রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

স্মৃতির পাতায় জাতির জনক

তোফায়েল আহমেদ

স্মৃতির পাতায় জাতির জনক

এবারের ১৭ মার্চ মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মদিন। জাতি প্রতি বছর এ দিনটি যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করে। ২০২০-এ পালিত হবে জাতির জনকের শততম জন্মবার্ষিকী। প্রতি বছর এ দিনটি যখন আমাদের জীবনে আসে তখন জাতির জনকের কথা স্মৃতির পাতায় বার বার ভেসে ওঠে। সৌভাগ্যবান মানুষ আমি। ইতিহাসের মহামানব দুনিয়ার নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য লাভ করেছি। কেন যেন এবার আরও বেশি করে বঙ্গবন্ধুকে মনে পড়ে। প্রতিটি দিন যখন যায় স্মৃতির পাতায় বঙ্গবন্ধুর ছবি ভেসে ওঠে। কাছে থেকে দেখেছি মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা। ছোট-বড় সবাইকে তিনি সম্মানের চোখে দেখতেন। পৃথিবীতে কত নেতা এসেছেন, আসবেন; কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো এমন বিশাল হৃদয়ের মানুষ দুর্লভ। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আমার মনে হয়, ১৯২০-এর ১৭ মার্চ, যেদিন তিনি জন্মগ্রহণ করেন, সেদিনই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের জন্মের সূচনা হয়। তা না হলে কে বুঝেছিল যে, ভারতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন হবে, সে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ’৪৭-এর ১৪ আগস্ট ‘পাকিস্তান’ নামক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হবে এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে অর্থাৎ ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের যুবকদের উদ্যোগে গঠিত গণতান্ত্রিক যুবলীগের কর্মী সম্মেলনে ভাষাবিষয়ক কিছু প্রস্তাব উত্থাপন করে সেদিনের ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বীজ বপন করবেন- এ কথা কি কেউ ভেবেছিল? রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে সেদিন তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘বাংলা ভাষাকে পূর্ববঙ্গের লিখার বাহন ও আইন-আদালতের ভাষা করা হোক। সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কি হবে তৎসম্পর্কে আলাপ-আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার জনসাধারণের ওপর ছেড়ে দেওয়া হোক এবং জনগণের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গ্রহণ করা হোক।’ (সূত্র : ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা, গাজীউল হক)। সেজন্যই আমার মনে হয়, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনটির সঙ্গে বাংলাদেশের জন্মও যুক্ত।

আমি বঙ্গবন্ধুর কাছে ছিলাম। সবসময় বলি আমি একজন ভাগ্যবান মানুষ। যে নেতার জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না, সে রকম একজন মহান নেতার সান্নিধ্য, ভালোবাসা, স্নেহ, আদর পাওয়া, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম পাওয়া। মনে পড়ে ’৭০-এ বরিশাল-পটুয়াখালী-ভোলা অঞ্চলে নির্বাচনী সফরের কথা। ২৪ ফেব্রুয়ারি ছিল ভোলায় নির্বাচনী জনসভা। এদিন ভোলার ইতিহাসে সর্ববৃহৎ গণসমাবেশে বঙ্গবন্ধু আমাকে আমি যা না তার চেয়ে অনেক বড় করে তুলে ধরে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু নেতা-কর্মীদের এভাবে সম্বোধন করতেন। তিনি ছোটকে বড় করে তুলতেন। যেসব জায়গায় সফর করতেন, সেখানকার নেতা-কর্মীদের কর্মকা-কে মানুষের কাছে বড় করে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকে থানা, থানা আওয়ামী লীগের নেতাকে জেলা এবং জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকে জাতীয় নেতায় রূপান্তরিত করে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হয়েছেন। ফলে সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর চেতনা ধারণ করে টিকে আছে। কারও দুঃখ তিনি সহ্য করতে পারতেন না- সে যেই হোক। তিনি সহজেই পরকে আপন করেছেন। যারা বিরোধী ছিলেন তাঁর ভুবন-ভোলানো আচার-আচরণে তাদের কাছে টেনেছেন। তিনি যখন বলতেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না’, মানুষ তা-ই বিশ্বাস করত। তিনি ক্ষমতার জন্য, ক্ষমতায় থাকার জন্য, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য রাজনীতি করেননি। প্রিয় মাতৃভূমিকে পাকিস্তানি শোষণ-বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা করে বাঙালিরা যাতে বাংলাদেশের ভাগ্যনিয়ন্তা হতে পারে সেজন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতেই তিনি রাজনীতি করেছেন।

বিশেষভাবে মনে পড়ে ’৭১-এর ৩ জানুয়ারির কথা। ঐতিহাসিক রেসকোর্স (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে নবনির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। শপথ গ্রহণ করাবেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু। সেদিন বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘৬ দফা ও ১১ দফা আজ আমার নয়, আমার দলেরও নয়। এ আজ বাংলার জনগণের সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। কেউ যদি এর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে বাংলার মানুষ তাকে জ্যান্ত সমাধিস্থ করবে। এমনকি আমি যদি করি আমাকেও।’ জনগণের জন্যই ছিল তাঁর রাজনীতি ও কর্মসূচি। বক্তৃতায় সেদিন আরও বলেছিলেন, ‘আমাকে মোনেম খান কাবু করতে পারেনি, এমনকি আইয়ুব খানও পারেনিÑ কিন্তু আমাকে দুর্বল করে দিয়েছে আপনাদের এই অকুণ্ঠ ভালোবাসা। আপনারা দোয়া করবেন যেন আপনাদের এই ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারি।’ বাংলার মানুষের প্রতি ভালোবাসার মর্যাদা দিতে তিনি একাই রক্ত দেননি সপরিবারে রক্ত দিয়ে সে ঋণ পরিশোধ করে গেছেন।

বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে কত স্মৃতি মনের চারপাশে ভিড় করে। ’৭১-এর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের কথা। যে ভাষণ আজ ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল’ হিসেবে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে আসীন। সেদিন তিনি একটি ভাষণের মধ্য দিয়ে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে নিরস্ত্র বাঙালিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত করেছেন। সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে জাতীয় মুক্তির মোহনায় দাঁড় করিয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই ৭ মার্চের ভাষণ ছিল আমাদের পাথেয়। মুক্তিযুদ্ধের কালপর্বে বন্দী থাকলেও তাঁর উপস্থিতি ছিল আমাদের হৃদয়ে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণার প্রারম্ভে তিনি বলেছিলেন, ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।’ তাঁর এই শেষ বার্তা হৃদয়ে ধারণ করে হাতিয়ার তুলে নিয়ে নয় মাস যুদ্ধ করে ১৬ ডিসেম্বর দেশকে হানাদারমুক্ত করেও আমরা স্বাধীনতার স্বাদ অনুভব করতে পারিনি। ’৭২-এর ১০ জানুয়ারি যেদিন তিনি স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন সেদিন মনে হয়েছে আজ আমরা প্রকৃতই স্বাধীন। এরপর ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৪ জানুয়ারি মাত্র ২৯ বছর বয়সী আমাকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় তাঁর রাজনৈতিক সচিব নিয়োগ করেন; যা কখনো কল্পনাও করিনি। দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে ১০ এপ্রিল ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ’-এর প্রথম অধিবেশনে দেশের জন্য সংবিধান প্রণয়নের ঘোষণা দেন। মাত্র সাত মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা অর্জন করি সদ্য স্বাধীন দেশের উপযোগী বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান। শূন্য হাতে যাত্রা করে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে তিনি গড়ে তোলেন। বিশ্বের ১১৬টি দেশের স্বীকৃতি আদায় করে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করেন। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে যেদিন তিনি লন্ডনে, সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘বাংলাদেশ তো এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।’ তখন বলেছিলেন, ‘এই ধ্বংসস্তূপ থেকেই একদিন আমার প্রিয় মাতৃভূমিকে সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা, ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করব।’ প্রশাসনিক সংস্কার করে, সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক বিকাশ বেগবান করে একটি আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠার জন্য ঠিক যা যা করা দরকার তিন বছর সাত মাস নিরলস পরিশ্রম করে তিনি সেসবের ভিত্তি স্থাপন করেন।

আজ তাঁর জন্মদিনে মনে পড়ছে ’৭১-এর রক্তঝরা মার্চের ১৭ তারিখের কথা। সেদিন ছিল বঙ্গবন্ধুর ৫২তম জন্মদিন। দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলন চলছে। ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনা শেষে তখনকার প্রেসিডেন্ট ভবন অর্থাৎ পুরাতন গণভবন সুগন্ধা থেকে দুপুরে যখন তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে ফিরে এলেন তখন বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনাকালে একজন সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেন, ‘৫২তম জন্মদিনে আপনার সবচাইতে বড় ও পবিত্র কামনা কী?’ উত্তরে স্বভাবসুলভ কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘জনগণের সার্বিক মুক্তি।’ এরপর সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনকালে বেদনার্ত স্বরে বলেছিলেন, ‘আমি জন্মদিন পালন করি না, আমার জন্মদিনে মোমের বাতি জ্বালি না, কেকও কাটি না। এ দেশে মানুষের নিরাপত্তা নাই। আপনারা আমাদের জনগণের অবস্থা জানেন। অন্যের খেয়ালে যে কোনো মুহূর্তে তাদের মৃত্যু হতে পারে। আমি জনগণেরই একজন, আমার জন্মদিনই কি, আর মৃত্যুদিনই কি? আমার জনগণের জন্য আমার জীবন ও মৃত্যু। আমি তো আমার জীবন জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছি।’ বিশাল হৃদয়ের মহৎ মনের মানুষ ছিলেন তিনি। নিজের সবকিছুই জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। অতি সাধারণ জীবন ছিল তাঁর। রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়েও সরকারি বাসভবনে থাকতেন না। নিরাভরণ, ছিমছাম ৩২ নম্বরের বাড়িটিতেই আমৃত্যু থেকেছেন। ধানমন্ডিতে যখন প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয় তখন ভালো একটি প্লট নেওয়ার শত অনুরোধ সত্ত্বেও বলেছিলেন, ‘আগে সবাইকে দাও, তারপর যদি থাকে তখন দেখা যাবে।’

বঙ্গবন্ধুর কথা এবং বক্তৃতায় প্রায় সময়ই উদ্ধৃত হতো রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত-জীবনানন্দের কবিতার চরণ। এত সাবলীল আর প্রাসঙ্গিকতায় তিনি কবিতা আবৃত্তি করতেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে হতো। মনে পড়ে ’৭১-এর রক্তঝরা মধ্য মার্চের কথা। যখন ইয়াহিয়ার সঙ্গে আলোচনা চলছে তখন বিদেশি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে নজরুলের কবিতা থেকে তরজমা করে বলতেন,  I can smile even in hell; কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা থেকে বলতেন, ‘চারিদিকে নাগিণীরা ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস, শান্তির ললিত বাণী শুনাইবে ব্যর্থ পরিহাস।’ সে সময় অগ্নিঝরা মার্চে একদিকে চলছে আলোচনার নামে ইয়াহিয়ার প্রহসন ও গণহত্যার আয়োজন এবং অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আসন্ন মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমরা প্রতিদিন ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি। সারা দেশে ‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার’ কাজ পূর্ণোদ্যমে এগিয়ে চলেছে। রবীন্দ্রনাথ-নজরুল ছিল নেতার অভয় মন্ত্র। এ মার্চেই টঙ্গীতে পাক সেনাবাহিনীর গুলিতে বহু শ্রমিক হতাহত হয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের এক বিশাল মিছিল ভয়াল গর্জনে সমবেত হয় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে। উত্তেজিত শ্রমিক শ্রেণির উদ্দেশে বক্তৃতাদান শেষে বিদ্রোহী কবিকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘বিদ্রোহী রণক্লান্ত, আমি সেইদিন হব শান্ত, যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না...।’ ২৫ মার্চের থমথমে দিনটির কথা মনে পড়ে। সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে বের হই, কাজ শেষে পুনরায় নেতার সঙ্গে দেখা করি। বিদায় নেওয়ার সময় বলি, বঙ্গবন্ধু আমার তো মনে হয় তারা অবশ্যই আপনাকে গ্রেফতার করবে। দৃঢ়প্রত্যয়ী বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘করুক না। তাতে কী? ওরা আমাকে আগেও গ্রেফতার করেছে এবং তাতে ওদের কোনো লাভ হয় নাই। ওরা ফের আমাকে গ্রেফতার করতে পারে। কিন্তু এ থেকে ওরা কী সুবিধা পাবে আমি জানি না। ওরা যদি আমাকে মেরেও ফেলে তাতেও ওদের কোনো লাভ হবে না। আমার মৃত্যুর বদলা নিতে বাংলার মাটিতে হাজারও শেখ মুজিবের জন্ম হবে। ওদের দিন শেষ এটা ওরাও জানে। দীর্ঘদিনের সংগ্রামের পর আজ এই সত্যই আমার হৃদয়টাকে অনাবিল আনন্দে ভরে দিচ্ছে। ওরা যদি আমাকে মেরে ফেলে এবং তুমি আমার লাশ দেখার সুযোগ পাও তখন দেখবে, আমি কেমন সুখে হাসছি।’ গণহত্যা শুরুর প্রাক্কালে সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে বিষাদাচ্ছন্ন স্বরে বলেছিলেন, ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়...।’ আশ্চর্যরকম অবলীলায় পরিস্থিতি-পরিবেশের সঙ্গে যুক্ত করে মৃত্যুঞ্জয়ী শক্তি নিয়ে তিনি এসব কাব্যাংশ উচ্চারণ করতেন। বঙ্গবন্ধু জীবনের প্রতিটি ধাপেই বাঙালির সার্বিক মুক্তির জয়গান গেয়েছেন। সবসময় বলতেন, এমনকি দুবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও বলেছেন, ‘ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা।’ খ্যাতনামা সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘হোয়াট ইজ ইউর কোয়ালিফিকেশন?’ উত্তরে বলেছিলেন, ‘আই লাভ মাই পিপল।’ ফ্রস্টের পরের প্রশ্নই ছিল, ‘হোয়াট ইজ ইউর ডিসকোয়ালিফিকেশন?’ বলেছিলেন, ‘আই লাভ দেম ঠু মাচ।’ যে বাংলার স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, যে বাংলার জন্য তিনি যৌবনের অধিকাংশ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন, ফাঁসির মঞ্চে গেয়েছেন বাঙালির জয়গান, সেই বাংলা ও বাঙালির জন্য তাঁর ভালোবাসা ছিল অপরিসীম। সমুদ্র বা মহাসমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ করা সম্ভব; কিন্তু বাংলা ও বাঙালির জন্য বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের যে দরদ, যে ভালোবাসা তার গভীরতা অপরিমেয়।

বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হিসেবে সারা দেশসহ বিশ্বের বহু দেশ সফর করেছি। তিনি অন্তরে যা বিশ্বাস করতেন দেশের মানুষকে তা-ই বলতেন। একবার যা অঙ্গীকার করতেন জীবন দিয়ে হলেও তা বাস্তবায়ন করতেন। এজন্যই দেশের মানুষ তাঁকে বিশ্বাস করত। শুধু দেশের মানুষ নয়, বিশ্বের রাষ্ট্রনায়কগণ বঙ্গবন্ধুকে অপরিসীম শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। যেখানেই গেছেন মানুষ তাঁকে আপন করে নিয়েছে। তৎকালের বিশ্ববরেণ্য নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রপ্রধান নিকোলাই পোদগর্নি, প্রধানমন্ত্রী আলেক্সেই কোসিগিন, কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক লিওনিদ ইলিচ ব্রেজনেভ, যুগোশ্লাভিয়ার রাষ্ট্রনায়ক মার্শাল জোসেফ ব্রোজ টিটো, ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান শ্রী ভিভি গিরি এবং প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী, জার্মান চ্যান্সেলর হেলমুট স্মিথ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডো, আলজেরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান হুয়ারে বুমেদিন, তানজানিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান জুলিয়াস নায়ারে, গ্রেট ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডোয়ার্ড হিথ, কিউবার রাষ্ট্রপ্রধান ফিদেল কাস্ত্রো, মালয়েশিয়ার টুংকু আবদুর রহমান, জাম্বিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান কেনেথ কাউন্ডাÑ প্রত্যেকেই বঙ্গবন্ধুকে অশেষ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শেষ সফর করেছি জ্যামাইকার কিংস্টনে। কাছ থেকে দেখেছি বিশ্ব নেতৃবৃন্দ কতটা সম্মান করতেন বঙ্গবন্ধুকে। বিশেষভাবে মনে পড়ে ’৭৪-এর ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের কথা। বঙ্গবন্ধুকে প্রথমেই অনুরোধ করা হয়েছিল ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ইংরেজিতে বক্তৃতা করবেন।’ কিন্তু প্রিয় মাতৃভাষা বাংলার প্রতি সুগভীর দরদ ও মমত্ববোধ থেকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করতে চাই।’ পিনপতন নিস্তব্ধতার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৪৫ মিনিট বক্তৃতার শেষে সভাপতি নিজেই যখন দাঁড়িয়ে করতালি দিচ্ছেন, তখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক ও প্রতিনিধি দলের সদস্যবৃন্দ বিপুলভাবে করতালি দিয়ে আলিঙ্গন করে অভিনন্দিত করেছেন বঙ্গবন্ধুকে। অভাবনীয় সেই দৃশ্য। নিজ চোখে না দেখলে লিখে বোঝানো সম্ভবপর নয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতির হিমালয়সম উচ্চতায় আসীন ছিলেন তিনি। অধিবেশনে আগত বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যগণ আমাদের বলেছিলেন, ‘সত্যিই তোমরা গর্বিত জাতি। তোমরা এমন এক নেতার জন্ম দিয়েছো, যিনি শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, এশিয়ার নেতা নন; তিনি সমগ্র বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা।’ নিজের জন্য কিছুই চাইতেন না। অন্যের দুঃখ-কষ্টের প্রতি অপরিসীম দরদ তাকে সর্বদাই আবেগাপ্লুত করত। একবার এক জনসভায় তিনি বলেছিলেন, ‘একজন মানুষ আর কী চাইতে পারেÑ আমি যখন ভাবি দূরে এক জনশূন্য পথের ধারে আধো আলো-ছায়ায় এক লোক লণ্ঠন হাতে দাঁড়িয়ে আছে শুধু আমাকে এক নজর দেখবে বলে, তখন মনে হয়, একজন মানুষের পক্ষে আর কী চাওয়া-পাওয়ার থাকতে পারে।’ নিরন্ন-হতদরিদ্র-মেহনতি মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল প্রগাঢ় ভালোবাসা। তা প্রতিফলিত হয়েছে, অভিব্যক্ত হয়েছে তাঁর প্রতিটি কর্মে এবং চিন্তায়। ’৭৩-এর ৯ সেপ্টেম্বর, আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত শোষক আর শোষিত; আমি শোষিতের পক্ষে।’

’৭৫-এর জানুয়ারির ১১ তারিখের কথা আমার স্মৃতির মণিকোঠায় এখনো জ্বলজ্বল করে। এদিন বাংলাদেশ সামরিক একাডেমিতে প্রথম শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে বিদায়ী ক্যাডেটদের উদ্দেশে এক মর্মস্পর্শী বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘...আমি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এ কথা বলছি না, তোমাদের জাতির পিতা হিসাবে আদেশ দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী অনেক হবেন, অনেক আসবেন, প্রেসিডেন্টও অনেক হবেন, অনেক আসবেন। কিন্তু জাতির পিতা একবারই হন, দুবার হন না। জাতির পিতা হিসাবেই যে আমি তোমাদের ভালোবাসি, তা তোমরা জানো। আমি তোমাদের আবার বলছি, তোমরা সৎ পথে থাকবে, মাতৃভূমিকে ভালোবাসবে। মনে রেখো, তোমাদের মধ্যে যেন পাকিস্তানি মনোভাব না আসে। তোমরা পাকিস্তানের সৈনিক নও, বাংলাদেশের সৈনিক। তোমরা হবে আমাদের জনগণের বাহিনী।’ দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর স্বৈরতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামের অভিজ্ঞতা থেকে জাতির জনক যে শিক্ষা অর্জন করেছিলেন সেই চেতনায় স্বাধীন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে তিনি ‘জনগণের বাহিনী’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। বক্তৃতায় তিনি বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর অভিপ্রায় ব্যক্ত করে সেনা সদস্যদের আদর্শবান হওয়ার, সৎ পথে থাকার অঙ্গীকার করে দৃঢ়তার সঙ্গে স্নেহার্দ্র কণ্ঠে কবি জীবনানন্দ দাশের জননী কবি কুসুমকুমারী দাশের কবিতা থেকে উদ্ধৃত করেছিলেন, ‘মুখে হাসি বুকে বল তেজে ভরা মন, মানুষ হইতে হইবে মানুষ যখন।’

অতুলনীয় সংগঠক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রত্যেককে দেখতেন নিজ পরিবারের সদস্যের মতো। প্রতিটি নেতা-কর্মীর বিপদ-আপদে তিনি তাদের পাশে দাঁড়াতেন পরম হিতৈষীর মতো। মমতা মাখানো সাংগঠনিক প্রয়াস নিয়ে কর্মীদের হৃদয় জয় করে নেওয়ার ব্যতিক্রমী এক ক্ষমতা ছিল তাঁর। ’৭২-এর ১৪ এপ্রিল, আমি তখন গ্যাস্ট্রিক-আলসারে আক্রান্ত হয়ে হলিফ্যামিলিতে চিকিৎসাধীন। বঙ্গবন্ধু আমাকে দেখতে এসেছেন। সস্নেহে আমার হাত ধরে, পরম মমতায় কপালে হাত বুলিয়ে আদর করে খোঁজখবর নিয়েছেন। আমার একমাত্র কন্যা মুন্নী যখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে তখন টিভিতে ওর অনুষ্ঠান দেখে ওকে স্নেহাশিস জানিয়েছিলেন। তাঁর অপরিসীম ভালোবাসা ছিল শিশুদের প্রতি। ফটোজার্নালিস্টরা প্রশ্ন করতেন, ‘বঙ্গবন্ধু, আপনি এত ছবি তোলেন কেন?’ বলতেন, ‘ভবিষ্যতের মানুষ যারা, ওরা বড় হয়ে দেখবে কেমন ছিল ওদের নেতা।’ বঙ্গবন্ধু যখন গণভবনে যেতেন, সামনে পেছনে দুটি গাড়ি থাকত। রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যাল পড়লে আমাদের গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ত। একদিনের কথা খুব মনে পড়ে। একবার আমাদের গাড়ি সিগন্যালে দাঁড়ানো, হঠাৎ একটি শিশু কত বয়স হবে সাত কি আট, গাড়ির কাছে এসে বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ করে বলছে, ‘স্লামুআলাইকুম, মুজিব সাহেব!’ তৎক্ষণাৎ বঙ্গবন্ধু শিশুটির হাত ধরে আদর করলেন, ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আমি পাশে বসে দেখেছি শিশুদের প্রতি একজন রাষ্ট্রনায়কের অপার ভালোবাসা আর অপূর্ব মমত্ববোধ। শিশুদের প্রতি তাঁর অপার ভালোবাসার ফলে জাতির জনকের জন্মদিনটি ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন পরশপাথরের মতো। তাঁর পুণ্য হাতের ছোঁয়ায় আমরা সবাই নিরস্ত্র থেকে সশস্ত্র হয়েছিলাম; অচেতন থেকে সচেতনতার এমন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিলাম যে আমরা স্বপ্ন দেখতাম শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের। দীর্ঘ নয় মাস চৌদ্দ দিন কারাবাসের পর পাকিস্তানের জিন্দানখানা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করে ’৭২-এর ১০ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে সর্বকালের সর্ববৃহৎ গণমহাসমুদ্রে রবিঠাকুরকে উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ‘সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি।’ অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেছিলেন, ‘কবিগুরু, তুমি এসে দেখে যাও, তোমার বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে, তুমি ভুল প্রমাণিত হয়েছো, তোমার কথা আজ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে...।’

বঙ্গবন্ধুর একান্ত সান্নিধ্যে থেকে দেখেছি তাঁর কৃতজ্ঞতাবোধ, বিনয়, মানুষের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা। আকাশের মতো উদার তাঁর হৃদয়, জ্যোতির্ময় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন তিনি। স্বদেশে কিংবা বিদেশে সমসাময়িক নেতা বা রাষ্ট্রনায়কদের তাঁর তেজোময় ব্যক্তিত্বের ছটায় সম্মোহিত করার, উদ্দীপ্ত করার এক আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল বঙ্গবন্ধুর। বীরত্ব, সাহস ও তেজস্বতার স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে ছিলেন ভাস্বর। তাঁর কাছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ছিল ন্যায়সংগত। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব হিসেবে তাঁর একটা তহবিল থাকত আমার কাছে। এ তহবিল থেকে বঙ্গবন্ধু বিভিন্নজনকে সাহায্য-সহায়তা করতেন। এর মধ্যে দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও বিরোধী দলের প্রতিপক্ষীয় লোকজনও ছিলেন। কিন্তু শর্ত ছিল যাদের অর্থ সাহায্য দেওয়া হচ্ছে তাঁদের নাম-ঠিকানা গোপন রাখতে হবে, প্রকাশ করা যাবে না। বঙ্গবন্ধু কখনই মানুষের মনে আঘাত দিয়ে কথা বলতেন না। তাঁর রাজনৈতিক বক্তব্য ছিল মার্জিত, বক্তব্যে ব্যক্তিগত বিষয়কে প্রাধান্য দিতেন না। বঙ্গবন্ধুর সময়ানুবর্তিতা, নিয়মানুবর্তিতা ছিল অসাধারণ। সময়ের এক চুল হেরফের হতো না, ঘড়ি ধরে অনুষ্ঠানাদিতে যেতেন। দলের নেতা-কর্মী সবার প্রতি ছিল গভীর মমত্ববোধ। তাদের কাজের মর্যাদা দিতেন, ভালোবেসে বুকে টেনে নিতেন। অফুরন্ত প্রাণশক্তির অধিকারী বঙ্গবন্ধুর সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল অপরিসীম। এক মুহূর্তে মানুষকে আপন করে নেওয়ার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা ছিল তাঁর। নীতির প্রশ্নে ছিলেন অটল। ’৭৪-এ দলের কাউন্সিলে দলীয় পদ ত্যাগ করে সভাপতির পদটি ছেড়ে দিয়েছিলেন। তদস্থলে আসীন হয়েছিলেন শ্রদ্ধাভাজন জননেতা শহীদ কামারুজ্জামান সাহেব। আবার ’৫৭ সালে করেছিলেন বিপরীত কাজটি অর্থাৎ মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দলীয় পদে বহাল করেছিলেন নিজেকে। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী নিজস্ব অবস্থান কোথায় হওয়া উচিত সেটি যেমন বুঝতেন, তেমনিভাবে কে কোথায় যোগ্যতর আসনে অধিষ্ঠিত হবেন তাঁকে সে জায়গাটিতে বসিয়ে দিতে ভুল করতেন না। বজ্রকণ্ঠের অধিকারী বঙ্গবন্ধু ছিলেন অতুলনীয় বাগ্মী। আর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল বক্তৃতায় বিভিন্ন কবির কবিতা থেকে উদ্ধৃতি চয়ন যা আমি আগেই উল্লেখ করেছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গুণবাচক বৈশিষ্ট্যের কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমার পরম সৌভাগ্য হয়েছিল ইতিহাসের এই মহামানবের একান্ত সান্নিধ্যে আসার। আমার জীবন ধন্য। বঙ্গবন্ধু ছিলেন পরশপাথরের মতো।

লেখক : আওয়ামী লীগ নেতা, সংসদ সদস্য, সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

[email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর