রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

আল্লাহর অনুগ্রহের মাস রজব

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

আল্লাহর অনুগ্রহের মাস রজব

আল্লাহর দেওয়া প্রতিটি বছর, প্রতিটি মাস, প্রতিটি সপ্তাহ, প্রতিটি দিন, প্রতিটি ঘণ্টা, প্রতিটি মিনিট ও প্রতিটি সেকেন্ড অতি মূল্যবান। বান্দার জন্য আল্লাহর দেওয়া হায়াতটি মহামূল্যবান। যুগে যুগে অনেক মহামনীষী নিজেদের হায়াতকে মূল্যায়ন করেছেন। আল্লাহ ও রসুলদের বাতলানো পথে চলেছেন। অহেতুক কর্ম না করে যে পথ ও মতে চললে আল্লাহ ও রসুলদের পাওয়া যাবে সে পথ ও মতে চলেছেন। রসুলদের কথা মেনে আল্লাহর রেজা ও সন্তুষ্টি অর্জন করেছেন তাঁরাই ইতিহাসের পাতায় কিয়ামত পর্যন্ত অমর হয়ে থাকবেন। মানুষের সুবিধার্থে আল্লাহতায়ালা বছরে বারোটি মাস দিয়েছেন। এ বারো মাসের মধ্যে রজব অত্যন্ত সম্মানিত। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আসমানসমুহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে মাসের সংখ্যা বারোটি, এর মধ্যে চারটি হচ্ছে (যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্য) নিষিদ্ধ মাস; এটা নির্ভুল ব্যবস্থা। অতএব, তার ভিতরে (হানাহানি করে) তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করো না।’ সূরা তওবা, আয়াত ৩৬। মাহে রজবের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। এক. রজব আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের মাস। প্রত্যেক মুসলিম ভাইবোনের উচিত এ মাসে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দয়া, রহমত ও বরকত প্রার্থনা করা। দুই. রজব বান্দার গুনাহ মাফের মাস। তাই এ মাসে মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি নিজের গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করা চাই। এ ছাড়া রজবের সঙ্গে ইসলামের অতীত ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাসে রব্বুল আলামিনের ডাকে সাড়া দিয়ে আকাশপানে মিরাজে গমন করেছিলেন। মিরাজের রজনীতে রব্বুল আলামিন দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তাঁর বান্দার ওপর ফরজ করেছেন এবং ঘোষণা দিয়েছেন যদি কোনো বান্দা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সঠিকভাবে আদায় করে তাহলে তাকে ৫০ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার সওয়াব দেওয়া হবে। সুবহানাল্লাহ। এ মাসে হজরত নুহ আলাইহিস সালাম মহাপ্লাবনের আশঙ্কায় কিস্তিতে আরোহণ করেছিলেন। এ ছাড়া এ মাসে বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। আইয়ামে জাহেলিয়ায় পুরো আরবে বছরের মধ্যে চার মাস যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ থাকত। মহিমান্বিত রজব মাসে আরবে যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কিরামের রজব মাসে যুদ্ধবিগ্রহ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। বায়হাকিতে বান্দার দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে পাঁচটি বিশেষ রাতের বিষয় উল্লেখ রয়েছে। এর প্রথমটি হলো জুমার রাত, দ্বিতীয়টি ঈদুল ফিতরের রাত, তৃতীয়টি ঈদুল আজহার রাত, চতুর্থটি রজবের চাঁদ উদয়ের প্রথম রাত, পঞ্চমটি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত। এক কথায় বলা হয়, রজব হলো দোয়া কবুলের মাস। বান্দার ক্ষমা লাভের মাস। রমজানের প্রস্তুতি নেওয়ার মাস।

অন্যান্য মাসের মতো রজবের জন্য বিশেষ কিছু নফল আমল রয়েছে; যার মাধ্যমে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের পথ সুগম হয়। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই হাত তুলে এ দোয়া পাঠ করতেন এবং সাহাবিদের পড়তে বলতেন, ‘হে আল্লাহ রজব আর শাবান মাসে আমাদের বরকত দান করে রমজান পর্যন্ত আমাদের জীবিত রাখুন, আমাদের রমজানের ফজিলত অর্জন করার তাওফিক দান করুন।’ আহমদ।

রজব এলে সাহাবায়ে কিরাম, তাবেইন, তাবেতাবেইন, আয়িম্মায়ে মুজতাহিদিনসহ মুমিন বান্দারা অন্যান্য মাসের মতো বেশি বেশি নফল ইবাদত করতেন। নেক আমলের পাল্লা ভারী করার জন্য নেক আমল বাড়িয়ে দিতেন। এ মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতকে শবেমিরাজ বলা হয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে যে কয়েকটি মোজেজা সংঘটিত হয়েছিল, এর মধ্যে মিরাজ তাঁর সর্বোচ্চ মোজেজা। প্রিয় পাঠক! রজব মাস শেষ হতে আর মাত্র কয়েক দিন বাকি আছে। আমরা যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সঠিকভাবে পড়ি প্রতি নামাজের পর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো দোয়াটি পাঠ করি যা ওপরে লেখা হয়েছে। আর যারা এখনো সময়মতো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন না তাদের প্রতি মুসলিম ভাই হিসেবে অনুরোধ রইল, আসুন দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সঠিকভাবে আদায় করে রব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি হাসিল করি। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে প্রকৃত ইমানদার হওয়ার তাওফিক দান করুন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির খতিব ও টিভি উপস্থাপক।

সর্বশেষ খবর