টের কারণ হয়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইসি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মৃত ব্যক্তিকে তার কবরে তার জন্য মাতম করে কান্না করার দরুন শাস্তি দেওয়া হয়।’ বুখারি। ৭. মৃত ব্যক্তির পরিবার পরিজনকে সান্ত্বনা দেওয়াÑ কোনো মুসলমানের ইন্তেকালে অন্য মুসলমানদের উচিত মৃতের পরিবার-পরিজনকে সান্ত্বনা দেওয়া। এটি খুবই সওয়াবের কাজ। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যদি কেউ তার মুমিন ভাইকে বিপদে সান্ত্বনা দেয় তবে আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন মহামূল্যবান সবুজ রাজপোশাক পরাবেন।’ অন্য হাদিসে মৃত ব্যক্তির পরিবারের কাছ থেকে খাবার গ্রহণের চিন্তা না করে বরং মৃতের পরিবারের জন্য খাবার রান্না করে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাফর (রা.)-এর ইন্তেকালের খবর পেয়ে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইসি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমরা জাফরের পরিবার-পরিজনের জন্য খাবার তৈরি কর! কেননা তাদের ওপর এমন এক বিপদ এসে গেছে যা তাদের রান্নাবান্না করে খেতে বাধা সৃষ্টি করবে।’ তিরমিজি।

লেখক : জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কারি ও খতিব বাইতুশ শফিক মসজিদ বোর্ডবাজার, গাজীপুর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর