রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

মানুষকে সুপথে আনেন যারা

মুহম্মদ আজিম উদ্দিন

আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা ও প্রচার-প্রসারের অনেক মাধ্যমের একটি হলো দাওয়াতি কার্যক্রম। তাবলিগ জামাতের দাওয়াতি কার্যক্রমের মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশ, ভারত আর পাকিস্তানেই নয়, বরং সমগ্র পৃথিবীর দিগ্দিগন্তে ছড়িয়ে পড়েছে ইসলামের কলমা ‘লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু’। এক চিরায়ত কল্যাণের ডাকে তাওহিদের বার্তা নিজেদের হৃদয়ে ধারণ করে পৃথিবীর প্রতিটি জনপদে পৌঁছে দেওয়ার সৎকল্পই হলো তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা। দাওয়াত শব্দটি আরবি, যার অর্থ আহ্বান করা। ইসলামে মানুষকে দীনের দিকে আসার আহ্বানকে দাওয়াত বলা হয়। মানবজাতিকে এক আল্লাহর পথে আহ্বান করাই ছিল সব নবী-রসুলের প্রধানতম দায়িত্ব। শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল কোরআনে ‘দায়ি’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। ইরশাদ করা হয়েছে, ‘আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি।’ সূরা আহজাব, আয়াত ৪৬। আল কোরআনে দাওয়াতি কার্যক্রমের ব্যাপারে আরও একাধিক আয়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী! আপনি মানুষকে আপনার প্রতিপালকের পথে আহ্বান করুন হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সঙ্গে তর্ক করবেন উত্তম পন্থায়। আপনার প্রতিপালক তাঁর পথ ছেড়ে কারা বিপথগামী হয় সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত এবং কারা সৎপথে তাও তিনি সবিশেষ অবহিত।’ সূরা নাহল। আল কোরআনে দীনের পথে আহ্বানকারীদের সফলকাম হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একদল লোক হোক যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎ কাজে বাধা দেবে। আর তারাই হলো সফলকাম।’ সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১০৪। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে, তোমরা সৎকাজের আদেশ দাও এবং মন্দ কাজে বাধাদান কর এবং আল্লাহকে বিশ্বাস কর।’ সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১১০। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসেও দাওয়াতি কার্যক্রম তথা মানুষকে সুপথে আনার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যদি কওমের কোনো ব্যক্তি পাপকাজে লিপ্ত হয় এবং কওমের লোকেরা তাকে বারণ করতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও বারণ না করে, তবে মৃত্যুর আগে আল্লাহ তাদের আজাবে নিপতিত করবেন।’ আবু দাউদ, মিশকাত। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি গর্হিত কাজ হতে দেখে তবে তা হাত তথা শক্তি দিয়ে পরিবর্তন করবে। যদি না পারে তবে মুখ দিয়ে বলে তা পরিবর্তন করবে। যদি তাও না পারে তবে অন্তর দিয়ে তা অপছন্দ করবে। আর এটা হলো দুর্বল ইমানের পরিচায়ক।’ মুসলিম, মিশকাত।

হাদিসে এসেছে, ‘হজরত জাবির (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ জিবরাইল (আ.)-কে হুকুম দিলেন, অমুক শহরকে তার বাসিন্দাসহ উল্টিয়ে দাও, জিবরাইল (আ.) বললেন, হে আমার রব! সেই শহরে আপনার অমুক বান্দাও আছে যে কখনই আপনার নাফরমানি করেনি। (রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,) আল্লাহ জিবরাইল (আ.)-কে বললেন তুমি সেই শহরকে ওই ব্যক্তি ও সব শহরবাসীসহ উল্টিয়ে দাও। কেননা শহরবাসীকে আমার হুকুম অমান্য করতে দেখে এক মুহূর্তের জন্য তার চেহারার রং পরিবর্তন হয়নি।’ মিশকাতুল মাসাবিহ।

হজরত উরস ইবনে আমিরা কিন্দি (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যখন জমিনে কোনো গুনাহ করা হয় তখন যে তা দেখে এবং তা খারাপ মনে করে সে তার আজাব থেকে সেই ব্যক্তির মতো নিরাপদ থাকবে যে গুনাহের স্থানে উপস্থিত ছিল না। আর যে গুনাহে উপস্থিত ছিল না, কিন্তু সেই গুনাহ হওয়াকে খারাপ মনে করল না সে ওই গুনাহের আজাবে সেই ব্যক্তির মতো অংশীদার হবে যে গুনাহের স্থানে উপস্থিত ছিল।’ আবু দাউদ।

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর নির্ধারিত সীমানায় অবস্থানকারী এবং সীমানা লঙ্ঘনকারী ব্যক্তির উপমা ওই সম্প্রদায়ের মতো যারা লটারির মাধ্যমে জাহাজে আরোহণ করেছে। এতে তাদের কেউ ওপরের তলায় আর কেউ নিচের তলায় স্থান পেয়েছে। নিচের তলার লোকটির পানি আনার জন্য ওপরের তলায় যেতে হয়। এতে ওপরের তলার লোকদেরই কষ্ট হয়। এই দেখে নিচের তলার লোকটি একটি কুঠার নিয়ে জাহাজ ছিদ্র করতে আরম্ভ করল। ইত্যবসরে ওপরের তলার লোকজন এসে তাকে বলল তোমার কী হয়েছে? তুমি এ কী করছ! জবাবে সে বলল, আমার যাতায়াতের কারণে তোমাদের কষ্ট হয়। অথচ পানি আনা আমার অতীব প্রয়োজন। এ অবস্থায় তারা যদি তাকে এ কাজ থেকে বিরত রাখে তবে সে বেঁচে যাবে এবং তারাও সবাই বেঁচে যাবে। আর যদি তারা তাকে ছেড়ে দেয় অর্থাৎ জাহাজ ছিদ্র করতে দেয় তবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তারাও ধ্বংস হবে। বুখারি, মিশকাত। কোরআন ও হাদিসের আলোকে বলা যায়, দাওয়াতের কাজ সর্বদা চালিয়ে যেতে হবে, দীনহারা মানুষকে দীনের সবাইকে দাওয়াত দিতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে দীনের দাওয়াতের কাজ করার তাওফিক দান করুন।

            লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর