বুধবার, ৬ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

কাদের ভাই, আল্লাহ মেহেরবান, আপনি ফিরে আসুন

পীর হাবিবুর রহমান

কাদের ভাই, আল্লাহ মেহেরবান, আপনি ফিরে আসুন

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে তাঁর হার্ট চিহ্নিত তিনটি ব্লকের একটিতে রিং লাগিয়ে অপসারণ করা হলেও শঙ্কামুক্ত হননি। কিন্তু জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চলে যাওয়া একজন রাজনীতিবিদ বা নেতার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা যে উত্তম ও সঠিক চিকিৎসা দিয়েছেন সেটি বলে গেছেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও বাইপাস সার্জারির সফল নায়ক ডা. দেবী শেঠী। ওবায়দুল কাদের যখন হাসপাতালের শয্যায় অচেতন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন রাজশাহীতে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে ছিলেন। ফিরেই তিনি ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে যান। তার আগেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ছুটে গেছেন। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ভিড় করেন। বিএনপি নেতারাও সমবেদনা নিয়ে ছুটে যান। গোটা দেশের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সঙ্গে তাঁর সুস্থতা কামনা করে দোয়া করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুততম সময়ে ডা. দেবী শেঠীকেই দেশে আনাননি, সিঙ্গাপুর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে চিকিৎসকসহ নার্সদের আনার ব্যবস্থা করেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের অকালমৃত্যুর পর ওবায়দুল কাদেরের এই অসুস্থতা বড় বোন হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে ব্যথিত, অস্থির ও দুশ্চিন্তায় যে ফেলে দিয়েছে সেটি তাঁর এসব উদ্যোগেই উপলব্ধি করা গেছে। নেতা-কর্মীদের প্রতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কখনো বড় বোনের মতো, কখনো মায়ের মতো স্নেহসিক্ত হৃদয়ে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সারা দেশের অনেক নেতার চিকিৎসা তিনি করিয়েছেন। সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও প্রিন্সিপাল ডা. কোহ সিয়াম সুন ফিলিপের তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছে তাঁর চিকিৎসা। তিনি একজন বিশ্ববিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। চিকিৎসকরা বলেছেন, তাঁর শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। কিডনিতে কিছু সমস্যা রয়েছে, সেটি স্বাভাবিক হয়ে এলে তাঁর বাইপাস সার্জারি হবে। আমরা আশাবাদী মহান আল্লাহর অসীম করুণায় এবং মানুষের অন্তর থেকে উজাড় করা দোয়া ও ভালোবাসায় ওবায়দুল কাদের সুস্থ হয়ে আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন এবং উদ্যমের সঙ্গে দল ও তাঁর মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন কর্মকা-ে সক্রিয় ভূমিকা রাখবেন।

ষাটের দশকে জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্নিঝরা মিছিলের মুখ ওবায়দুল কাদের মুজিববাহিনীর সদস্য হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ডাকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে গেছেন। রণাঙ্গন থেকে ফিরে এসে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাঁর ঠাঁই হয়েছিল। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট মানবসভ্যতার ইতিহাসে ঘটে যাওয়া নৃশংস হত্যাকান্ডে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবার-পরিজনসহ হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে খুনিদের অসাংবিধানিক নিষ্ঠুর দম্ভের শাসন শুরু হয়। রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ডের পথ ধরে জাতীয় চার নেতাকে কারাগারে হত্যা করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর চালানো হয় বর্বর নির্যাতন। কারাগার হয়ে ওঠে তাদের ঠিকানা। সেনাশাসন-কবলিত বাংলাদেশের সেই নিষ্ঠুর শাসনে কারও ঠাঁই হয় কারাগারে, কেউ হন দেশান্তরী। কেউ কেউ পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের নেতৃত্বে জাতীয় মুক্তিবাহিনীর ব্যানারে প্রতিরোধযুদ্ধে ছুটে যান। সেই সময়টা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এবং বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারীদের জন্য ছিল এক ভয়ঙ্কর বিভীষিকাময় অন্ধকার সময়। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের তখন কারাগারে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। কারাগারে বসে ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের সভাপতি ও বাহালুল মজনুন চুন্নু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তাঁদের সঙ্গে ফজলুর রহমান, মুকুল বোস, রবিউল আলম চৌধুরী, ডা. মোস্তাফা জালাল মহিউদ্দিন, খ ম জাহাঙ্গীরসহ অনেক ছাত্রনেতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে তারুণ্যের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে সারা দেশে ছাত্রলীগকে ক্লিন ইমেজের একটি আদর্শিক জনপ্রিয় ছাত্র সংগঠনে পরিণত করেন। সেই পঁচাত্তর-উত্তর দুঃসময়ে আমার বড় ভাই অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান পীর প্রথম সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও পরে দুবার জেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। সেই সময় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আমাদেরও অভিষেক ঘটে। তখন থেকে ওবায়দুল কাদের ও বাহালুল মজনুন চুন্নুর সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক তার আর ছন্দপতন হয়নি। মাঝখানে দলীয় ভাঙন বাহালুল মজনুন চুন্নুকে আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের নেতৃত্বে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ না দিলেও ওবায়দুল কাদের নিরন্তর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে রাজনীতির সিঁড়িপথ অতিক্রম করেছেন সাফল্যের সঙ্গে। ওবায়দুল কাদের ও বাহালুল মজনুন চুন্নুর নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ মহান মুজিবের আদর্শে আমাদের মেধা, সৃজনশীলতা বাগ্মিতায় সংগঠকের পাঠ দিয়ে সুস্থধারার ছাত্র রাজনীতির অনুশীলন দিয়েছিলেন। সেই সময় ওবায়দুল কাদেরের আবেগঘন কাব্যিক বক্তৃতা, ফজলুর রহমানের অনন্যসাধারণ ভাষণ ও রবিউল আলম চৌধুরীর অনলবর্ষী বক্তব্য এবং মিষ্টভাষী বাহালুল মজনুন চুন্নুর সাংগঠনিক দক্ষতা ছাত্রলীগের রাজনীতিকে শক্তিশালী রূপ দিয়েছিল। সেই সময়টি ছাত্রলীগ কার্যত বঙ্গবন্ধুর নামে, মুক্তিযুদ্ধের নামে, অসাম্প্রদায়িক চেতনার জায়গা থেকে মাতৃভূমিকে সামরিক শাসনমুক্ত গণতান্ত্রিক চেহারায় ফিরিয়ে আনার লড়াই একাই করেছিল। সেদিন খুনিচক্র এবং সামরিক শাসকরা স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃতই করেনি, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল। পরে যেসব প্রগতিশীল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল মুজিবকন্যার নৌকায় চড়ে এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন তারাও সেদিন বঙ্গবন্ধুর নামটি আজকের মতো শ্রদ্ধার সঙ্গে নেননি। বরং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের বিজয়ী নেতারা অভিষেক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করতে গিয়ে যখন বঙ্গবন্ধুর নাম গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে নিতেন তখন সেসব অতিবিপ্লবী ও উগ্রপন্থি সমাজতন্ত্রের স্লোগান তোলা তরুণরা সংগঠিত হয়ে প্রতিবাদ করে অনুষ্ঠান প- করে দিতেন। সেই একলা চলো রাজনীতির সময় ছাত্রলীগ কাদের-চুন্নুর নেতৃত্বে শক্তিশালী ছাত্র সংগঠনে পরিণত হয়েছিল। দক্ষিণাঞ্চল থেকে জাহাঙ্গীর কবির নানকের মতো নেতা তৈরি হয়ে এসেছিলেন। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রদীপ করের মতো জনপ্রিয় ছাত্রনেতার জন্ম হয়েছিল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জমির চৌধুরী ও খুরশেদ আলম সুজনের মতো ছাত্রলীগ নেতার আগমন ঘটেছিল। উত্তরবঙ্গ থেকে প্রয়াত বিচারপতি বজলুর রহমান ছানা ও জাহাঙ্গীর কবির রানার মতো ছাত্রনেতারা আলোকিত হয়েছিলেন। কাদেরিয়া বাহিনী থেকে ফিরে এসে সিলেট অঞ্চল থেকে আলোকিত হয়ে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ সাংগঠনিক দক্ষতায় ছাত্র রাজনীতিকে আলোকিত করেছিলেন। পরে ছাত্রলীগ সভাপতি ও ডাকসু ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলন। ’৮১ সালের ছাত্রলীগের ভাঙন ও ’৮৩ সালের আওয়ামী লীগের ভাঙন দলের জন্যই নয়, দেশের মানুষ ও রাজনীতির জন্য কার্যত অভিশাপ বয়ে এনেছিল। সে বিষয়ে পরে কখনো বিস্তর লেখার আশা রয়েছে। পরে সবাই আবার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হলেও ’৭৫-উত্তর দুঃসময়ের সফল নেতৃত্বের সঠিক মূল্যায়ন না ঘটায় বা তাদের গণমুখী নেতৃত্বকে দলে প্রতিষ্ঠত না করায় তার লোকসান গুনেছে দেশের রাজনীতি ও আওয়ামী লীগ নামের দলটি। নেতৃত্বের লড়াইয়ের আবরণে সেই ভাঙন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ফসল হলেও দলের অভ্যন্তরে যারা বিভক্তি ও ভাঙনকে জিইয়ে রেখেছিলেন, খলনায়কের ভূমিকা রেখেছিলেন, ঐক্যের মালা গাঁথতে দেননি, তাদের রাজনীতিই পরে অভিশপ্ত হয়নি, দেশের রাজনীতিও প্রাণহীন, রক্তশূন্য হয়েছে।

’৮১ সালে আওয়ামী লীগের ইডেন কাউন্সিলে দলের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে সুমহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতির বাতিঘর হয়ে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা দলের সভানেত্রী হয়ে নির্বাসিত জীবনের অবসান শেষে দেশে ফিরে দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকেই সংগঠিত করেননি, গণমানুষকে সম্পৃক্তই করেননি, সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যের মঞ্চে নিয়ে এসেছিলেন। সেই সংগ্রামে অন্ধকারের দীর্ঘ রজনী তিনি অতিক্রম করেছিলেন সাফল্যের সঙ্গে। সেই দীর্ঘ সংগ্রামে দলের যেসব নেতা-কর্মী অনন্যসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন তাদের একজন হয়ে উঠেছিলেন ওবায়দুল কাদের। ছাত্রলীগ সভাপতি পদ থেকে বিদায় নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত হলেও তিনি শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত সহকর্মী হিসেবে ছাত্রলীগের অভিভাবকত্বের ভূমিকা পালন করেছেন দীর্ঘদিন। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে ছাত্রলীগ দেখাশোনার জন্য তার টিমকে বলা হতো ওকে কমিশন। এরশাদ জমানায় ডাকসুসহ সব বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রগতিশীল শক্তির ঐক্যের সূচনা করে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরকে পরাজিত করে অসাম্প্রদায়িক শক্তির প্যানেলের একের পর এক বিজয়ের নেপথ্যে শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় ওবায়দুল কাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছেন। সব বিশ্ববিদ্যালয় সেদিন ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের ঐক্যবদ্ধ প্যানেল হলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন বা ডাকসু নির্বাচনে অস্ত্রনির্ভর ছাত্র রাজনীতির সেদিনের দাপুটে ছাত্র সংগঠন ছাত্রমৈত্রী ও জাসদ ছাত্রলীগসহ ছোটখাটো ছাত্র সংগঠন নিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্যানেল দিলেও গভীর ষড়যন্ত্রের পথে সেদিন ছাত্রলীগকে বাইরে রাখা হয়েছিল। সেদিন ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে আমি নিজেও সিনেট সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছিলাম। আমাদের প্যানেল পরাজিত হলেও সেদিন ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের সব সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে নির্বাচনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাশে ছিলেন। ছাত্রলীগ সেখানে এখনো শক্তিশালী সংগঠন। আর সেসব অস্ত্রনির্ভর ছাত্র সংগঠনের অস্তিত্ব বিলুপ্ত। ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনার প্রতিটি সরকারের সফল মন্ত্রীই হননি দল ও নেতৃত্বের প্রতি গভীর আনুগত্য, কর্মীবান্ধব গণমুখী চরিত্র আর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেননি, যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী হিসেবে তিনি সাফল্যের মাইলফলক রচনা করেছেন। দল ও মানুষের কল্যাণের রাজনীতির অনেক দায়িত্ব এখনো মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত সহচর ওবায়দুল কাদেরের ওপর অর্পিত রয়েছে। তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে এসে দলের ও মানুষের জন্য নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ হিসেবে ভূমিকা রাখবেনÑ এই মুহূর্তে মহান আল্লাহর কাছে মানুষের এটিই প্রার্থনা। ওবায়দুল কাদেরের মধ্যে সারল্যও রয়েছে। তাঁর মধ্যে মিডিয়াবন্ধব চরিত্র রয়েছে। ছাত্রলীগের সভাপতি থেকে বিদায় নেওয়ার পর তিনি বাংলার বাণীতে সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। বিভিন্ন সাপ্তাহিকে নিয়মিত লেখালেখি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। একালের মতো সেকালের ছাত্র রাজনীতিতে বিত্তবৈভবের নেশার চাইতে আদর্শ প্রতিষ্ঠার লড়াইটাই ছিল বড়। তিনি সেই লড়াইটিই করেছিলেন। সব দলের নেতার সঙ্গে তাঁর একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কও রয়েছে। এত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি নিয়মিত পড়াশোনা করেন এবং লেখালেখি করেন। তাঁর উপন্যাস গাঙচিল অবলম্বে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। মানুষের ভালোবাসা ও হৃদয়নিঃসৃত দোয়া তাঁকে আবারও সুস্থ করে রাজনীতির মঞ্চে আল্লাহ রব্বুল আলামিন ফিরিয়ে আনবেন- এটিই আমাদের প্রতাশা। তাঁর রাজনৈতিক চরিত্রের বড় গুণ ’৭৫-এর পরই নয়, ওয়ান-ইলেভেনের শাসনামলেও তিনি কারানির্যাতন ভোগ করেছেন। কিন্তু তাঁর আদর্শিক শক্তির বড় জায়গাটিই হচ্ছে দল ও নেতৃত্বের প্রতি তিনি কখনো তাঁর আনুগত্য থেকে বিচ্যুত হননি। নেতৃত্ব ও দলের প্রতি লক্ষ্য অর্জনের পথে অবিচল থেকেছেন। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন ওবায়দুল কাদের। কাদের ভাই, আল্লাহ মেহেরবান, আপনি ফিরে আসুন।

            লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সর্বশেষ খবর