শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

বৈশ্বিক শান্তির রুহানি দর্শন এশায়াত সম্মেলন

মুহাম্মদ রাশেদ হায়দার মহিউদ্দিন

বৈশ্বিক শান্তির রুহানি দর্শন এশায়াত সম্মেলন

সৃষ্টিকর্তার বিপুল রহস্যের চিত্রায়নে চিত্রিত এ জগৎ সংসার। তার মাঝে বিচিত্র বৈশিষ্ট্যে বিস্ময়কর সৃষ্টি মানুষ। যাদের দিয়েছেন শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট, করেছেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার প্রতিনিধি, নিজেই লিখেছেন যাদের ভাগ্যবিধি। আল কোরআনের ঘোষণা, ‘নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দর অবয়বে।’ সূরা ত্বিন, আয়াত ৪। এবং ‘নিশ্চয় আমি জমিনে প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি।’ সূরা বাকারা, আয়াত ৩০।

মানবীয় শ্রেষ্ঠত্বের নিগূঢ় অস্তিত্বের অনুসন্ধানের পথে পথে রয়েছে মারেফাতের পাথেয়। স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির মিলনের খোদায়ী সেতুবন্ধ। মানবীয় সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যবচ্ছেদে প্রতীয়মাণ হয় পার্থিব ও অপার্থিব উপাদানের সমন্বিত রূপ মানুষ। পার্থিব উপাদানÑ আগুন, পানি, মাটি ও বাতাস থেকে মানুষের জৈবিক সত্তার দৃশ্যমান অবয়ব। আর অপার্থিব উপাদান তথা লতিফা (সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বস্তু)Ñ কলব, রুহ, ছির, খফি, আখ্ফার সমন্বয়ে মানুষের আত্মিক অশরীরী সত্তার গোপন অবয়ব। আল কোরআনের সূরা ত্বাহা, আয়াত ৭-এর ব্যাখ্যায় তাফসিরে মাজহারিতে মানবীয় রহস্যতত্ত্ব প্রসঙ্গে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। নূরজগতের অমূল্য এই নিয়ামতগুলো তথা মনজিলে মকসুদের অভিযাত্রায় সোনালি পথের সোপানগুলো শুধু মানুষকেই দেওয়া হয়েছে, যা মানুষকে করেছে সৃষ্টির মাঝে শ্রেষ্ঠ।

ধূলির জগতে বিচরণকারী মানুষ কীভাবে আলমে আমরের লতিফাসমূহের সংযুক্ত হবে? এই জিজ্ঞাসার বাস্তবতা, ব্যবহারিক উপলব্ধি কাগতিয়া আলিয়া গাউসুল আজম দরবারের মহান মুরশিদ হজরত গাউসুল আজমের তাওয়াজ্জুহ্র গভীরে। তাওয়াজ্জুহ্ শব্দের অর্থ অন্তর্দৃষ্টি নিক্ষেপ করা। গাউসুল আজমের অন্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূরের যে মহাসমুদ্র নীরবে বহমান, তাওয়াজ্জুহ্র মাধ্যমে মানুষের মাঝে বিতরণ করে চলেছেন নবীপ্রেমের রহস্যময়তায়, নূরে মোহাম্মদীর আলোকধারায়। প্রিয় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীÑ ‘তাদের কলবসমুহ তথা অন্তঃকরণ হলো হেদায়েতের আলোকবর্তিকা।’ ইবনে মাজাহ। খোদাকে পাওয়ার গভীর আগ্রহে, নবীপ্রেমের নিবিড় সাগ্রহে, হজরত গাউসুল আজমের শরণাপন্ন হলে তবে তিনি সুমহান অনুগ্রহে তাওয়াজ্জুহ্র প্রক্ষেপণে মানুষের অভ্যন্তরীণ লতিফাসমূহে জারি করেন জিকিরে খোদার গুনগুন গুঞ্জরণে। তবে নূরজগতের কলবের সঙ্গে ধূলির জগতে অবস্থিত মানুষের কলবের সংযোগ সাধিত হয়। এভাবে সব লতিফায় যুক্ত হয় ঐশী তরঙ্গ, ফলে পাপে আসক্ত মানব চায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নৈকট্যলাভের সঙ্গ, জীবনের ভুলগুলো হয় এশকে খোদার আলোড়নে ভঙ্গ, হেদায়েতময় শান্তির স্নিগ্ধতায় হৃদয়ে দোলে প্রেম চতুরঙ্গ। শোকরে সবরে সাজে জীবনের আদি-অন্ত, তাকওয়া-তাওয়াক্কুলে পাড়ি দেয় অনাগত পথের দুর্গম দিগন্ত, খুঁজে ফেরে সতত রেজায়ে খোদার শান্তিময় সীমান্ত, রহমতে রসুল অনন্ত, অশান্ত দিলে নামে চিরশান্তির মনলোভা বসন্ত, প্রেমসুধা আহরণের এ পথে হয় না কভু এতটুকু ক্লান্ত। ইখলাসের ঐশী ডানায় ভর করে ছুটে চলে মানবের কাক্সিক্ষত ঠিকানা মনজিলে মকসুদ, নফসের বিরুদ্ধে গড়ে তোলে তুমুল প্রতিরোধ। অবনমিত করে হিংসা ও ক্রোধ, মানবের আপাদমস্তকে নামে মানবতার মূল্যবোধ, বিনয়ে ভুলে যায় নিষ্ঠুর প্রতিশোধ। ফলে নূর ধারণকারী ওই ব্যক্তির শান্তিতে ভরে ওঠে চারপাশ, যার চলায় বলায় বিচ্ছুরিত হয় ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ, অশান্ত ধরণিতে হয় শান্তির বিকাশ, রুহের গভীরে দোলে খোদা পাওয়ার উচ্ছ্বাস। নূরে মোহাম্মদীর এ দর্শনে খোদায়ীভাবে সুদর্শন হয়ে উঠলে প্রত্যেক ব্যক্তি, পৃথিবীতে বাড়বে শান্তির ব্যাপ্তি, তবে সমাজ হবে প্রেমশুদ্ধ জয়গানে মুখরিত, সত্যিকারের আলোকিত। এভাবে রাষ্ট্রে বইবে আরাধ্য শান্তির সুরভিত সুঘ্রাণ।

তৃষিত মানবাত্মায় তাওয়াজ্জুহ্ তথা অন্তর্দৃষ্টি প্রক্ষেপণ করে নূরে মোহাম্মদীর দীপ্তি ছড়ানোর মাধ্যমে বিশ^ব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার রুহানি দর্শনকে পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যয়ে আগামীকাল ২ মার্চ শনিবার, দুপুর ১টা থেকে ঢাকার গুলিস্তানে কাজী বশির মিলনায়তনের সম্মুখস্থ ময়দানে হতে যাচ্ছে মুনিরীয়া যুব তবলিগ কমিটি বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে কাগতিয়া আলিয়া গাউসুল আজম দরবার তরিকতের ঐতিহাসিক এশায়াত সম্মেলন। আসুন! মিলিত হই শান্তির অবগাহনে, গাউসিয়তের প্রেমনিকেতনে, রুহানিয়াতের রওশনে, নবীপ্রেমের আবাহনে, খোদাকে পাওয়ার ঐশী সম্মোহনে।

ইমেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর