মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

খেলাপি ঋণ আদায়

বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো যেন না হয়

খেলাপি ঋণ দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার জন্য এক মহাহুমকির নাম। এ হুমকি দেশের অর্থনীতিকে বিবর্ণ করে ফেলছে। শিল্পকারখানা স্থাপনে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদের হার দুনিয়ার বেশির ভাগ দেশের চেয়ে বেশি হলেও ব্যাংকগুলোর মুনাফা স্ফীত হচ্ছে না হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপের আবরণে লোপাট হয়ে যাওয়ার কারণে। ব্যাংক কর্মকর্তা ও পরিচালকরা আসল ব্যবসায়ীদের বদলে পার্সেন্টেজ পাওয়ার লোভে জালিয়াতদের ঋণ দিতে বেশি আগ্রহী- এমন একটি সংশয়ও দানা বেঁধে উঠেছে বোদ্ধাজনদের মাঝে। অভিযোগ করা হয় প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের কাছে ঋণ চাইলে তাদের নানা অজুহাতে ঘোরানো হয়। কিন্তু জালিয়াতদের ক্ষেত্রে আলাদিনের চেরাগের দৈত্য নিমেষেই সবকিছু সহজ করে দেয়। খেলাপি ঋণ আদায়ে ১৯৯৭ সালে দেউলিয়া আইন প্রণয়ন করা হলেও এর কার্যকারিতা নিয়ে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকই প্রশ্ন তুলেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তাদের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণ আদায়ে প্রচলিত দেউলিয়া আইন অর্থঋণ আদালত আইনের মতো কার্যকর নয়। গত ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো পর্যালোচনা প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাওনাদারদের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে দেউলিয়া আইনের শরণাপন্ন হওয়ার সুযোগ থাকতে হবে। অর্থঋণ আদালত কর্তৃক দেওয়া চূড়ান্ত রায় বা ডিক্রির আদেশ দেওয়ার পর ঋণ দায় পরিশোধের যে সময় আদালত দিয়ে থাকে ওই সময়ের মধ্যে কোনো দেনাদার অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে অর্থঋণ আদালত দেউলিয়া আদালতে ওই রায় বা ডিক্রির একটি কপি পাঠাতে পারেন; যাতে কপি পাওয়ার পর দেউলিয়া আদালতের জজ দেউলিয়া দেনাদারকে দেউলিয়া ঘোষণার সুযোগ পান। এ বিধান রেখে অর্থঋণ আদালত আইন ও দেউলিয়া আইনের সংশ্লিষ্ট বিধান সংশোধন করা দরকার বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেউলিয়া আইন বাস্তবায়ন এবং এর উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে প্রতিটি জেলায় স্বতন্ত্র দেউলিয়া আদালত প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। খেলাপি ঋণ আদায়ে আইন সংস্কারের প্রস্তাবের যৌক্তিকতা থাকলেও সংস্কারের ক্ষেত্রে যাতে বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরোর অবতারণা না হয় সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর