মঙ্গলবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

পরিবহন নৈরাজ্য

প্রশাসনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি হচ্ছে

পরিবহন নৈরাজ্যে কিছুতেই লাগাম পরানো যাচ্ছে না। ট্রাফিক বিভাগের তৎপরতা আগের চেয়ে বাড়লেও ফল হতাশাজনক। খাতা-কলমে রাশি রাশি মামলা আর জরিমানার ঘটনায়ও পরিবহন চালকদের সম্বিত ফিরছে না। পরিবহন নৈরাজ্যে যে লাগাম পরানো যায় তা ছয় মাস আগে প্রমাণ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দুই সহপাঠীকে বাসচাপা দিয়ে হত্যা করার প্রতিবাদে তারা রাজপথে নেমে এসেছিলেন। নিজেরা হাতে তুলে নিয়েছিলেন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ। কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করেছিলেন সদিচ্ছাই আসল কথা। তাদের তত্ত্বাবধানে রাজপথে ফিরে এসেছিল শৃঙ্খলা। মনে হচ্ছিল ট্রাফিক আইনের প্রতি যানবাহন চালক, যাত্রী, পথচারী সবাই শুধু সচেতনই নয় শ্রদ্ধাশীল। রাজপথে ছিল না ওভারটেকিং, যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানো-নামানো ছিল অকল্পনীয় বিষয়। উল্টোপথে গাড়ি চালানোর ধৃষ্টতা কেউ দেখাতে সাহসই পায়নি। লাইসেন্স ছাড়া কারও যান্ত্রিক যান চালানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। শিক্ষার্থীরা কাগজপত্র পরীক্ষা করে ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের ট্রাফিক সার্জেন্টের কাছে সোপর্দ করেছে। মনে হচ্ছিল শিক্ষার্থীদের হস্তক্ষেপ সড়ক নৈরাজ্যের চির অবসান ঘটিয়েছে। সংসদে পাস হয় সড়ক পরিবহন আইন। কিন্তু কথায় বলে- কয়লা ধুলে ময়লা যায় না, স্বভাব যায় না মরলে। গণপরিবহন মালিক ও চালকরা এখন সড়ক নৈরাজ্যে মদদ জুগিয়ে তাদের সাময়িকভাবে সভ্য হতে বাধ্য করার বদলা নিচ্ছেন চরম অসভ্যতা দেখিয়ে। পরিবহনসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতা ও গাড়ি মালিকদের দাপটে চালক-হেলপাররা ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তারা ট্রাফিক আইনের তোয়াক্কা করছেন না। বিপজ্জনক ওভারটেকিং ও যাত্রীবোঝাই বাস-মিনিবাস নিয়ে তারা মরণঝুঁকির পাল্লাপাল্লিতেও লিপ্ত হচ্ছেন। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে, যাত্রী-পথচারীরাও প্রাণ হারাচ্ছেন গাড়ির চাপায়। চালকের সহযোগী কন্ডাক্টর-হেলপাররা যাত্রীদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার, বাদানুবাদ, হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়ছেন অহরহ। কোনো সভ্যসমাজে এমন নৈরাজ্য কল্পনা করা কঠিন হলেও তা এ দেশবাসীর নিয়তির লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে! পরিবহন নৈরাজ্য বড় মাপে সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি করছে। নিজেদের সুনামের স্বার্থেই তারা এ ব্যাপারে সচেতন হবেন- এমনটিই প্রত্যাশিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর